যখন পিছন ফিরে তাকানো জরুরী
ফকির ইলিয়াস
চলমান সময়ে বাংলাদেশ কি বিশ্বের কাছে নতুন মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে? জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ড. ফখর"দ্দীন আহমদ। তিনি তার ভাষণে তেমনটিই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, সামরিক এবং বেসামরিক যৌথ ঐক্যের সহযোগিতায় বাংলাদেশে আজ নতুন ধারা সূচিত হয়েছে। দুর্নীতি দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারের বিভিন্ন রিফর্ম কর্মসূচিও তুলে ধরেছেন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কেও বলেছেন তিনি। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে তার এই ব্রিফিং নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। যেহেতু ২০০৮ সালটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভাগ্যের জন্য একটি গুর"ত্বপূর্ণ বছর, তাই সেদিকে নজর রেখেই এগুতে হচ্ছে। দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক একটি সনদ পেয়েছে।
আর তা হচ্ছে টিআই রিপোর্টে বাংলাদেশের স্থান সপ্তম স্থানে চলে যাওয়া। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকরা যদিও বলছেন, তা মন্দের ভালো, তবুও এটাকে একটি বড়ো সাফল্য হিসেবে না দেখে উপায় নেই। দুর্নীতিতে পর পর কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এটা ওয়ান ইলেভেনের আশীর্বাদই বলতে হবে। তা নাহলে এই দেশটিই পুরো ‘রামরাজ্যে’ পরিণত হতো। দেশের মানুষের শুধুমাত্র হাহুতাশ ছাড়া অন্য কিছু করার থাকতো না।
পটপরিবর্তন এবং বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন মেরুকরণের এই মাঠে আমাদের যতোটা আশাবাদী হওয়ার কথা ছিল, তা কি হতে পারছি? এই প্রশ্নটি আসছে বিভিন্নভাবে। দুর্নীতি দমন কমিশন সবশেষে আরো আশিজন দুর্নীতিবাজের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় যাদের নাম আছে, নিশ্চয়ই তাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করার মতো শক্তি এবং উপায় দুদকের আছে। নিয়মানুযায়ী তাদেরকে সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার কথা বলা হবে। তা মিলিয়ে দেখা হবে।
যদি কোনো গাফিলতি পাওয়া যায় তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিš' সেই শেষ তালিকাটি অনেক মানুষকেই আশাহত করেছে। বিগত জোট সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় চরম দুর্নীতিবাজ বলে দেশে-বিদেশে কুখ্যাতি পেয়েছিল, এদের বেশ কটিই বাদ পড়েছে। এরপ্রকৃত কারণ কী? সে রহস্য নানাভাবেই উত্থাপিত হচ্ছে মানুষের মনে। দেখা যাচ্ছে, সংস্কারবাদী বলে কথিত কিছু নেতারও পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সর্বশেষ তালিকা প্রকাশের পর দেশের আরো দুর্নীতিবাজ শীর্ষস্থানীয়রা মুচকি হাসতে শুর" করেছেন। তাদের ধারণা তারা পার পেয়ে গেছেন। যদি প্রকৃতপক্ষে তাই সত্য হয় তবে তা হবে গোটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কারণ শীর্ষ বেশ কিছু দুর্নীতিবাজকে বাইরে রেখে নাইন-ইলেভেনের চেতনা সমুন্নত এবং এর লক্ষ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।
আমরা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বেশ কিছু নতুন দল, জোট কিংবা মোর্চার আবির্ভাব লক্ষ করছি।
বিদেশেও বেশ কিছু সুবিধাবাদী, যারা এক সময় বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ করতেন তারা এখন নতুন করে বিভিন্ন ব্যানারে নিজেদেরকে সজ্জিত করার চেষ্টা করছেন। তাদের অতীত ইতিহাস কী, ভবিষ্যতে তারা কী করতে পারেন, সবকিছুই দেশ-বিদেশের মানুষের নখদর্পণে রয়েছে। আসল কথা হচ্ছে, এরা যে কোনো পরিস্থিতিতে মধ্যস্বত্ব ভোগ করতে সব সময়ই তৎপর থাকে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও জনগণকে এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের বরেণ্য আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের একটি বক্তব্য শুনে আমার হাসি পেয়েছে বৈকি! তিনি বলেছেন, তিনি তার গণফোরামের নেতাকর্মী নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে যাবেন।
দল গঠনের পর আজ এতো দিন পর্যন্ত তিনি এ কাজটি করেননি কেন? এখন ঘরে ঘরে যাবেন ভালো কথা। কাজটি আরো অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তাহলে রাষ্ট্র এবং জনগণ অন্তত রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তিটি ক্রমশ সঞ্চয় করতে পারতো। জনগণ তীব্র সচেতন হলে আজকের এই চরম দুর্নীতিবাজরাও হয়তো এতো বেশি পেশি এবং দাঁত দেখাবার সাহস পেতো না।
বেগম জিয়ার মামলার সাক্ষ্য বর্ণনা দেওয়ার জন্য আটজন মন্ত্রীকে ডাকা হয়েছিল।
তারা তাদের বক্তব্যও দিয়েছেন। দুদক বলছে, মন্ত্রীরা বেশ সহায়তামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আটজন মন্ত্রীর মধ্যে যারা জেলে আছেন তারা ইতিমধ্যে আসামি হয়েছেন। আর যারা এ পর্যন্ত বাইরে আছেন, তারা কি তবে সাক্ষ্য দিয়েই নিজেদের গা বাঁচিয়ে ফেলবেন? বেগম জিয়াকে ডুবাতে তার অন্যতম মন্ত্রীদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। যদি তারা সে সময় সত্যের পক্ষে দাঁড়াতেন, তবে তারা প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করতে পারতেন।
আর তাহলে আজকের বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো। কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আজ বড়ো বড়ো কথা বলছেন। কিন্তু সেদিন তিনি মন্ত্রিত্ব পেলে তার অবস্থা কেমন হতো তা অদেখাই থেকে গেছে। আজ তিনি যাদেরকে দোষ দিতে চাচ্ছেন, কেবিনেটে এরা তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মারপ্যাঁচে হেরে গিয়েছিলেন কর্নেল অলি।
আজ তিনি আবার বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির ছায়াতলে যদি যেতে চান তবেই কি তা ভুলের মাশুল হিসেবে শোধ হয়ে যাবে?
আমার খুব কর"ণা হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের জন্য। হুইল চেয়ারে বসে তিনি দুদকে গিয়েছিলেন। তিনি দাম্ভিক উচ্চারণে বলতেন তার কোনো দুর্গন্ধ নেই। অথচ তারই কোটের পকেট থেকে আরিফুল-নাসের-শফিউরের মতো লুটেরা শক্তি বেড়ে উঠেছিল অবলীলায়। দুর্নীতির গডফাদার হিসেবে আজ কি তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না? নাকি তিনিও পার পেয়ে যাবেন?
বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন, দুর্নীতিবাজদেরকে গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা দরকার।
রাঘাব-বোয়াল এখনো অনেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। রাজনীতিতে কখনো কখনো পিছনে ফিরে তাকানো খুব জরুরি হয়ে পড়ে। জোট সরকারের পাঁচ বছরের লুটপাটের খতিয়ান ছিল নগ্ন পুকুরচুরি। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা কারলেই জাতি উপকৃত হবে।
সর্বশেষ- ইসি সাইফুর- হাফিজের বিএনপি কে চিঠি দিয়েছে।
এর আগে জিল্লুর - সৈয়দ আশরাফের নেতৃত্বে ইসির সাথে দেখা
করেছে আওয়ামী লীগ। তাহলে কি শুধু বিএনপি'র ভাঙন ই
নিশ্চিত ? নাকি এর পর আরো কিছু আছে ???????
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।