বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে
দীর্ঘ সময় ধরে চলা সিভিল ওয়ার বার্মাকে পৃথিবীর সন্দেহপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে আলাদা করে রেখেছে। গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার সময় থেকেই এবং এখনো এটি চলছে। এই দেশেই চলছে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সেনাশাসন। উত্তর কোরিয়াকে হিসেবের বাইরে রাখলেন মিয়ানমারই বোধহয় দুটি ক্যাটেগরির শীর্ষে। এটি সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দেশ এবং বিদেশিদের ব্যাপারে ভীষণ রক্ষণশীল।
সবচেয়ে ভুল বোঝাবুঝির জন্য দেশটি রীতিমতো পুরস্কার জিততে পারে।
ভৌগোলিকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের, রাজনৈতিকভাবে পশ্চামুখী ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বার্মাকে বর্তমানে মিয়ানমার নামে অভিহিত করা হয়। এ গ্রহের সবচেয়ে বেশি আর্মির সংখ্যা এবং তাদের বেপরোয়া কর্মকা- দেশটির জন্য বোঝা। দি রিভার অফ লস্ট ফুট স্টেপস-এ থান্ট মিয়ান্ট উ এই ছোট্ট উপলব্ধিটাকেই তুলে ধরেছেন। বইটি বর্তমান ক্রমবর্ধমান সমস্যার একটি উপক্রমণিকা।
দেশটির রোমাঞ্চকর ইতিহাস প্রায় ভুলতে বসেছে লোকজন। বইয়ে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থান থেকে থান্ট বার্মাকে দেখেছেন। তার নানা উ থান্ট ১৯৬০-এর দশকে জাতিসংঘে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৮ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর তিনিই বার্মিজ জাতীয়তাবাদীদের প্রথম প্রজন্ম হিসেবে তিনি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতিকথা, কিছু বাদানুবাদ এবং একটি ক্ষুদ্র ভ্রমণকাহিনী নিয়ে দি রিভার অফ লস্ট ফুট স্টেপস লেখা হয়েছে। শুরুতেই সব সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮৮৫ সালের রয়াল সাম্রাজ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং বৃটিশ শাসনের সময় মিয়ানমারে শোষণ সব কিছুই আছে বইটিতে। বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে মিয়ানমারে কখনোই সাম্রাজ্যের স্বপ্নকে নিঃশেষ করে দেয়ার প্রধান কুশীলব ছিল না। এটি ছিল একটি সাইড শোর মতো, একটি অনুচিন্তা এবং ভৌগোলিক কারণে নিয়তি নির্ধারিত ইনডিয়া অথবা চায়নার পাদটীকাস্বরূপ।
মিয়ানমার দুরাবস্থাকে বলা যায় বর্তমান সময়ের একটি নিম। এর অদ্ভুত ইমেজ ও একটি স্বপ্নালু বিরাণ ভূমি রয়েছে। সে সঙ্গে এটি একটি সাধারণ বৌদ্ধ দেশ। কিছুটা সুসময় হারানো এবং কিছুটা বিচ্ছিন্ন। বৈদেশিক নীতির সঙ্কটের ক্ষেত্রে অদ্ভুত অবস্থান দেশটির’ - এমনটাই লিখেছেন মি. থান্ট।
তিনি ১৯৮৮ সালে ডেমক্রেসি মুভমেন্টের প্রতি আন্তর্জাতিক সাড়াকে তুলে ধরেছেন বইয়ে। কিন্তু উদ্ধৃত কারণটি গত কয়েক শতাব্দীর যে কোনো সময়ের বার্মিজ ইভেন্টের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।
নিশ্চিতভাবে বার্মিজরা সব সময়ই বিষয়গুলোকে ভিন্নভাবে দেখে। থান্ট বৃটিশ শাসনের পরবর্তী পর্যায়ের দৃষ্টিতে আলোচনা করে কেবল তাদের ইতিহাসটিই বলেছেন। হয়তো এ আশায় যে, এটি বার্মার বর্তমান দুর্দশাকে তুলে ধরবে।
থান্ট ক্যামবৃজে ঊনিশ শতাব্দীর মিয়ানমারের ইতিহাস বিষয়ে ডক্টরাল গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই পেছনের গল্পগুলো ভালোভাবে বলেননি।
তার এই উপাখ্যানটি এলোমেলো এবং অনেক সময় একে অনুসরণ করা প্রায় কঠিন হয়ে পড়ে। এটি কর্তব্যপরায়ণতাকে অনুভব করতে বলছে এবং কখনোই সত্যিকার অর্থে বৃটিশদের পুনঃপ্রবেশের গতিবিধি নিয়ে কথা বলেনি। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বের হয়ে এসেছে।
বার্মিজরা এক সময় বর্তমান সময়ের লাওস এবং থাইল্যান্ড জয় করে নিয়েছিল। সেটি ছিল ষোল শতাব্দীতে। তারা নিজেদের গ্রেট শাসক জাতি মনে করে এবং মিলিটারি এ জাতির গর্বের সূত্র।
লেখক : থান্ট মিয়ান্ট উ
প্রকাশক : ফারার, স্ট্রস অ্যান্ড গিরোক্স
(চলবে)
অনুবাদ : একরামুল হক শামীম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।