নতুন মোবাইল নেবার সাথে সাথেই স্মৃতি হাতড়িয়ে যে ক’জন বন্ধু-বান্ধবের নাম্বার মনে হল, একে একে প্রত্যেককে কল দিলাম।
দোস্ত্! নতুন মোবাইল নিছি। ০১৭৬......। নাম্বারটা সেভ করে নিস। রাখি।
তখন ২০০৩। প্রায় সাত টাকা মিনিট। টাকা বাঁচাতে তাই রাত আটটার পর দোকান থেকে কল করাটাকেই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু এভাবে কৃচ্ছ্য সাধন করতে গিয়ে কম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি। নিজের নামটাই বলতে ভুলে গিয়েছিলাম বেশ ক’ জায়গায়।
বাধ্য হয়ে পরিচয় পর্বটা দ্বিতীয় দফায় সারতে হয়েছিল।
মনটা খুব খারাপ। আগামী সাতদিন আর কাউকে কল দিবো না বলে স্থির করলাম। বাসায় এসে বসলাম ম্যানুয়ালটা সামনে নিয়ে। সিমেন্স এম৫৫।
আমার প্রথম সেলফোন। কম দামের কালার ডিসপ্লে। সাধ্যের মধ্যে সবটুকু।
মন্দ না। আপন মনে বিড়বিড় করে আউড়ালাম --- এই একটি নাম্বারই হবে আমার পরিচয়।
কিন্তু আসল ফাংশনটাই যে টেস্ট করে দেখা হলো না। একদিকে টাকা, অন্যদিকে ফাংশন। সব মিলিয়ে মনে হলো মিসকল দেয়া ভালোভাবে রপ্ত করাটাই ভালো। ঠোঁটের কোণে মুচকে প্লাস মুচকি হাসি খেলে গেল। লেডিস ফার্স্ট।
চুমকির নাম্বারে ডায়াল করলাম। কানের সাথে শক্ত করে ধরে আছি; যাতে মিসকলকে কল বানিয়ে নেবার কোন সুযোগই প্রতিপক্ষ না পায়। ভালো করে রিং হবার আগেই হুট করে কেটে দিলাম।
হ্যালো?
অপরপক্ষের কথা শেষ হবার আগেই উল্টো ঝাড়ি। এত মিসকল দেন কেন?
ও প্রান্তের বিস্মিত সুর, আমি না আপনি!
আবার কাউন্টার এ্যাটাক, মিসকল দিলে ব্যাক করতে হয় এটাও জানেন না? কল দেবার সামর্থ্য না থাকলে নিদেন পক্ষে একটা মিসকল তো দেয়া যেত।
ফর্মালিটিজ বলে একটা কথা আছে না!
সেলটা রাখতে না রাখতেই ওই নাম্বার থেকে এবার কল এলো। উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে না পেরে গদগদ কন্ঠে বললাম, হ্যালো! চুমকি?
এরপর যা ঘটল তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
ও প্রান্তের শুকনো গলা, আমি চুমকির বড় বোন, শাহনাজ। আপনি কে?
আপু! না মানে ... আমি ওর ফ্রেন্ড... না মানে ... ওকে কি একটু দেয়া যাবে?
না! ও দেশের বাড়ি। কোন মেসেজ?
না! থাক্, থাক্।
স্লামালেকুম, আপু। আপু, খোদা হাফেজ। আ....পু...পু..পু.......
কুট।
এরপর বছর তিন চারেক কেটে গেছে। মিসকল কালচারও কলরেট হ্রাসের বদৌলতে ভুলতে বসেছি।
কাছের মানুষগুলোও কে কোথায় দূরে দূরে সরে গেছে।
এক অলস বিষন্ন রাতে স্মৃতি কাতর হয়ে কন্ট্যাক্ট লিস্টে চোখ বুলাতে বুলাতে স্মৃতিগুলোকে ঝালিয়ে নেবার অস্থিরতা পেয়ে বসল। বেশ কিছু নাম্বারের সাথে বাড়তি ১ জুড়ে তিন বছরের সম্পর্কের ব্যবধানকে কমিয়ে আনার ব্যর্থ প্রয়াস দেখালাম। এক নাগাড়ে বেশ কিছু নাম্বারে ট্রাই করলাম। মিসকল দিয়ে দেখছি নাম্বারগুলো এ্যাক্টিভ কিনা।
টুঁটুঁ..টুঁটুঁ। 1 message received.
এত লম্বা মিসকল কেন?
আড়মোড়া ভেঙ্গে ঝটপট লিখলাম,
যদি বলি কল ছিল,
চোখের কোণে জল ছিল,
কথা বলার ছল ছিল,
সব কি মনের ভুল ছিল?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।