এসো বেপরোয়া সময়ের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে নির্বাসনে পাঠাই , এসো কষ্টবারুদে বারুদ ঘষে ভালবাসার আগুন জ্বালাই
আমি যে আলীর গল্প আপনাদের আজ শোনাবো সে আলী ২৮ বছরের তরতাজা যুবক আজকের আলী নয়। আমি শোনাবো ১০ বছরের ছোট্ট আলীর গল্প। মায়ের আদরের দূরন্ত, ডানপিটে আলী। সমবয়সী সাঙ্গ-পাঙ্গদের মাঝে যার অসীম দূরন্তপনা ছিল সমীহযোগ্য। পাড়ার ছোট্ট খোয়া ওঠা রাস্তা- মাঝে মাঝে যার কোল বেয়ে টুংটাং করে চলে যায় রিক্সা- তাকে কি আর পড়োয়া করে দুষ্ট ছেলের দল? বেবিট্যাক্সি? সেতো আরো বিরল।
শহরের ভিতর কেমন যেন গ্রামের একটা ছোঁয়া। ছুটির দিনে দামাল ছেলের দল হল্লা করে পাড়া মাথায় তুলবেনা, তা কি মেনে নেয়া যায়? অসম্ভব। আর এ মিশনে বরাবরের মত দলপতি আমাদের আলী (সেই আলী- আজকের ২৮ বছরের আলী- যার কাছ থেকে এ কাহিনী শোনা)।
সাত-সকালে জরুরীভিত্তিতে মাকে কোথায় যেন নেওয়া হলো। সুতরাং বকুনি দেবার আর কেউ রইলনা।
ছুটির দিনের বোনাস পাওনা। ব্যস্, দুষ্টোমিটা প্রানভরে করে নেয়ার এইতো সুযোগ। কেন যে ওপরওয়ালা এমন সুযোগ প্রতিদিন দেয়না! কিন্তু তাই বলে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো এখনো মা আসবেনা কেন? আচ্ছা যাক, আসেনি এসে পড়বে। মা তো; না এসে কোথায় যাবে!
আরে আরে কি কান্ড! আমাদের ছোট্ট পাড়ায় এত বিশাল একটা ট্রাক কি মনে করে অমন শম্ভুক গতিতে ঢুকে পড়ছে? চল চল যাই ওটাকে বরণ করে নিয়ে আসি। হই হই করে ছুটে গেল দুষ্টোর ঝাঁক।
আজ দারুন মজা হবে। গেল বটে, কিন্তু স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্ড দেখা ছাড়া আর কি কিছু করার যো আছে? ট্রাক ভর্তি তো সব পাড়ার চাচারা। ধ্যত্, আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। আলীর জন্যও কি? উঁহু, এতো সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র আলী নয়। আজ চরম আনন্দ করার দিন।
সুতরাং রিস্ক নিতেই হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। ঝুলে পড়ল ট্রাকের পিছনের অনত্যুচ্চ অংশটি ধরে। বাহ্, বাদুর ঝোলা হয়ে যেতে তো দারুন মজা! এভাবে কিছু দূর যাবার পড়ে "এবার ক্ষান্ত দেয়া যায়" ভেবে আলী হাত ছাড়িয়ে নিল ট্রাক থেকে। ধপাস্।
নাহ্, ব্যথা লাগেনি। অমন দু-চার আছাড়ে কি আর ব্যাথা মালুম হ্য়? প্যান্টের ধূলো ঝেরে দাড়িয়ে পিছন ফিরে বীরত্বমাখা হাসি হাসল আলী। সঙ্গীরা সব সমীহের দৃ্ষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। আবার ছুটে গিয়ে ওদের দলে ভিড়তে না ভিড়তে আলী অবাক হয়ে লক্ষ্য করল ট্রাকটি ওদের বাড়ির উঠোনের দিকে যাচ্ছে। ভারি মজা তো! দে ছুট।
মিশন এবার নিজের বাড়ি।
তারপরের গল্প? ছোট্ট আলীর সব আনন্দকে এক ঝটকায় নিমেষেই কোথায় কোন যোজন দূরে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে তার মায়ের লাশ নামানো হলো ট্রাক থেকে। সেই মা, সেই আদরিনী মা- সর্বসহা মা। আর কোনদিন বকুনি দিতে আসবে না। শুধু ঐ দূরের তারার দেশ থেকে চেয়ে চেয়ে দেখবে।
আলীর ছোট্ট হৃদপিন্ডে কেমন যেন একটা তোলপাড় হতে লাগলো। বুকের নিভৃত কোন এক কোনে কিসের যেন একটা খোঁচা- চিনচিনে তার ব্যাথা। ডুকরে ওঠা কান্নার দল বাঁধ মানতে চাইছে না কিছুতে। "হায় বিধাতা, এমন সত্যি সত্যি তো চাইনি মায়ের বকুনিহীন সারাজীবন। তবে কেন তা কবুল করে নিলে? বকুক মা, কান মলে দিক, পিটিয়ে সারা গায়ে দগদগে ক্ষত করে দিক।
তবুও মাকে তুমি ফিরিয়ে দাও"- কে যেন বিরামহীন বলে যাচ্ছে আলীর ভিতরে।
প্রিয় বন্ধুরা, আসুন আমরা এমন অসংখ্য আলীর জন্য প্রার্থনা করি। আর যেন কাউকে মাতৃহারা হতভাগা হতে না হয়। পৃথিবীর সকল মায়েরা দীর্ঘজীবি হোন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।