আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মীর জাফরের প্রতিকৃতি দেখলাম নিজের চোখে!

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।

কিস্তি ৭৮ : ট্যুরিস্ট সোসাইটির নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমার কিছু পরিকল্পনা ছিল। ভালো লিডারশিপ তৈরীর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেই। যদিও অনেকেই আমার সাথে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

সাধারণত আমি একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করতাম-কোন ছেলে বা মেয়েটা ভালো নেতৃত্ব দিতে পারবে। সে জন্য আমাদের কমিটি প্রথম বারের মত প্রতিটি ট্যুরের জন্য এমনকি প্রতিটি ইভেন্টের জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করে দিতো। দেখা গেছে এমন কমিটি করা হলো যেখানে ট্যুরিস্ট সোসাইটির নির্বাহি কমিটিকে তাদের বেঁধে দেয়া নিয়মেই চলতে হয়। এ প্রাকটিসটা আমার পূর্ণ মেয়াদে বাস্তবায়ন করেছি। ট্যুর কমিটি হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকতো উপদেষ্টা।

অন্য কেউ আহবায়ক হতো। এভাবে আমি পরবর্তী নেতৃত্বের জন্য কিছু মুখকে বাছাই করলাম। আমার আগে ট্যুরিস্ট সোসাইটির নীতি নির্ধারণী পদে কোনো ছাত্রী আসতে পারেনি, অন্যভাবে বললে আনা হয়নি। আমিই প্রথম আমার বন্ধু ও সে সময়কার সেক্রেটারি বাবুর কাছে প্রস্তাব করি যে ডাটস ছেড়ে যাওয়ার সময় সেক্রেটারি হিসাবে কিশওয়ার জাহান মৌ কে দায়িত্বটা দিতে চাই। মৌ ও তার বন্ধুরা মিলে আমরা এক সাথে অনেক ট্যুর করেছি।

ওর নেতৃত্বের ক্যাপাসিটি ভালো ছিল। বাবুর সহজ কথা- ও কি পারবে! আমি বললাম, তুই যদি পারিস, আমি যদি পারি, তাহলে মৌ পারবে না কেন। মৌকে নানা কারণে আমি পছন্দ করতাম। সবচেয়ে বড় কারণ হলো মেয়েটা বাধাহীন। যে কোনো ট্যুরে ওকে পাওয়া যেতো।

অবশ্য পরেই মৌ ডাটসের প্রথম সেক্রেটারি এবং আলিফ লায়লা প্রথম মেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিল। আমি যখন ডাটস ছেড়ে আসি সে সময় মৌ কে সেক্রেটারি করার ইচ্ছে আমার ছিল না। এর সবচেয়ে বড় কারণ ততদিনে ডাটসে তারচেয়ে বেশি শ্রম দেয়া অনেকেই সামনে চলে এসছিল। মৌ এর সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়, সেটি কেন হয়েছে। আমি জানি না।

আমি কেবল জানি মৌ, রিমিরা আমাকে অপছন্দ করতে শুরু করে। আগে পছন্দ করতো বলে ধরে নিয়ে এ কথা বলছি। এ লেখাটা যদি মৌ পড়ে থাকে, সে যদি ইনবক্সে আমাকে এর কারণটা জানায় তাহলে খুবই খুশী হবো। তাছাড়া আমার দায়িত্ব পালনের শেষ দিকে প্রায় ৬ মাসেরো বেশি সময় ধরে কোনো অনুষ্ঠান, মিটিং, সিটিং কিম্বা ট্যুরে আমি তাদের পাইনি। ডাটসের রুল অনুযায়ী তাদের সদস্য পদই থাকার কথা নয়।

কিন্তু আমি এতটা কঠোর হবো, এটা হতে পারে না। হয়নি। আমি তাদের কার্যনির্বাহি কমিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলাম। কারণ একটাই আমার পছন্দ অপছন্দটার চেয়ে ডাটস কার থেকে বেশি উপকার পাবে সেটি ডাটসই নির্ধারণ করে নিক। আমি যখন ডাটস ছেড়ে দেবো এবং কমিটি করবো, সেন জন্য আমার একটা পরিকল্পনা ছিল।

সারা বছর আমার আস্তিনের নিচে ঘাপটি মেরে থাকা বন্ধুবেশি মীর জাফররা আসল চেহারা দেখাতে থাকলো। বাবু তার স্বরূপে ফিরে গেলো। এভাবে আমি আচমকা একটা ভিন্ন জগতে এসে পড়লাম। ২০০৬ সালের মাঝামাঝিতে যখন ডাটস ছাড়বো, সে সময় বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমরা আরেক বছর থকাবো কিনা। সরাসরি আমি মানা করলাম।

বললাম, আমরাই তো ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর ডাটসের নেতৃত্বের বিরোধীতা করেছিলাম। সেই একই আমরা থাকবো কেন? এটা কোনো ভাবেই আমি সমর্থন করি না। তাহল পরবর্তী কমিটি কেমন হবে আমরা আমাদের কতৃত্ব কীভাবে স্থায়ী করতে পারি এ সব নিয়ে বাবু কিছু প্রসঙ্গ তুলল। আমি বললাম, আসলে একটা মায়ায় জমে গেছে। কিন্তু কোনো ফরমেটেই আমরা আর থাকব না।

বাবু একমত হলো। তবে সামনের দিনগুলোতে ডাটস কি ভাবে চলবে তা নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ দিককার দৃশ্যপটটা বড়ই করুণ। আমি সিরাজউদ দৌলার মত একা হতে থাকলাম। সবাই বিপরীত দিকে অবস্থান নিচ্ছে।

এতে আমি আসলেই ভেঙ্গে পড়ি। কারণ ডাটস আমার পরিবারের মত। আমি আমার এখানে আমার শ্রম, মেধা ও অনেক অর্থ ব্যয় করেছি। এখনো করতে চাই। কিন্তু নানা কারণে সেটি হয় না।

সবচেয়ে বড় কারণ ডাটস আমাকে অপাঙতেয় মনে করে। ডাটস এখন হেলাল ভাইয়ের পকেটে। আমি যদি এখানে ফিরতে চাই তাহলে হেলাল ভাইকে বলতে হবে, ভাই প্লিজ হেল্প মি। বাট আমি সেটি করতে চাই না। যত কষ্টই হোক না।

আমি সেটি মেনে নিয়ে থাকতে চাই, একেবারে নিজের মত। তবে শত্রু মিত্র নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করবেন- ডাটসে আমি সর্বোচ্চ পরিবর্তন এনেছি। যা আর কেউ করতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ। এটা আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, ডাটসের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বাড়ানো,পুরনো দুর্নাম ঘুচানো, মিডিয়ায় এর অবস্থান এবং ডাটসের সদস্যদের আলাদা একটা সম্মানসহ বিভিন্ন দিকে আমি নজর দিয়ে সফল হয়েছি। তবে দায়িত্ব ছাড়ার সময়কার করুণ পরিণতিটা ছিল খবই ভয়াবহ এবং কুৎসিৎ।

সে গল্প করতে ইচ্ছে করছে না। সভাপতি হিসাবে আমি বাপ্পীকে পছন্দ করে রেখেছিলাম। কিন্তু শেষের দিকে এসে বরিশালের এই ছেলেটা ডাটসে আসাটা বন্ধ করে দেয়। হেলাল ভাইয়ের এজন্ডা নিয়ে কাজ করে বলে আমাকে ানেকেই জানায়। বাপ্পীর আরো বেশি অ্যাকটিভ হওয়ার কথা ছিল শেষের দিকে , কিন্তু সেখানে সে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে, এটা আমার খুবই খারাপ লাগলো।

তাছাড়া তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে কিছু অভিযোগ আমার কাছে তোলা হয়। সে ক্ষেত্রে আমি সামিউল হক সামিমকে সভাপতি হিসাবে পছন্দ করি। সাধারণত গুটিবাজ লোক হিসাবে নোয়াখালী ও বরিশালের লোকের কথা সবাই বলে থাকেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গের লোক যে কি গুটি বাজ সেটা বুঝতে হলে আরেকবার জন্মাতে হবে! সামীম আমার হয়ে ভাব ধরে আর আমার বিপরীত দলের হয়ে কাজ করে। সব তথ্য নেয় এবং আমার ভাবনাগুলো ওদের সাথে শেয়ার করে।

তার সাথে জোটে আমনত নামে আরেকটা ছেলে। মীর জাফরের গল্প কেবল শুনেছি। আর নিজের চোখে দেখা সে হলো তার প্রতিকৃতি। হেন কোনো সুবিধা নেই যা সামীম ও আমানত পায়নি। তবুও।

শেষ পর্যন্ত কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সবাইকে নিয়ে কমিটি করার কথা ছিল। শেষ মুহুর্তে এসে তালগোল পাকিয়ে গেলো। বাবু তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলো আমার লোক দিয়ে। আমার লোক মানে যাদের আমি হাতে ধরে তৈরি করেছি।

যাদের সব চিনিয়ে দিয়েছি। তাদের দিয়ে। আমি প্রচণ্ড শকড হলাম। অনেকটা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ২০০৬ সালের পুরো সময়টা আমার খুব খারাপ গেছে।

আমি কতটা বদলে গেছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। নতুন নেতৃত্বে আসল সামীস ও মৌ। আমার তাতেও আপত্তি ছিল না। তাদের অভিনন্দন জানিয়ে আমার বিদায় বক্তব্য নিশ্চয় তাদের সবারই মনে থাকার কথা। এবং নির্বাচনের আগে সবার নেতৃত্বের গুণাবলী নিয়ে আমার বিশ্লেষণ কেউ ভুলবে বলে মনে হয় না।

কিন্তু আমার একান্ত অনুজরা সামীমের এ ধরণের আচরণ সইতে পারেনি। ওরা আমাকে বলল, যে আপনার সাথে এমন করেছে। সে তো আমাদের সাথে আরো খারাপ কিছু করবে। তাই আমরা এই কমিটিতে থাকবো না। এ ঘোষণা সবচেয়ে বেশি জোরালো ছিল মীর মামুনের পক্ষ থেকে।

সাদিয়াও একই রকম ছিল। লিপি ও মিটির অবস্থান প্রায় একই রকম। তারপর আমার বন্ধুরা আমাকে নানা রকমের পরামর্শ দিলেন। এ নিয়ে একটা সঙ্কট তৈরি হলো। চূড়ান্ত বিজয় বাবুর।

আমার ক্যাম্পাসের বন্ধুরা বলেছিন পিটিয়ে সবাইকে সোজা করবে। কিন্তু আমি এতে সাঁয় দিলাম না। কাকে পিটাবো? ভাবছিলাম আর মন খারাপ করা সময়টা পার করছিলাম। সে সময় ছাত্রলীগের সবচেয়ে ডানপিটে পোলাগুলো আমাকে বলেছি, ভাই শুধু একবার বলেন। কোপায় ফালামু।

ছাত্রদলের ছেলেরা তো এগিয়ে ছিল। কিন্তু এতে আমার সম্মতি তারা পায়নি। তারপরেও টিএসসি কাফেতে একদিন খেতে গিয়ে শুনি মৌ নাকি সেখানে বলেছে, সামীমকে কারা যেন পিটিয়েছে। সেটি আমার কারণে। অথচ কসম করে বলছি, এর সাথে আমার কোনো রকমের সংযোগ ছিল না।

ওরা আমার ওপর আস্থা রাখেনি বলে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিব, এমন ছেলে আমি কখনোই ছিলাম না, এখনো নই। তালগোল নিয়ে একটা পর্ব পরে কখনো লিখবো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।