জেগেও যে ঘুমের ভান করে তাকে জাগানো যায় না।
প্রতিটি হত্যা ও মৃত্যুই বেদনার। এই মানুষটি কারো ভাই, কারো বোন, বাবা বা মা, কারো সন্তান। একজন জামায়াতি বা শিবিরকর্মী বা রাজাকার-আলবদর কিম্বা তাদের দোসর নিহত হলে-মারা গেলে তাদের রাজনৈতিক সহমর্মীরা যেমন কষ্ট পান, ক্ষুব্ধ হন; তেমনি একজন মুক্তিযোদ্ধা বা আওয়ামী লীগ-১৪ দল বা তাদের পক্ষের কেউ নিহত হলে তারাও যন্ত্রণায় দগ্ধ হন।
কিন্তু গত বছর ২৮ অক্টোবরের হত্যাকান্ড নিয়ে জামায়াতিদের রাজনৈতিক প্রচার আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই প্রবাদ বাক্য- ঠাকুর ঘরে কে রে.......।
তাদের প্রচারে মনে হবে জামায়াতিরা বাংলাদেশে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয়। আর আওয়ামী লীগাররা সব নষ্টের গোড়া! ক্যাসেট-সিডির বন্যা ভাসিয়ে, বাংলা-ইংরেজিতে নানা আবেদন-নিবেদন করে দেশে-বিদেশে তারা নিজেদের সম্পর্কে এমনই একটা ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিন্দনীয় ঘটনা ছিল। কিন্তু জামায়াতি আর তাদের দোসররা এ নিয়ে যে রাজনীতি করে যাচ্ছে, একে ব্যবহার করে নিজেদের সাধু বানানোর অপচেষ্টা করছে তা এদেশের মানুষ কখনো বিশ্বাস করে না। রগ কাটার সন্ত্রাস এদেশে কারা আমদানি করেছে? কারা চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন হত্যা-সন্ত্রাস চালাচ্ছে? '৭৫ পরবর্তী সময়ে জামায়াতি খুনিবাহিনীর হাতে নিহতদের তালিকা করলে তা সবাইকে স্তম্ভিত করবে।
আর '৭১-এ গণহত্যা-ধর্ষন, লুটতরাজে পাকবাহিনীর সহযোগী জামায়াতি আলবদর-রাজাকারদের ভূমিকা এদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না। তাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার আজো হয়নি। '৭১-এর ডিসেম্বর মাসে দেশের বরেণ্য অথচ বেসামরিক অসহায় শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করতে রাজাকার গোষ্ঠীর কারো এতটুকু হাত কাঁপেনি, আজোও অনুতাপ হয়নি। বরং তারা বড় গলায় বলে তারা যুদ্ধাপরাধী নয়! শুধু তাই নয়, তারা এখন প্রশ্ন তোলে মুক্তিযুদ্ধে আদৌ ৩০ লাখ মানুষ হত্যা হয়েছিল কিনা। যেন দুই-চার-পাঁচ-দল লাখ মানুষ কম মরে থাকলে তাদের পাপমোচন হয়! মুজাহিদদো তো এখন সেসব কথাই জোর গলায় বলছে।
আমাদের অপরাধ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আজো আমরা করতে পারিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী নাজিবাহিনীর সদস্যদের এখনো খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, অথচ আমরা চোখের সামনে গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের ঘুরে বেড়াতে দেখলেও কিছু বলছি না, করছি না। তাই তারা আজ মন্ত্রী হয়, বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে আমাদের নিহত-ধর্ষিত মা-বোনদের অপমান করে। আমরা সব সহ্য করি!
এখন সময় এসেছে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে চেতনাকে ধারণ করি তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। নিজেদের গলার স্বরকে আরো উঁচুতে তোলার।
যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের হিসাব-নিকাশ করার। প্রতিটি তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর। আসুন আমরা ঘুরে দাঁড়াই। রাজাকারদের রাজনৈতিক-আদর্শিকভাবে চিহ্নিত করি, পরাজিত করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।