আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ মৌসুম ফুরিয়ে যাওয়ার অনুভূতি: রমাদান

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

যে কোন কাজ আমাদের নিকট কেবল তখনি নিয়মিত বাস্তবায়িত হয়, প্রাত্যহিক রুটিনে স্থান পায়, কিংবা সঠিক ও সুন্দরভাবে সম্পাদিত হয়; যদি সে কাজে থাকে আমাদের প্রশিক্ষণ, চর্চা কিংবা অভ্যাস হিসেবে গড়ে তোলার সুদৃঢ় সংকল্প। আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর জন্য নির্ধারিত ইবাদাতসমূহে সে ব্যবস্থা রেখেছেন। ঈমান আনার পর যেমন প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাধ্যমে দৈনিক হিসেবে তাঁর গোলামীর ব্যাপারে হাজিরা দেয়ার অভ্যাস, বাৎসরিক হিসেবে সম্পদের যাকাত আদায়ের মাধ্যমে সম্পদকে পবিত্রকরণ ও হকদারদের জীবন যাত্রাকে সচল করার সাধনার অভ্যাস, বছরে একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তেমনি বেশ কিছু ভাল অভ্যাস অর্জন করে মুমিন; যার চর্চা হঠাৎ করে সম্মিলিত পর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেলে আন্তরিকভাবে যে শূন্যতা অনুভূত হয়, তা নিশ্চিতভাবে যেন এক পবিত্র প্রিয়হারা বেদনার মত। পবিত্র মাস রমাদান আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে আসে পূণ্যের রাশি রাশি ভাণ্ডার; যার বর্ণনা অসমাপ্য। বেঘোরে ঘুমোনোর সময় যখন সোবহে সাদিকের পূর্বক্ষণ, তখনি জেগে উঠে সেহরী খাওয়া; যার বরকত অনেক।

ফজরের পর থেকে সকল প্রকার পানাহার, বৈধ-অবৈধ(অবৈধ তো সর্বদাই হারাম) যৌনচার থেকে নিয়ে ছোট-বড় পাপকর্মের ব্যাপারে বিরত থাকার এমন পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বিত হয়; যা বছরের অন্যান্য মাসগুলোর থেকে নিঃসন্দেহে আলাদা ও প্রবল। কম-বেশী আয়োজনে আয়োজিত হয় ইফতারীর দস্তরখানা কিংবা টেবিল, তারপর সেকেণ্ডের হিসেব কষে কষে ঠিক সূর্য ডোবার সাথে সাথে অর্থাৎ, মাগরিবের আযান হলেই খাদ্য-পানীয় গ্রহণ; আহা! সে কি তৃপ্তক্ষণ, কি আনন্দের মুহূর্ত। এ আনন্দের কথা প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে গেছেন, এক হাদীসে কুদসীতে তিনি জানান: إِنَّ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَيْنِ إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ وَإِذَا لَقِيَ اللَّهَ فَرِحَ ((অবশ্যই সায়েম বা সিয়াম সাধনাকারীর জন্য দু'টো আনন্দ বা খুশী- যখন সে ইফতার করে আর যখন সে (জান্নাতে) তার পরম প্রিয় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে!)) [সহীহ্ মুসলিম: ১৯৪৬] তারপর মাগরিবের সালাতের প্রায় ঘন্টা পরেই শুরু হয় এশা ও তারাবীর সালাতের কাঙ্খিত সময়। প্রতিদিন ইমামের কণ্ঠে প্রাণ জুড়ানো কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের সাথে সাথে আদায় হয় কোথাও বার রাকা'আত কোথাও বিশ রাকা'আত তারাবীর সালাত। শেষ দশকে তো রাত্রির শেষ ভাগে মুমিনগণ দাঁড়িয়ে যায় কিয়ামুল্ লাইল বা তাহাজ্জুদের সালাতের মত প্রভুর কাছাকাছি পোঁছানোর উত্তম সাধনায়।

কেননা, রমাদানের এই শেষ দশকেই লুক্কায়িত রয়েছে সেই মহিমান্বিত রজনী, যার তুলনা "হাজার মাসের চেয়েও উত্তম" [সূরা আল-কদর]। এই যে সময় বাঁধা নির্ধারিত ট্রেনিং, যার শুরুটায় কিছু কষ্ট, কিছু স্বস্তিহীনতার প্রতিক্রিয়া ঘটলেও ক্রিয়ার নিয়মতান্ত্রিকতায় তা অল্প ক'দিনেই প্রিয় অভ্যাসে পরিণত হয়ে পড়ে এবং শেষ দিকে তো রীতিমত পরম কাংখিত হয়ে উঠে। এরই মাঝে যদি হঠাৎ করেই পশ্চিমের লাল দেয়ালে অঙ্কিত হয় ঈদের বাঁকা চাঁদ; তখনি মুমিনের অন্তরে দোল খায় যেন দু'দিক থেকে ঈদের আনন্দ আর প্রিয়হারা কষ্টের বেদনারা। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দ কেবলমাত্র সিয়াম সাধনাকারীই উপলব্দি করতে পারেন। আর প্রতিদিনকার মত যখন এশার সালাতের পর ইমাম তিলাওয়াতে মুখরিত না হন, যখন নিরবতা বিরাজ করে মিনারগুলোয়; তখনকার শূন্যতাটা নিয়মিত তারাবীর সালাত আদায় কারীর জন্য কতটা কষ্টকর তা বলে বুঝানো যাবে না।

যেন মহা কিছু হারিয়ে হতাশ মনে ফিরে যাচ্ছেন মুসল্লী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণ পবিত্র রমাদান মাসের জন্য দীর্ঘ ছ'মাস ধরে দো'আ করতেন যেন রমাদান পর্যন্ত হায়াত লাভ করতে পারেন, যেন রমাদানের সমূহ কল্যাণ অর্জন করতে পারেন। তারপর রমাদান শেষে বাকী পাঁচ মাস অর্থাৎ, রমাদানসহ ছ'মাস দো'আ করতেন যেন রমাদানে কৃত সমূহ সৎকর্ম আল্লাহর দরবারে কবূল হয়; এভাবেই তারা এই পূণ্যময় মাসকে অভ্যর্থনা ও বিদায় জানাতেন। হাতের তালুতে অঙ্গার রাখার তুলনা যেখানে ঈমান; সে যুগেই যেন আমাদের বসবাস। আমাদের দৃষ্টীন্দ্রিয়, শ্রবণেন্দ্রিয়, আমাদের চিন্তাশক্তি; সবকিছুই এখন ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পঙ্কিলতায় আক্রান্ত প্রতিমুহূর্ত।

তাই ইচ্ছেগুলো আর সফলতা পায় না, ঈমানের শক্তিমত্তায় আমরা দুর্বল প্রমাণিত হই, আমরা পিছিয়ে পড়ি আল্লাহর পথে পথে, এমনকি জাগতিক অর্জনে অর্জনেও। তাই পূণ্যমাস আমাদেরকে ছুঁতে পারে না, ছুঁয়ে দেখলেও অন্তরে স্থান পায় না, অন্তরে স্থান পেলেও স্থায়ীত্ব পায় না! এমন দুর্দিনে দয়াময়ের এই বাণী ব্যতীত যে আর কোন সান্ত্বনা খুঁজে পাই না কোথাও: قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ. ((বলুন, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ---আল্লাহর অনুগ্রহ হতে কখনো নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ্ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’)) [সূরা আয্-যুমার: ৫৩] ২০.১০.২০০৭, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।