আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের আসল গর্ব

সাদা ময়লা রঙ্গীলা পালে

কাঁধে বড় ভাই তওফিকের রিজিওনাল কনটেস্টের সবুজ ব্যাগ ফেলে নটর ডেমের লম্বা করিডর ধরে পায়চারি করছিলাম। আইসিটি মেলা চলছে, চারদিকে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। আমার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় দলীয় বিভাগে আমার নাম দেয়া আছে, একঘণ্টামত পরেই তা শুরু হয়ে যাবে। আর আমি এদিকে অপেক্ষায় আছি প্রোগ্রামিং কনটেস্টের। প্রোগ্রামিংয়ের বেসিক কিছু ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই পারি না, তবুও তিনজনের দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে বিপুল আগ্রহ নিয়ে কনটেস্ট শুরুর অপেক্ষায় বসে আছি।

হঠাত করেই দেখি ঠিক আমারি মত একটি ব্যাগ নিয়ে আরেকজন পায়চারি করছেন, গায়ে বেগুনী (ট্রেডমার্ক) রঙের শার্ট। আলাপ করে জানতে পারলাম, ইনি শাহরিয়ার রউফ নাফি, দেশখ্যাত প্রোগ্রামার মুশফিকুর রউফের ছোট ভাই। প্রচণ্ড প্রতিভাবান এবং ব্যক্তিত্বে অসাধারণ এই মানুষটির সাথে সামান্য পরিচয়ে সেদিন মুগ্ধ হয়েছিলাম, জটিল প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের নিপুণ দক্ষতায় সেদিন আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন নাফি ভাইয়া। মাত্র ২০ মিনিট পরে ক্যুইজের জন্য বেরিয়ে আসতে বাধ্য হলেও সেদিনের কথা ভোলা অসম্ভব। তাঁর মত এরকম প্রতিভাবান তরুণেরা নিভৃতে নিয়তই আমাদের গর্বিত করে চলেছেন।

হয়ত একটা ছোট্ট ঘরে বসে কি-বোর্ডে খুঁট খুঁট করে কোডিং করে উপরে তুলে ধরছে আমাদের পতাকাকে। ফুটিয়ে তুলছে আমাদের তুখোড় প্রতিভাধরদের প্রকৃত চিত্র। বাংলাদেশের প্রোগ্রামিং জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের কথা জানতে চলে যেতে পারেন ভ্যালেদোলিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিং বিষয়ক ওয়েবেসাইটে। প্রবলেমসেটের পাতাতে গেলেই দেখতে পাবেন, চার অনলাইন বিচারকের মাঝে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের শাহরিয়ার মঞ্জুর। আমার যদি ভুল না হয়, তবে গত বছরের দশ অনলাইন বিচারকের ভেতরে বাংলাদেশেরই ছিলেন তিনজন।

আর প্রবলেম সেট আর্কাইভের টপ লিস্টে ১০০ জনের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের “ওরা ১১ জন”! নিয়মিত আয়োজিত ওয়ার্ম আপ কনটেস্টগুলোতে সাফল্য তো আছেই। বাংলাদেশের প্রোগ্রামিং সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদার্পন ঘটে গত দশকে। ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মত এসিএম বিশ্ব কলেজিয়েট প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মত অংশ নেবার পর থেকে ফি বছর সাফল্যের সঙ্গে বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশের “টাইগাররা” অংশ নিচ্ছে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে। এর মাঝে ২০০০ সালে ফাইনালে শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ কায়কোবাদের তত্ত্বাবধানে বুয়েটের মুনিরুল-মোস্তাক-ফেরদৌসের দল অর্জন করে একাদশ স্থান, যা এক অনন্য গর্ব হয়ে আছে। মোহাম্মদ কায়কোবাদ নিজেও একবার শ্রেষ্ঠ কোচ নির্বাচিত হয়েছিলেন (বছরটা মনে নেই)।

এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাঙালিরা এনেছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। বিশ্বের ৫শ শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও মেধায় যে আমাদের কমতি নেই, তা তো স্পষ্টতই প্রমাণিত। অনেকদিন পরে নাফি ভাইয়ার সাথে দেখা হল, বললেন, “তারিফ তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে”। আমি মৃদু হাসলাম, মনে মনে বললাম, দু’চারজন হারিয়ে গেলেও ক্ষতি নেই। আপনারা তো আছেনই।

আমাদের প্রতিনিধি হয়ে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।