অচেনাকে চেনার আর অজানাকে জানার এক দুর্নিবার চেষ্টায় ছুটে চলেছি জীবন পথে......।
ছেলেটির নাম জুয়েল । শুধু নামে নয়, কাজেও তাই। শুধু তার পরিবারের নয়, দেশেরও রত্ন সে। পাশ করেছে সবে মাত্র গতবছর- যেন তেন কলেজ বা ভারসিটি থেকে নয়, বুয়েট থেকে, স্থাপত্যবিদ্যায়।
তরতাজা এই সদা হাস্যোজ্জল ছেলেটির গল্প শুনাতে আজ ব্লগাচ্ছি আনমনে।
ওর মায়ের গল্প বলি আগে। বয়স হয়তো খুব বেশি নয়, চল্লিশ পেরিয়ে পঞ্চাশে হয়তো পা রাখেননি এখনো, তবু তিনি আজ বড্ড ক্লান্ত,জীবন ভার বইতে বইতে। কিইনা করলেন তিনি। একা দাড়িয়ে চট্টলার প্রাণকেন্দ্রে তিনতলা ঘরটা তুললেন এবং তদারকী ও করে যাচ্ছেন নিজ হাতে।
চার চারটা সন্তানকে মানুষ করার যুদ্ধতো আছেই। সব করেছেন একা, কারন, স্বামী সারাটাজীবনই প্রবাসে।
এইতো গত বছর, মধ্যপ্রাচ্য থেকে হঠাত খবর এল, ছেলেটির বাবার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। মা ছুটে গেলেন। সম্ভাব্য সব চিকিতসা সত্বেও বাবা জীবনের চরম পরিণতি বরন করে নিলেন নিশ্চিন্তে।
সন্তানদের দিকে তাকিয়ে কোনরকম বেচে গেলেন মা।
অবিবাহিত বোন দুটি আর ছোট ভাইকে নিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পরিবারের ভার বইবার দায়িত্ব নিল এই ছেলেটি। বাবার রেখে যাওয়া বাড়িটির দেখাশোনা আর একটা ভাল ফার্মে চাকরি, দিনকাল খারাপ যাচ্ছিল না ছেলেটির। মায়ের মত নিয়েই তাই ঘরে আনার প্রস্তুতি নিল সহপাঠী-কাম- বাবার বন্ধুর মেয়েকে। মেয়েটিও বুয়েট থেকে পাশ করা স্থপতি।
থাকে ঢাকায়। কয়েক মাস আগে এনগেজমেন্টের রিং পরিয়ে এলেন মা, এইতো আগামী শনিবার আকদটাও হয়ে যেত।
বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক। ঘরটাও রিনোভেট করা হল নতুন অতিথির আগমনের উদ্দেশ্যে। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা দের তুলে দিয়ে দোতলার পুরোটাই ওরা নিয়ে নিল।
ছেলেটির পরিবার চিটাগাং এই থাকে, বলতে বোধকরি ভুলে গেছি, ছেলেটিও জবে জয়েন করার পর পরিবারের সাথে থাকে।
হঠাত ঢাকা থেকে খবর এল, হবুশ্বশুর মশাই অসুস্থ। দেখতে গেল ছেলেটি। ফিরছিল রাতের বাসে। বাস ঠিক সময়েই পৌঁছুল, ভোর রাতে।
তখনো ফজরের আজান হয়নি মসজিদগুলোয়।
ছেলেটি পেয়েও গেল রিক্সা একটা। বাসায় পৌঁছুতে আর মাত্র কিছুদূর বাকি। এমন সময় হামলে পড়ল কিছু তাগড়া ছেলে। বুঝতেই পারছেন কেন- যা আছে তা চাই ওদের।
ছেলেটি ও দিয়ে দিল। কিন্তু তাতেও তাদের মন ভরলনা। ছুরির আঘাতে জর্জরিত করে দিল ছেলেটির পেটের নিটোল চামড়া। ২৫/২৬ বছরের তরতাজা জোয়ানের টগবগে তাজা রক্ত বেরিয়ে এল গলগলিয়ে.........।
এর পরের ঘটনা আপনারা সবাই অনুমান করে নিতে পারবেন।
সারাদিন সে হাসপাতালে লড়াই করল মৃত্যুর সাথে। অস্ত্র হিসেবে লেগেছিল ৮২ ব্যাগ রক্ত!!!
কিন্তু
...............
তাতেও শেষ র ক্ষা হলো না। হাজার হাজার(মিথ্যে বলছিনা, সারাদিনে খবর ছড়িয়ে পড়ল -ছেলেটির গ্রামের মানুষ, বন্ধু বান্ধব, আত্নীয় স্বজন, কেউ বাদ যায়নি, হাজার হাজার মানুষের আগমনের কথা মেডিকেলের দারোয়ানের মুখ থেকে শোনা) চোখের জল আর অগুনতি মানুষের প্রার্থনা কে উপেক্ষা করে সে চলে গেল চিরতরে...... শেষ ঠিকানায়।
...........................
মৃত্যু অবধারিত। তবুও প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক।
কিন্তু তা যদি হয় এরকম অকস্মাত, এরকম নির্মমভাবে, তা মেনে নিতে সবারই কষ্ট হয়।
তবু মেনে নিতে তো হবেই, কারন স্রষ্টার হাতের কলমটা তো উঠানো হয়ে গেছে, আর তার কালিও শুকিয়ে গেছে।
আমি আর কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছিনা। ঘটনা টা কেন এখানে লিখলাম তাও জানিনা। এতে ছেলেটির কি কোনো উপকার হবে? জানিনা।
একটা প্রশ্নই করব- মৃত্যু-জীবনের সবচেয়ে নির্মম সত্যটাকে- আমরা কখন কিভাবে কোলাকুলি করব জানিনা। এর জন্য কি আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিটুকুন নিতে পেরেছি?
বিঃদ্রঃ
পুরোটাই গতকালের সত্য ঘটনা। আজ কিছু কিছু পেপারেও এসেছে মনে হয়। আজ সকাল থেকে লিখতে চাচ্ছি, কিন্তু লিখা হয়ে উঠেনি।
ছেলেটির মা এখনো বেচে আছেন।
তবে কিভাবে, জানিনা এবং জানতে চাইওনা।
ছেলেটি বলা বোধহয় ভুল হয়েছে, বলা উচিত ছিল যুবকটি। যাক, আপনারা ঠিক করে নিয়েন। আজ আর ব্লগাতে ইচ্ছে করছেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।