আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার ব্লগখানি কৌতুহল ভরে
১৯৯১ সালে ততকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যে ১৫ টি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয় , তার একটি তুর্কমেনিস্তান । কাস্পিয়ান সাগর , ইরান , উজবেকিস্তান এবং আফগানিস্তান পরিবেষ্টিত দেশটি প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদে ভরপুর । স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন সাপারমুরাত আতায়েভিচ নিয়াজভ (Saparmurat Atayevich Niyazov)। ২১ শে ডিসেম্বর ,২০০৬ এ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়াজভ ১৫ বছরকালের শাসনামলে তিনি নিজেকে তুর্কমেন জাতির দেবতার আসনে নিজেকে আসীন করার প্রয়াস চালান । নিয়াজভের হাস্যকর এবং খামখেয়ালী সিদ্ধান্তগুলো , আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নিঃসন্দেহে এক বিরাট বিস্ময় ।
বিশ্ববাসীর অনেকের চোখ এড়িয়ে যাওয়া এসব প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রির কয়েকটা নমুনা দেখুন :
**এপ্রিল,২০০৪ : প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণায় তুর্কমেন যুবকদের বেশি করে হাড়(হাড্ডি) চিবানোর পরামর্শ দিয়ে বলা হয় এতে দাত মজবুত থাকবে । দাতে গোল্ড বা অন্য যে কোন ধরণের আর্টিফিশিয়াল ক্যাপ পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয় ।
**এপ্রিল,২০০৪ : প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা জাগে তুর্কমেনিস্তানের মধ্যান্চলীয় মরুভূমির মধ্যে বরফের প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে । কিন্তু অনেক চেষ্টার পর এ প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় ।
**সেপ্টেম্বর,২০০৪ : নিয়াজভ টেলিভিশনের সংবাদ পাঠক পাঠিকাদের মেকাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন ।
**ফেব্রুয়ারি , ২০০৫ : রাজধানীর বাইরে সকল বড় হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হয় যুক্তি দেওয়া হয় , মারাত্মক কিছু হলে রাজধানীতে এসেই চিকিতসা নেওয়া যায় ।
**ফেব্রুয়ারি , ২০০৫: প্রেসিডেন্টের মনে হতে থাকে যে সাধারণ তুর্কমেনরা তেমন বই-পত্র পড়ে না , তাই গ্রামাঞ্চলের সমস্ত লাইব্রেরি বন্দ্ধ ঘোষণা করা হয় ।
**ডিসেম্বর ,২০০৫: ভিডিও গেমসগুলো কিশোরদের এবং শিশুদের উদ্ধত করে তুলছে এই অজুহাতে নিয়াজভ তুর্কমেনিস্তানে ভিডিও গেমস নিষিদ্ধ করেন ।
** সেপ্টেম্বর , ২০০৬ : শিশুদের কাছে যেসব শিক্ষকরগণ প্রেসিডেন্টের সর্বোচ্ছ স্তুতি গাইতে পারেননি , তাদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি হ্রাস করা হয় ।
** নিয়াজভের মাতা "গুরবানসুলতানা"র নামে রুটির নতুন নামকরণ করা হয় ।
"আমি মাখন দিয়ে একটা রুটি খাবো" এটাকে এখন থেকে বলতে হবে "আমি মাখন দিয়ে একটা গুরবানসুলতানা খাবো"
** গানের সাথে অভিনেতাদের ঠোট মেলানো (লিপসিং)
নিষিদ্ধ করা হয় , কারণ এতে প্রকৃত শিল্পীর মর্যাদা অন্যজন পেয়ে যায় ।
** " কুকুর প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায় ".......এই যুক্তিতে রাজধানী আশক্বাবাদে নিয়াজভ কুকুর নিষিদ্ধ করেন ।
** মাসের নতুন নাম :
এপ্রিল: গুরবানসুলতান(প্রেসিডেন্টের মায়ের নামে)
সেপ্টেম্বর: রুহনামা (প্রেসিডেন্টের লিখিত বই, যা তুর্কমেনিস্তানের সর্বত্র অবশ্য পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল)
** দিনের নতুন নাম(বাংলা অর্থ) :
সোমবার : শুরুর দিন
বুধবার : ভালো দিন
রবিবার : আরোগ্যের দিন
** নতুন বয়সসীমা:
শৈশবকাল ও কৈশোরকাল: ২৫ বছর পর্যন্ত (এই হিসেবে আমি এখনও শিশু)
যৌবনকাল : দু'টো ভাগ : একটি ২৫ থেকে ৪০
অপরটি ৪০ থেকে ৬০
৬০-৮০ : বিচক্ষণতার কাল
৮০-৯৭ : বার্ধক্য
৯৭ এর বেশিদের বলতে হবে ওকাজ (তুর্কমেনদের ইতিহাসর প্রধান বীর)
পাদটীকা : নিয়াজভের স্বৈরাচারী এসব কর্মকান্ড ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র , কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্ঞাতসারেই । পশ্চিমা কোম্পানীগুলো যাতে খনিজ সম্পদের উপর থেকে প্রভাব না হারায় , সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়াজভকে সমর্থন দিয়ে যায় । নিয়াজভ পশ্চিমা তেল গ্যাস কোম্পানীগুলোকে এর বিনিময়ে প্রচুর সুবিধা প্রদান করেন ।
(গণতন্ত্র নাকি তেল-গ্যাস , কোনটা মুখ্য ??)
ছবি:
১। সাপারমুরাত নিয়াজভ
২। মানচিত্রে তুর্কমেনিস্তান
সাহায্য : english wikipedia এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।