আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম আলো: হইতেছে কী?



ভাবিয়াছিলাম, এই ঈদের ছুটিতে দৈনিক প্রথম আলো ও সমকালের ঢাউস আকৃতি ঈদ সংখ্যা পড়িয়া, টিভিতে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানগুলি দেখিয়া, আলস্য করিয়া কাটাইবো। কিন্তু প্রথম আলোর মাননীয় মতি মিয়া বোধহয় প্রয়াত খতিব মহাশয়ের কাছে নতজানু হইবার পর হইতে নিয়ত করিয়াছেন, কিছুতেই ইহার একান্ত পাঠকদের মন যোগাইবেন না; মানের কথা না হয় ছাড়িয়াই দিলাম! কয়েকদিন এক নাগাড়ে 'ঈদ বছরে আসে দুবার, কিন্তু প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যা বছরে আসে একবার' - এমন রঙচঙা চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়া হকারকে কহিয়াছিলাম, এই ঈদ সংখ্যা আমার চাই। আর সমকালের ঈদ সংখ্যা আগেই ক্রয় করিয়াছিলাম। কিন্তু অদ্য ভোরে মতি মিয়া নাকি হকার, বলিতে পারি না কাহার ষড়যন্ত্রে অন্যান্য দৈনিকের সঙ্গে ফাও জুটিলো একটি ক্ষীণকায় ঈদ সংখ্যা। প্রথমে ভাবিয়াছিলাম, ঈদ উপলক্ষে ইহা বুঝি 'ছুটির দিন' কি 'কালের খেয়া'র বিশেষ আয়োজন।

কিন্তু যাহা দেখিলাম, তাহাতে ঘুম ছুটিয়া গেলো। ... দেখিলাম, ইহা মাত্র ৪৬ পৃষ্ঠার চটি আকৃতির ম্যাড়ম্যাড়া প্রথম আলোর ঈদ সংখ্যা! ইহার জন্যই গত কয়েকদিন ধরিয়া শেষ পাতায় রঙিন বাক্স-বিজ্ঞাপন হাঁকিতেছে ইহারা! পাতা উল্টাইয়া সুতিকা রোগির ন্যায় ভগ্ন স্বাস্থের ঈদ সংখ্যাটির সম্পাদকীয় পড়িলাম। সেখানে মতি কহিতেছেন, ''...প্রথম আলো ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কয়েক বছর ধরেই ঈদ সংখ্যা বের করে বিশাল কলেবরে, যেটা আলাদাভাবে কিনে নিতে হয়। কিন্তু এবারের ঈদ সংখ্যাটি ১১ অক্টোবর ২০০৭ এর প্রথম আলোর সঙ্গে প্রত্যেক সন্মানিত পাঠককে দেওয়া হচ্ছে উপহার হিসেবে; এটা আলাদাভাবে কিনতে হবে না, আলাদাভাবে বিক্রির জন্য নয় একেবারেই। " --ব্যাস, কৈফিয়ত এতটুকুই।

ওই ভোরেই টেলিফোন ঠুকিলাম কয়েকজন সহকর্মির কাছে। অনেকই কহিলেন, তাহারাও আগাম বুকিং দিয়া হকারের কাছ হইতে এইরূপ ফাও ঈদ-চটি-সংখ্যা পাইয়াছেন। আবার কয়েকজন জানাইলেন, তাহারা ঠিক ঠিক নাদুস-নুদুস আকৃতির ঈদ সংখ্যা পাইয়াছেন। কৌতুহল বাড়িলো। ... পরে খোঁজ নিলাম, নিকটের সংবাদপত্র বিক্রয় স্থলে।

সেখানে সব ঈদ সংখ্যাই থরে থরে সাজানো রহিয়াছে; শুধু আমার কাঙ্খিতটি নাই। দোকানীর কাছে কৈফিয়ত চাহিলে সলজ্জ হাসিয়া তসলিমা নাসরিনের 'লজ্জা' বিক্রয় করিবার ভঙ্গীমায় কহিলো, ''স্যার, আপনি অগ্রীম দেড়শত টাকা দিন, কাল প্রথম আলোর 'আসল ঈদ সংখ্যা' পাইবেন। '' সে ব্যাটা অবশ্য জানাইতে কসুর করিলো না, 'আসল ঈদ সংখ্যা'টি বাজারে সহজলভ্য নহে; ইহার মূল দাম একশত টাকা। তাই যোগাড়-যন্ত্রণার জন্য আমাকে আরো বাড়তি পঞ্চাশ টাকা গুনিতে হইবে। কিন্তু হইতেছে কী? কৌতুহল চড়চড় করিয়া চড়িতেই থাকিলো।

পরে ওই অফিস হইতে যাহা শুনিলাম, তাহা কম কৌতুকপূর্ণ নহে। শুনিলাম, বর্ধিত কলেবরের ঈদ সংখ্যাটিতে নাকি সব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হক মৌলবাদ প্রসঙ্গে একখানা কলাম লিখিয়াছেন। ইহা ছাড়া উহাতে আরো কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ভিত্তিক লেখাঝোঁকাও আছে। ইহা হইতেই মতি মিয়া আগাম ভয় পাইয়াছেন, মোল্লার দল আবারো যদি ক্ষেপিয়া ওঠে! কিন্তু ততক্ষণে ইহার মূদ্রণ করা শেষ, বাধাঁইয়ের কাজ চলিতেছে। শেষমেষ কর্তৃপক্ষ ইহা হইতে বাছাই করিয়া 'নিরীহ' দেখিয়া মাত্র ১৫ টি লেখা দিয়া সাজাইলেন ওই ফাও ঈদ সংখ্যা! কিন্তু কি উপায়ে না জানি মূদ্রণশালা হইতে কিছু কিছু ঢাউস 'আসল ঈদ সংখ্যা' বাজারে আসিয়াছে।

... এতো জানিয়া - শুনিয়াও ঘোর কাটিলো না। প্রিয় পাঠককূল, আপনারা কিছু জানেন? (লেখাটি একই সঙ্গে সচলায়তনে প্রকাশিত। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।