২০১৩ পার হলো বিভিন্ন রকম অসংগতিতে ভরা পাঠ্যবই দিয়ে। পরীক্ষামূলক সংস্করণ দাবি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এই বছর রেহাই পেয়েছে। কিন্তু আগামী বছরও (২০১৪) পরীক্ষামূলক সংস্করণ কথাটি তুলে দিতে পারছে না বোর্ড। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালে পাঠ্যবইয়ে শুধু মুদ্রণপ্রমাদ কমানোর চিন্তা করা হয়। কিন্তু সেই চেষ্টাও সফল হচ্ছে না।
আর অন্যান্য অসংগতি থেকেই যাচ্ছে। এনসিটিবির সূত্র জানায়, ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত চায় বোর্ড। সম্পাদনা সহকারীদের সহায়তায় মুদ্রণপ্রমাদগুলো ঠিক করার চেষ্টা করে এনসিটিবি। কিন্তু তাঁরা যেসব ভুল চিহ্নিত করেছেন, তা-ও সংশোধন করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এনসিটিবির চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান জানান, এ বছর বইগুলোর পরীক্ষামূলক সংস্করণে যেসব অসংগতি রয়েছে, তার সবটা আগামী বছর দূর হচ্ছে না।
তবে ২০১৫ সালে শিক্ষার্থীরা নির্ভুল বই পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এনসিটিবি এখন বলছে, শিক্ষার্থীরা নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য বই পাবে ২০১৫ সালে। ওই বছরের বই থেকেই পরীক্ষামূলক সংস্করণ শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হবে। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময় শিক্ষকদের কয়েকজন প্রশ্ন তুলেছেন, এই সময়ের মধ্যে কয়েক কোটি শিক্ষার্থী কিছু কিছু ভুল বিষয় শিখবে, যা তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ প্রসঙ্গে লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের শিক্ষাজীবন নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে, তাদের চিহ্নিত করা উচিত।
এই ক্ষতি অপূরণীয়, ক্ষমার অযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য। ’
এনসিটিবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান: শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনসিটিবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বইয়ের গুণ ও মানের চেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি এখন বই ছাপা, বাঁধাই, কাগজ কেনাসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজের সঙ্গে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর আর্থিক যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। যে কারণে মানের দায়িত্ব দেখভালের কথা যাঁদের, তাঁরাও অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন।
এই প্রেক্ষাপটে এনসিটিবি দুই ভাগ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন, বইয়ের মান ও বিষয়বস্তু দেখভালের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ হওয়া উচিত। শিক্ষাসচিব সম্প্রতি এনসিটিবি আয়োজিত এক সভায় বইয়ের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের কয়েকজন বলছেন, সময়মতো বিপুলসংখ্যক বই শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেওয়া সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য জরুরি। তাই গুণগত মানের চেয়েও সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া এনসিটিবির কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করেন: পাঠ্যবইয়ের গুণমান ও বিষয়বস্তু দেখভালের জন্য এনসিটিবির রয়েছে ৫২ কর্মকর্তার বহর। বোর্ডের মোট ৬৫ কর্মকর্তার মধ্যে এই ৫২ জন বইয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাঁদের মধ্যে ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ ১০ জন, বিশেষজ্ঞ ১৫ জন, গবেষণা কর্মকর্তা ২২ জন এবং সম্পাদক পদমর্যাদার পাঁচজন। তাঁদের ৪৬ জনই বিভিন্ন কলেজ থেকে প্রেষণে এনসিটিবিতে এসেছেন। অনেকেই ৮ থেকে ১০ বছর চাকরি করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।