নাম শুনেই যার প্রেমে পড়ি
গত পরশু (শুক্রবার) সকালে রওনা দিয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব বলে। রায়েরবাগের অসহনীয় জ্যাম ঠেলে ক্যাম্পাস পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর একটা। ঈদের ছুটি চলছে তাই মোটামুটি ফাঁকাই আশা করেছিলাম। না, তেমনটা মনে হয়নি। অনেক ছাত্র-ছাত্রীই ক্যাম্পাসে আছে।
পরীক্ষা চলছে। ডেইরি গেটে চায়ের কাপ নিয়ে ফোন দিলাম ইভা আর পাভেলকে। পাভেল হলেই আছে, ইভা বটতলায়। সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বটতলায় এসে দেখি দুজনেই হাজির, সাথে পরিচিত আরো অনেকেই। লতিফের দোকানেই খাওয়া-দাওয়া সাড়লাম।
কিছুক্ষণ পর দেখা হলো ঢাবির একসময়কার ছাত্রফ্রন্ট প্রেসিডেন্ট রায়হান ভাইয়ের সাথে। গণস্বাস্থ্যের পেছনের দিকে ঘোড়াপীরের মাজার এলাকায় নাকি ছাত্রফ্রন্টের যোগাযোগ করা কিছু ছেলে-পেলেদের নাটকের তালিম দিতে এসেছেন। ওনাদের রেখে আমরা বটতলার বাঙালি মামার দোকানের দিকে চলে এলাম। আড্ডা চলছে, চলছে চা-সিগারেট। ঈদের এই অল্পকিছুদিন আগে ক্যাম্পাস এত দোকান খোলা পাব আশা করিনি।
আমাদের আড্ডার মাঝখানে আসল প্রবীর-মুনমুন। প্রবীরের তাড়া থাকায় ওর সাথে মৃত্তিকার বর্তমান ভাবনা-চিন্তা নিয়ে আলাপ সেড়ে বিদায় দিলাম। পরে ইভার সাথেও বিস্তারিত আলাপ হলো সাংগঠনিক নানান বিষয়ে। আলাপ হলো মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মৃত্যূ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় কমিটি গঠনের সভায় মৃত্তিকার প্রতিনিধি থাকবে কী থাকবে না ইত্যাদি। ইভার সাথে সাংগঠনিক পরামর্শ করার জন্যই এবারের জাবি আসা।
আলোচনার ফাঁকে শোয়েব জানাল আমাদের ২৭ ব্যাচের বন্ধু রুবেল আসছে ক্যাম্পাসে। বেশ খুশি হলাম শুনে। রুবেলের আসতে আসতে সাড়ে তিনটা বেজে গেল। সুপারিতলায় ওর সাথে দেখা হলো প্রায় আড়াই/তিন বছর পর। রাজনৈতিক ও পারিবারিক নানান টানাপোড়নের কারণে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে জাবি'র বহিস্কৃত ৭ ছাত্র নেতার একজন এই রুবেলের ক্যাম্পাস জীবনের শেষ দিকের দিন গুলো কেটেছে চরম হতাশার মধ্যদিয়ে।
যাই হোক, এরপর জীবনের অনেক কিছুই বদলে গেছে রুবেলের, হয়ত আমাদের সবারই। রুবেলের সাথে ছিল মুক্তা, আমাদের এক বছরের জুনিয়র। পড়ত ইডেন কলেজে, ছাত্রফ্রন্টের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল। রুবেল-মুক্তার সম্পর্কের কথা মুন (২৮ ব্যাচ, দর্শন) আগেই বলেছিল। বেশ ভালো লাগল।
সুপারিতলায় (সুপারিতলা নামটার চাইতে এখন ট্রান্সপোর্ট শব্দটাই অধিক প্রচলিত) চা পানের পর লেকের পাড়ে বসলাম সবাই মিলে। পড়ে মুন্নী স্বরনী ধরে চলে এলাম এক নতুন জায়গায়। নতুন জায়গা মানে, আগের সেই আকাশমনি চত্বর আর কি। নতুন জায়গা বলছি একারণে যে, ক্যাম্পাসে বিগত ছয় মাসের মধ্যে যাতায়াত নেই এমন কোন প্রাক্তন যদি কালু ভাইয়ের চায়ের দোকান আর ঢালু লেকের পাড়ের অবিরাম আড্ডার কথা মনে করে সেখানে যান তাহলে একটা ধাক্কা খাবেন বৈকি। আকাশমনি গাছ একটাও নেই, মাটি ভরাট করে লেকের পাড় উঁচু আর সমতল করে ফেলা হয়েছে।
কিছু শোভাবর্ধণকারী গাছ লাগানো হয়েছে লাইন ধরে। পার্ক পার্ক একটা ভাব আরকি। যাই হোক, রুবেল ক্যাম্পাসে আসার পরপরই শুরু করে দিয়েছে নানা স্মৃতিচারণা, বেশির ভাগই ছিল সংগঠন আর রাজনীতি নিয়ে। ফটোগ্রাফার ইভা আমাদের প্রাক্তনদের কিছু ছবি তুলে রাখলেন তার ক্যামেরাতে। প্রান্তিকে যেতেই সেই পিচ্চি জহিরের সাথে দেখা।
আলবেরুনী হলের খালার ক্যান্টিনে কাজ করত এই জহির, একদম গেন্দাকাল থেকেই বলা চলে। এখন কাজ করে প্রান্তিক গেটের এক হোটেলে। হাসিমাখা মুখেই জিজ্ঞেস করল- কেমন আছেন? উত্তর দিয়ে এগিয়ে গেলাম আরো সামনে। হাসান ভাইয়ের দোকানে নাস্তা সেড়ে সন্ধ্যায় আবার সুপারিতলা। আমার ক্যাম্পাস ছাড়ার কথা ছিল বিকেলের মধ্যেই।
কিন্তু রুবেলের আগমন তা ঠেকিয়ে দিয়েছে। দীপায়নদা'র (দীপায়ন খীসা-সম্পাদক, মাওরুম) মিটিং আগামীকাল বিকেল চারটায় ধানমন্ডি ৮এ তে। ঈদের বাজার নারায়ণগঞ্জ থেকে আসার ঝক্কির কথা চিন্তা করে থেকেই গেলাম। পাভেলের (৩২ ব্যাচ, নৃ বিজ্ঞান) উস্কানিও ছিল। রুবেলেরও ইচ্ছে ছিল থাকার, মুক্তার কারণে তা হয়নি।
বাসায় কী সমস্যার কথা বলছিল। রাতে বটতলায় খাবার-দাবার সেড়ে সিগারেট নিয়ে চলে এলাম ভাসানী হলে শোয়েব-শাওন-পাভেলদের রুমে। কিছুক্ষণ পর শুভ্র, ফারুক সহ আরো কয়েকজন চলে এলো রুমে। ওদের প্রেম বিষয়ক আড্ডা গড়াতে গড়াতে রাজনীতিতে গিয়ে ঠেকল। রাজনৈতিক আলোচনা (বিশেষ করে বামপন্থীদের নিয়ে) বেশ উত্তাপ ছড়ালো।
জাহাঙ্গীরনগরে নতুন লিটলম্যাগ বের হচ্ছে না অনেকদিন ধরে। সর্বশেষ 'অস্তিত্ব' নামে একটা ভাঁজপত্র বের হয়েছে কবিতা নিয়ে। ৩২ ব্যাচের ফারুক জানাল ওরা 'লেখা' নামে সাহিত্য পত্রিকা বের করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। খোলার পরপরই হয়ত তা প্রেসের চৌহদ্দি পার হতে পারবে। ভাঁজপত্রটি উল্টেপাল্টে পড়লাম।
ঘনিষ্ঠজন রাসেল শাহরিয়ার মিঠু'র (২৯ ব্যাচ, বাংলা) কবিতাটা বেশ মনে ধরল। ঘুমাতে ঘুমাতে যথারীতি সেই ভোর পাঁচটা। সকালের দিকে দেখি রাজকুমার, দুপুর মিত্ররাও এসেছে। আড্ডা জমে গেল প্রথাগত নিয়মেই। ২ টার বাসে পাভেলের সাথেই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
কেন জানি গতরাতে পড়া মিঠুর কবিতাটা মনে বাজছিল অনেক সময় ধরেই-
উড়ে যাওয়া পাখির পড়ে যাওয়া পালকের মত
পিছল কাটে স্মৃতি
আনমনে আনমনে...
কিন্তু হায় পালক
তুমি এখনো প্রথাগত বাতাসেই উড়ো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।