আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবে কদরের গুরুত্ব

আসুন সত্য ইসলামকে জানি এবং অন্যদেরকে জানাই ...

সবে কদর হচ্ছে পবিত্র রমযান মাসের অন্যান্য সব রাতগুলোর মধ্যে ইবাদত-বন্দেগী ও আধ্যাত্মিকার সর্বোচ্চ স্থরপূর্ণ রাত। যে রাতের ইবাদতকে বছরের অন্যান্য এক’হাজার মাসের ইবাদতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যে রাতে ফেরেশ্তাকুল ও রুহুল আমিন আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালার ইচ্ছায় এই ধরায় নেমে আসেন এবং মানুষের প্রতিটি আমলকেই নিখুতভাবে পর্যবেক্ষণ করেন ও আগামী সবে কদর পর্যন্ত তাদের ভাগ্যলিপিতে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন দিয়ে যান। এ রাত পবিত্র কোরআন নাযিল হবার রাত। সর্বোপরি এ রাত হচ্ছে স্রষ্টার আশ্রয়ে সৃষ্টির ফিরে আসা এবং নিজেকে ভুলে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালার চিন্তায় মত্ত থাকার রাত।

প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ্ রাববুল আ’লামিনের সাথে ঐশী প্রেম করার রাত। সবে কদরের আমলসমূহ ১- গোসল করা : যেহেতু এ রাতে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগী করে মহান আল্লাহ্ তাবারাক তা’য়ালার নৈকট্য হাসিল করার উদ্দেশ্যে নিমিত্ত হব তাই মুসতাহাব হচ্ছে তাঁর নৈকট্য হাসিলের নিয়তে গোসল করা । قال موسى بن جعفر (عليه السلام) : من اغتسل ليلة القدر و احياها ... যে ব্যক্তি এ (সবে কদরের) রাতে গোসল করল ও জাগ্রত থেকে আমল আঞ্জম দিল, সে সূর্য উদয় হওয়ার পূর্বেই গোনাহ্ মুক্ত হয়ে যাবে (ওয়াসায়েল, পৃ.-৩৯৭)। ২- জাগ্রত থেকে আমলসমূহ আঞ্জাম দেয়া : এটা অবশ্যই শোভনীয় হবে না যে, ফেরেশ্তাকুল এ ধরায় নেমে আসবেন আর মানুষ ঘুমিয়ে রাত পার করে দু’নিয়া ও আখিরাতের সব কিছু হারাবে। قال ابو جعفر الباقر (عليه السلام) : من احى ليلة، غفرت له ذنوبه و لو كانت عدد نجوم السماء و مثاقيل الجبال و مكائيل البحار যে ব্যক্তি সবে কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আমলসমূহ আঞ্জম দেয়, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালা তার সমুদয় গোনাহ্কে ক্ষমা করে দেন তা যদি আকাশের তারকা, পাহাড় ও সমুদ্র পরিমান হয়েও থাকে (ওয়াসায়েল, পৃ.-২৬২)।

৩- পবিত্র কোরআন তেলোওয়াত করা : পবিত্র কোরআল তেলোওয়াত করা বলতে শুধুমাত্র তা পাঠ করাই উদ্দেশ্য নয় বরং আয়াতসমূহ সম্পর্কে গভির চিন্তা-ভাবনা করা ও উত্তম দিক নির্দেশনায় পৌছানো। ৪- দোয়া পাঠ করা : বিভিন্ন দোয়া পাঠ করা যা নির্দিষ্ট দোয়ার বইগুলোতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে সর্বোত্তম হচ্ছে দোয়া-এ-জৌসানে কবির পাঠ করা। ৫- নিম্নলিখিত কাজগুলো আঞ্জাম দেয়া : ক)- ছদকা দান করা। খ)- ইয়াতিককে সাহায্য করা।

গ)- অতীত পাপ বা গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তওবা বা আসতাগফার করা। ঘ)- ভবিষ্যতে পাপ বা গোনাহ্ না করার জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালার সাথে অঙ্গিকারবদ্ধ হওয়া। ঙ)- আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা ও শয়তান থেকে দুরে থাকতে পারার শক্তি চাওয়া। চ)- প্রচুর পরিমানে ক্রন্দন করা। ৬- নামায আদায় করা : সবে কদরের রাতে বিভিন্ন নামায আদায় করা যেতে পারে, তবে যেটি সব থেকে সহজ তা হচ্ছে : দু’রাকায়া’ত নামায পড়তে হবে।

যার প্রতি রাকায়া’তে সূরা হামদদের পরে সাত বার সূরা তৌহিদ পাঠ করতে হবে। আর নামায শেষে সত্তর বার “আসতাগফিরুল্লাহি রাবিব ওয়া আতুবু ইলাই” পড়তে হবে। সবে কদর সম্পর্কে একটি সামগ্রীক হাদীস عن کنز اليواقيت عن النبی(صلی لله عليه و آله) قال : موسی الهی اريد قربک. قال: قربی لمن استيقظ ليلة القدر، قال: الهی اريد رحمتک، قال: رحمتی لمن رحم المساکين ليلة القدر، قال: الهی اريد الجواز علی الصراط، قال: ذالک لمن تصدق بصدقة فی ليلة القدر، قال: الهی ارد من اشجار الجنة، قال: ذالک لمن سبح تسبيحة فی ليلة القدر، قال: الهی اريد رضاک، قال: رضای لمن صلی رکعتين فی ليلة القدر. হযরত মুসা (আ.) আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালার কাছে নিবেদন রাখলেন যে : হে আল্লাহ্ আমি তোমার নৈকট্য চাই। আল্লাহ্ বললেন : আমার নৈকট্য তারাই হাসিল করবে যারা সবে কদরের রাত জাগ্রত অবস্থায় (আমলসহ) কাটাবে। নিবেদন রাখলেন : হে আল্লাহ্ তোমার রহমত চাই।

বললেন : আমার রহমত তাদের জন্যেই যারা সবে কদরের রাতে ইয়াতিমদের প্রতি দয়া বা অনুগ্রহ করে অর্থাৎ তাদেরকে যারা সাহায্য করে। নিবেদন রাখলেন : হে আল্লাহ্ পুল সিরাতের উপর থেকে দ্রুতগতিতে পার হতে চাই তার অনুমতি আমাকে দাও। বললেন : আমার অনুমতি তাদের জন্যেই থাকবে যারা সবে কদরের রাতে ছদকা দান করে। নিবেদন রাখলেন : হে আল্লাহ্ বেহেশ্তে বাগান চাই। বললেন : তা তাদের জন্যেই যারা সবে কদরের রাতে আমার তসবিহ্ (জিকির) পাঠ করে।

নিবেদন রাখলেন : হে আল্লাহ্ তোমার সন্তুটি কামনা করি। বললেন : আমার সন্তুটি তার জন্যেই যে সবে কদরের রাতে দু’রাকায়া’ত নামায (মুসতাহাব) আদায় করে (আল্-মুরাকিবাত, পৃ.-৩১২)। তথ্য সূত্র : ১- আল্-মুরাকিবাত (সবে কদর অধ্যায়), মরহুম আয়াতুল্লাহ্ আল্ হাজ্জ মির্যা জাওয়াদ মালিকি তাবরিযি (রহ.)। ২- মাফাতিহুল জিনান (সবে কদর অধ্যায়), মরহুর ছেক্কাতুল ইসলাম আল্ হাজ্জ শেইখ আববাসে কুমি (রহ.)।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।