আমি কাক নই, আমি মানুষ...
বাল্টু মামাকে সায়ফী খুব পছন্দ করে। একদিন মামা বলল, ‘চল ভাগিনা তোকে ভিতরগড় দেখাতে নিয়ে যাই। ’
‘ভিতরগড়টা কি মামা?’
‘ভিতরগড় হলো একটা জায়গার নাম। এটা পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত। ভিতরগড়ের মতো আরো পাঁচটা গড় নিয়ে পঞ্চগড় গঠিত, বুঝলি।
তবে পাঁচটা গড়ের মধ্যে চারটা পড়েছে আমাদের দেশে আর অন্যটা পড়েছে ভারতে। ’
‘কিন্তু গড় জিনিসটা কি?’
‘আগের দিনে একটা বড় এলাকাকে গড় বলত। ’
সায়ফী মুখটা খানিকটা বাঁকিয়ে ফেলল। মামার এই একটা দোষ, একটা কিছু বলতে থাকলে আর থামতেই চায় না। তবুও সে মামাকে খুব পছন্দ করে।
সে বলল, ‘ভিতরগড়ে কি আছে মামা?’
‘ওখানে অনেক পুরনো একটা পুকুর আছে। পাশে আছে প্রায় ধবংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ি। ’
পুকুরের কথা শুনেই সায়ফীর মন খারাপ হয়ে গেল। এই তো সেদিন আবিদের মামা তাকে ফ্যান্টাসি কিংডম বেড়াতে নিয়ে গেল। স্কুলের সবার কাছে সে নিয়ে কত গল্প করল সে।
অথচ বাল্টু মামা কিনা নিয়ে যেতে চায় ভিতরগড়ের একটা পচা পুকুর দেখাতে। এখন কি আর সে ছোট আছে? সে কাস টুতে পড়ে।
আসলে বড়রাই বোকা। ওরা ছোটদের বোকা মনে করে। ভাবে ওরা ছোট মানুষ, ওরা আর কী বোঝে।
কিন্তু ছোটরা তো এত বোকা না।
কিন্তু বাল্টু মামা তো এত কিপ্টুস ছিল না কখনও। সায়ফীর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। অবশ্য পুকুর দেখার কোন ইচ্ছা না থাকলেও সে দেখতে গেল।
ভিতরগড় এসে সে অবাক হয়ে গেল।
এটা তো পুকুর না। যেন মহাসমুদ্র। পাড়গুলো অনেক উঁচু। যেন এক একটা পাহাড়। পাহাড়ে ঘেরা অপরূপ মহাসমুদ্রই বলা যায়।
সায়ফী দৌড়ে পুকুরের পানিতে হাত দিয়ে বলল, ‘মামা দেখ কি ঠাণ্ডা পানি!’
‘এখন তো খুব লাফাচ্ছিস। অথচ এখানে আসার কথা বলতেই মুখ কালো করে ফেলেছিলি। এবার বুঝলি তো বাল্টু মামা কাকে বলে?’
‘ওহ মামা, ইউ আর গ্রেট। ’
সে মামাকে জড়িয়ে ধরতে গেল। দুজনই হুমড়ি খেয়ে পানিতে পড়ে গেল।
সায়ফী খিল খিল করে হেসে উঠল। বাল্টু মামা বলল, ‘হাসি থামা, আগে একটা গল্প শোন। ’
‘কি গল্প মামা?’
‘ভিতরগড়ের এই পুকুর কিভাবে হলো সেই গল্প। ’
‘কিভাবে হলো মামা?’
‘এই ভিতরগড়ে অনেক অনেক দিন আগে বাস করত রাজা কিংস্টোন। তার নাম স্টোন হলেও মনটা ছিল খুব নরম।
প্রজারা তাকে খুব ভালোবাসত। সেই কিংস্টোন রাজার ছিল একমাত্র কন্যা রাই। সে ছিল যেমন সুন্দরী তেমনী বুদ্ধিমতী। তাই প্রজারা তার বুদ্ধির খুব প্রশংসা করত।
একসময় রাজকন্যা রাই বড় হলো।
রাজা তার বিয়ে দিতে চাইলেন। ’
‘বড় হলেই কি বিয়ে দিতে হয়?’Ñ সায়ফী প্রশ্ন করে।
‘হ্যাঁ, তুই যখন বড় হবি তখন তোরও বিয়ে দেব। ’
মামার কথায় লজ্জা পেল সে। লজ্জা লজ্জা মুখেই বলল, ‘যাহ্! আমি কখনো বড় হব না।
’
বাল্টু মামা তার নাক চেপে বলল, ‘রাজকন্যা রাইয়ের বিয়ের কথা প্রচার হলো। নানান দেশের রাজপুত্র এলো তাকে বিয়ে করতে। কিন্তু কোন রাজপুত্রই পছন্দ হয় না রাজার। কারো নাক উঁচা তো কারো নাক বোঁচা। কারো গলা লম্বা তো কারো চাপা ভাঙ্গা।
এত সুন্দর রাজকন্যার বিয়ে তো আর বোঁচার সঙ্গে দেয়া যায় না। কী বলিস?’
‘হ্যাঁ তা তো ঠিকই। ’Ñ সায়ফী বিজ্ঞের মতো মাথা দোলায়।
‘শেষ পর্যন্ত বিহার রাজ্যের রাজপুত্র খৈয়ামের সঙ্গে রাজকন্যা রাইয়ের বিয়ে ঠিক হলো। রাজ্যজুড়ে সে কী আনন্দ! সবাই বলতে লাগল, রাজকন্যা রাইয়ের সাথে রাজপুত্র খৈয়ামকে খুব মানাবে।
কিন্তু বিয়ের আগেই একটা অঘটন ঘটে গেল। হিমালয় থেকে একদিন এক দৈত্য নেমে এলো। সে সবাইকে এক এক করে বন্দি করতে লাগল। দৈত্যের গায়ে ছিল অনেক শক্তি। রাজপুত্র খৈয়ামও তার সাথে যুদ্ধে পেরে উঠল না।
রাজা-রানী চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠলেন। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। এত আদরের রাজকন্যা, এত যার রূপ! তার কিনা বিয়ে হবে হিমালয়ের দৈত্যের সাথে! কিন্তু এমন বিপদের সময়ও রাজকুমারী রাই ভয় পেল না। সে দৈত্যকে ডেকে বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত?
তোমাকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে।
ঠিক আছে দেব।
আমি রাজপ্রসাদের ঐ ছোট্ট পুকুরে একটা হীরের আংটি ফেলে দেব। তুমি যদি আংটিটা খুঁজে আনতে পার তবেই তোমাকে বিয়ে করব।
হা... হা... হা... এ তো মামুলি ব্যাপার।
হেসে উঠল দৈত্য।
রাজকন্যা পুকুরে আংটি ফেলে দিতেই পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ল দৈত্য। বড় বড় নখ দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগল। ফলে পুকুর বড় হতে থাকল। কিন্তু আংটি তো অনেক ছোট, ওটাকে কী আর খুঁজে পাওয়া যায়।
দৈত্য তিন রাত তিন দিন মাটি খুঁড়ল। খুঁড়তে খুঁড়তে এক সময় দৈত্য কান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এ সময় রাজপুত্র খৈয়াম তার সৈন্য নিয়ে ঘুমন্ত দৈত্যকে মেরে ফেলল। তারপর সারা রাজ্যে আবার আনন্দ ফিরে এলো। শুরু হলো রাজকন্যা রাই আর রাজপুত্র খৈয়ামের বিয়ের উৎসব।
সবাই রাজকন্যার বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগল।
দৈত্য যে পুকুর খুঁেড়ছিল সেই পুকুরই হলো এই ভিতরগড়ের পুকুর। ’
সায়ফী গভীর চিন্তা নিয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে থাকল। আসলেই পুকুরটা অনেক বড়। দৈত্য ছাড়া এই পুকুর খোঁড়া সম্ভব না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।