মনে প্রাণে ঘৃণা করি রাজাকার। পাকিস্তানের দালালি করার শখ থাকলে এখানে ল্যাদাতে না আসার জন্য বলা হচ্ছে। ড্রাইভার শিপু মিয়া একটা সিগারেট ধরিয়ে তার ড্রাইভিং সিটে শরীরটা এলিয়ে দেয়। বুক ভরে নিকোটিন টেনে নিয়ে ভাবতে লাগল নাহ! আজকে একটা কাজের মতো কাজ করতে পারছে সে অনেক দিন পর। বেকুব মেয়েটা কি সহজে ফাঁদে পা দিল।
সব যাত্রী নাইমা যাওয়ার পরেও খালি বাসে একা একা বসে থাকল পাটুরিয়া যাবে বলে। বেকুবটা জানেইনা এইটা পাটুরিয়া যাওয়ার গাড়ি না। আইডিয়াটা আবুল কাশেমের মাথায় প্রথম আসছে, মাইয়াটারে একলা বসা দেইখা ও একটা চোখ টিপ দিছিল দিপু মিয়ার দিকে তাকায়ে। মাইয়াটা দেখেনাই। এরপরের ঘটনা পানিভাতের মতো সহজ।
ঘটনার কথা মনে করে দিপু মিয়া আনন্দে চোখ বন্ধ করে কষে দুটা টান দেয় সিগারেটে। তার বউয়ের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। হারামজাদী কয় সে নাকি পারে না! দিনের পর দিন এই কথা আর কত শোনা যায়? আজকে সে দেখায়ে দিল সেও পারে। গার্মেন্টসের মাইয়াটার বয়সও কম ছিল, ঘরের বান্দিটা তো একটা বুড়ি। তয় ছেমড়িটারে জ্যান্ত ছাইড়া দেয়া মনে হয় ঠিক হইল না।
পরে আবার কোন ঝামেলা হয় নাকি আল্লাহ্ মালুম। মাইরা ব্রিজের তলে ফালায় দিলেই হইত। এইরকম দুই একটা মাতারি মরলে কে খবর রাখে এই দেশে?
হেল্পার আবুল কাশেমের ডাকে দিপু মিয়ার চিন্তায় বাঁধা পড়ল।
: ওস্তাদ! পান লন।
- দে।
জর্দা কি বেশি দিসস নি? মাথাডা আইজ এমনিতেই ঝিম ঝিম করতাছে।
ওস্তাদের কথা শুনে আবুল কাশেমের মুখে চিকন একটা হাসি দেখা দেয়। ওস্তাদ আজকে ওস্তাদের মতোই খেল দেখাইছে। এইরকম দিন যে ঘন ঘন কেন আসেনা!
- কাশেম তুই একটু আমার বাড়িত যা। তর ভাবীর কাছে এই ট্যাকা কয়টা দিয়া আয়।
: দেন। অহনি দিয়া আইতাছি। আইজ তো আর কোন ট্রিপ নাই।
- এই ল। চাইরশ আছে।
গুইনা ল।
টাকা গুনতে গুনতে আবুল কাশেম বাস থেকে নেমে তার ওস্তাদের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। দিপু মিয়ার সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। সেও গাড়ি থেকে নেমে আসল। হাসুর বাড়ি আজকে বাংলা খাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে খবর আছে তার কাছে।
কার মুখ দেখে যে দিন শুরু করেছিল আজ!
ঘণ্টা তিনেক পর হাসু ড্রাইভারের বাড়ি থেকে পাড় মাতাল দিপু মিয়া টলতে টলতে বেরিয়ে আসে। ঠিক মতো পা ফেলতে পারছে না সে, কষ্ট হচ্ছে হাঁটতে তবে তার মনে বেজায় সুখ। প্রথমে গার্মেন্টসের কচি মাইয়াটা, এরপর কড়া বাংলা মদ আর জুয়ার আসরে বসে ছয় হাজার টাকা কামাই! উফ্!
ভাবতে ভাবতে বাড়ির কাছে চলে এসেছে শিপু মিয়া। আরেকটু কাছে আসতেই কিসের যেন শোরগোল দেখা গেল বাড়ির সামনে। কে যেন চিৎকার করে কাঁদছে! গলাটা তার বউয়ের মতো শোনালো।
আরেকটু কাছে আসতেই দেখতে পেল তাকে, কি একটা জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছে। শিপু মিয়া ডাক দেয়
: পারুলের মা!
হালিমা বানু মাথা তুলে তাকায়। তার চোখে ঘোর লাগা দৃষ্টি, উদ্ভ্রান্ত চেহারা।
- পারুলের বাপগো! এইডা কি হইল গো?
: ক্ ক্ কি হইছে পারুলের মা? আমার পারুলের কি হইছে? ওরে শোয়ায় রাখছ ক্যান?
- পারুল আর নাই গো... ! আমার পারুল গলায় ফাঁস দিছে ! কুত্তার বাচ্চা কাশেম!! ঐ জানোয়ার আমার মাইয়াটারে বাঁচতে দিল না! আমার তের বছরের মাইয়াটা! আমার ফুলের মত কচি মাইয়া! পারুল রে! ও আমার সোনারে! এইটা তুই কি করলি রে?
মাতাল শিপু মিয়ার নেশার ঘোর কেটে যেতে থাকে। পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসতে থাকে চারদিক থেকে! তার একমাত্র মেয়ে... তার চোখের মনি... তার পারুল ... !
শিপু মিয়ার লাল চোখদুটি আরও লাল হয়ে আসে।
মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে! খুনের নেশায় পেয়ে বসে তাকে। কাশেম জানোয়ারটার রক্তে গোসল না করে সেই আগুন নিভবে না! জানোয়ারটা তার নিজের মেয়েরে একলা পাইয়া ... ! উফ্ আল্লাহ্ !
[বাস্তবের শিপু মিয়ারা এভাবে পায় না প্রকৃতির বিচার। বাস্তবের শিপু মিয়া আবুল কাশেমরা থাকে ওত পেতে শিকারের অপেক্ষায়। নেশাগ্রস্ত জানোয়ারগুলোর হাতে মান যায় প্রাণ যায় একের পর এক। ওদের নগ্ন ক্ষুধা মেটে না, নারকীয় যাত্রা থামে না; যেমন থামে না পারুলের মায়েদের বুক ভাঙ্গা কান্নার ঢেউ, বহমান অশ্রুধারা...] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।