আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ হলো লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার (বিস্তারিত)

গভীর কিছু শেখার আছে ....

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বসেছিল রূপসীদের মেলা। দুই মাসব্যাপী লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৭ প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফাইনালে উঠে আসা টপ টেনের মধ্যেও তাই চাপা টেনশন বিরাজ করছিল। নির্বাচিত হবেন কোনো একজন, যার মাথায় শোভা পাবে বিজয় মুকুট। মুনমুনের উপস্থাপনায় ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। একই সঙ্গে চ্যানেল আইতেও অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখানো হয়।

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া এলসিএস-এর টাইটেল সঙ্গীত ও রূপসী মেয়ে’র সঙ্গে এক আর্টিস্টিক কোরিওগ্রাফি নিয়ে প্রথম পরিবেশনায় মঞ্চে আসেন এবারের টপ ২৫ জন পারফরমার। এরপর টপ টেনের শুরু থেকে ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত আসার ওপর একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। ভিডিও চিত্রের পরই মঞ্চে স্বাগত বক্তব্য দিতে আসেন চ্যানেল আইর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি সবাইকে উদীয়মান এসব স্টারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। এছাড়া এশিয়াটিক ও ইউনিলিভারের সঙ্গে সুপারস্টার বাছাই প্রতিযোগিতায় চ্যানেল আই সংশ্লিষ্ট থাকায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ফরিদুর রেজা সাগরের বক্তব্যের পর মঞ্চে আসেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান রাকেশ মোহান। তিনি বলেন, লাক্স বোঝে নারীকে, নারী সৌন্দর্যবোধকে। রূপের রঙে ভুবন মাতানোর আত্মবিশ্বাস দিতে পারে কেবল লাক্স। আর সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে পৃথিবীব্যাপী লাক্স তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এ ক্ষেত্রে।

এ রকম একটি অনুষ্ঠানের সার্থক সমাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান। স্বাগত বক্তব্যের পর টপ টেন প্রতিযোগীরা সাজো রে সাজো গানের চমৎকার একটি কোরিওগ্রাফি নিয়ে মঞ্চে আসেন। টপ টেনের পরিবেশনার পর গতবারের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার মম ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত মুভি দারুচিনি দ্বীপ-এর মন চাই মন চাই গানের ওপর একটি কোরিওগ্রাফি প্রদর্শন করেন। দারুচিনি দ্বীপে অভিনয় করা বেশ কয়েকজনসহ একঝাক সহশিল্পী কোরিওগ্রাফিতে অংশ নেন। এরপর আরেকটি কোরিওগ্রাফিতে অংশ নেন তিন্নি, কুসুম সিকদার ও লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৫ শানু।

উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডে এসেও দর্শকরা তাদের প্রিয় স্টারকে এসএমএসে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। দর্শকদের দেয়া এসএমএস ও বিচারকদের পয়েন্ট যোগ করে টপ টেন থেকে টপ ফাইভ নির্বাচন করা হয়। তবে টপ ফাইভ নির্বাচনের আগে আগে নির্বাচিত লাক্স ফটো সুন্দরী চিত্রনায়িকা দোয়েল, পপি ও দর্শকদের প্রতিক্রিয়া স্ক্রিনে দেখানো হয়। তারপরই টপ ফাইভ ঘোষিত হয়। মিম, আলভী, ফারিয়া, রাহা ও জয়া টপ ফাইভে উঠে আসেন।

টপ টেন থেকে পাচজন বিদায়ের পর মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও ফাহমিদা নবী। তারা আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে গানটি পরিবেশন করেন। স্ক্রিনে এ সময় দেখানো হয় আগের রাউন্ড থেকে বিদায়ের সময় প্রতিযোগীদের আবেগঘন কান্নার দৃশ্য। গানের পরই শেষবারের মতো প্রতিযোগীরা মুখোমুখি হন বিচারকদের। নিয়মিত বিচারক সুবর্ণা মুস্তাফা, তৌকীর আহমেদ, আসাদুজ্জামান নূর ও সারা যাকের ছাড়াও ফাইনালে অন্যতম বিচারক হিসেবে ছিলেন চ্যানেল আইর ডিরেক্টর শাইখ সিরাজ।

লটারির মাধ্যমে প্রতিযোগীরা বেছে নেন কোন বিচারক তাকে প্রশ্ন করবেন। আর এ প্রশ্নে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরই ঠিক করবে কে হবে এবারের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার। আলভীকে প্রশ্ন করেন সুবর্ণা মুস্তাফা, মীমকে সারা যাকের, ফারিয়াকে শাইখ সিরাজ, রাহাকে আসাদুজ্জামান নূর ও জয়াকে প্রশ্ন করেন তৌকীর আহমেদ। প্রতিযোগীরা খুবই স্মার্টভাবে বিচারকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। তারপর উপস্থাপক মুনমুন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত সুপারস্টার কোন মুভিতে অভিনয়ের সুযোগ পাবেন তা ঘোষণা করেন।

স্ক্রিনে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, তার উপন্যাস আমার আছে জল অবলম্বনে একটি মুভি তিনি তৈরি করবেন। আর উপন্যাসের কেন্দ্রীয় দিলু চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাবে এবারের নির্বাচিত লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই যায়যায়দিনের পাঠকদের আমরা এবারের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার কোন মুভিতে অভিনয়ের সুযোগ পাবেন তা জানিয়ে দিয়েছিলাম। সবশেষে স্টেজে আসেন জাহেদ আকতার, ফরিদুর রেজা সাগর, নওশাদ চৌধুরী ও রাকেশ মোহান। এ সময় বিচারকদের কাছে তাদের সর্বশেষ মন্তব্যটি জানতে চাওয়া হলে বিচারকরা টপ ফাইভের সবাইকেই বিজয়ী বলে মন্তব্য করেন।

উপস্থাপক তারপর অ্যান্টি-ক্লক ওয়াইজ একে একে ঘোষণা করেন বিজয়ীদের নাম। চতুর্থ রানারআপ জয়া, তৃতীয় রানারআপ রাহা ও দ্বিতীয় রানারআপ হন ফারিয়া। ফারিয়াকে গত বারের দ্বিতীয় রানারআপ বাধন উত্তরী পরিয়ে দেন ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ফারিয়াকে ৩ লাখ টাকার চেক তুলে দেন জাহেদ আকতার। তারপর বাকি থাকে কে হবেন এবারের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার।

মিম না আলভী? সবাই খুব উৎকণ্ঠায় পড়ে যায়। ঘড়ির কাটা যখন ঠিক রাত ৯টা ৫৪ মিনিট, তখন মাইকে ঘোষিত হলো মিমের নাম। এবারের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হন বিদ্যা সিনহা সাহা মিম ও প্রথম রানার আপ হন শেখ মমরোজ আজমী আলভী। বিজয়ী হওয়ার আনন্দে মিম আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। সহ-প্রতিযোগী আলভিকে আবেগে জড়িয়ে ধরেন মিম।

আলভীকে গত বারের প্রথম রানার আপ বিন্দু উত্তরী পরিয়ে দেন ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ফরিদুর রেজা সাগর ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন আলভীকে। আর বিজয়ী মিমকে উত্তরী পরিয়ে ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পর মাথায় বিজয়ের ক্রাউন পরিয়ে দেন গত বারের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার মম। মীমকে ১৩০০ সিসি ব্রান্ড নিউ নিসান গাড়ির চাবি তুলে দেন রাকেশ মোহান। এছাড়া মুভি কন্ট্রাক্ট মিমের হাতে তুলে দেন নওশাদ চৌধুরী ও হুমায়ূন আহমেদ।

শুরু থেকে শেষ লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৭-এর পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করছে এশিয়াটিক ইভেন্টস মার্কেটিং কম্পানি। যদিও মূল উদ্যোক্তা ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। ইউনিলিভার এ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মার্কেটিং কম্পানির কাছে প্রস্তাব আহ্বান করলে এশিয়াটিক ইভেন্টস মার্কেটিং কম্পানি এ দায়িত্ব পায়। চলতি বছর জুনের ১২ তারিখ থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশি তরুণীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয় চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

এগুলো হলো পোস্টাল, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন স্থানে কম্পানি থেকেই ক্যামেরাম্যান নিয়ে গিয়ে ছবি তুলে ফরম পূরণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে মোট তিন হাজার ৫০০ ফরম জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১৫০ জনকে বাছাই করা হয়। এরপর ১৫০ জনকে ঢাকায় এনে ইকবাল আহমেদ ও তুহিনকে দিয়ে ফটো সেশন করা হয়। এ ছবি দিয়ে হয় একজিবিশন।

জাজরা এ ছবি দেখেন এবং সরাসরি ইন্টারভিউ গ্রহণ করেন। এ পর্ব থেকে ১০০ জনকে বাদ দেয়া হয়। বাকি ৫০ জনকে নিয়ে ভিডিও স্ক্যানিং টেস্ট করা হয়। এখানে বাদ যায় ২৫ জন। বাকি ২৫ জনকে নিয়ে জুলাই মাসের ৩ তারিখে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াতে গ্রুমিং সেশন শুরু হয়।

এখানে তাদের ক্যাটওয়াক ক্লাস, অ্যাকটিং ক্লাস, বিউটি ক্লাস, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ক্লাস করানো হয়। এভাবেই প্রথম রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। সেখান নয়জনকে বাদ দেয়া হয়। বাকি ১৬ জনকে নিয়ে প্রিন্ট অ্যাড সেশন করা হয়। এখানে ইকবাল আহমেদ ছবি তোলেন।

এখান থেকে দুইজন বাদ পড়ে। থাকে ১৪ জন। এ ১৪ জনকে নিয়ে ১৭ তারিখ ঢাকার আমাজান ক্লাবে এসে ফ্যাশন দিবা সেশন শুরু হয়। এ পর্বে দুইজন বাদ পড়ে। বাকি ১২ জনকে নিয়ে শ্রীমঙ্গলে যাওয়া হয়।

এখানে ট্রেজার হান্ট রাউন্ড শুরু হয়। শ্রীমঙ্গল থেকে পুনরায় ঢাকা চলে আসে পুরো ইউনিট। ঢাকায় আসার পর সবাইকে পারফর্ম করতে হয়। এ রাউন্ডে দুইজন বাদ পড়ে। এর পরই টপ টেন-এ চলে আসা।

এ টপ টেনের প্রথম বিষয় ছিল টিভি বিজ্ঞাপন করা। বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা ও কিছলু এ বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেন। দুজন দুটি থিম নিয়ে লাক্সের বিজ্ঞাপন করেন। এ বিজ্ঞাপন দেখে মার্কিং করেন জাজরা এবং এখান থেকেই এসএমএস পর্ব চলে আসে। এরপর নাটকের কিছু অংশ করানো হবে।

এভাবে বিভিন্ন রাউন্ড শেষে এ ১০ তরুণীর মধ্য থেকে বিজয়ের মুকুট পড়লেন মিম। ফটো ক্যাপশন : ১. এবারের বিজয়ীর মাথায় ক্রাউন পড়িয়ে দিচ্ছেন গতবারের বিজয়ী মম। ২. স্টেজে টপ টেন সুপারস্টার। ৩. ফাইনালের বিচারকবৃন্দরা। ৪. স্টেজে পারফর্ম করছেন (বাম থেকে) কুসুম শিকদার, তিন্নি ও শানু।

৫. টপ ফাইভ স্টেজে ওয়েট করছেন। ৬. রাকেশ মোহানের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিচ্ছেন মিম। ৭. মিমকে ছবির কন্ট্রাক্ট দিচ্ছেন হুমায়ুন আহমেদ ও নওশাদ চৌধুরী। ৮.পুরস্কার হাতে তিন বিজয়ী। ৯. অনুষ্ঠান শেষে দর্শকদের একাংশ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।