এক যুগলবন্দীর গপ্পো...
‘কে ক্রাফট’Ñ নদীর ঢেউয়ের মতোই বাংলাদেশের ফ্যাশন ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে নামটি। বাংলা কৃষ্টির সঙ্গে ফ্যাশনের অত্যাবশ্যকীয় মিল ঘটিয়ে বিপ্লব এনেছে দেশীয় এই বুটিক হাউসটি। এখন অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ১৪ বছরের নিজস্ব বর্ণমালার বর্ণিল গল্প।
হ আশরাফুল ইসলাম রানা
শুরুর গল্পটা কেমন? মাস্টার্স পড়–য়া তরুণী শাহনাজ খানের হোম বুটিকের চিন্তা থেকে নিজের ডিজাইনে সাইন্সল্যাবের বাসাতেই প্রথম পোশাকের প্রদর্শনী করেন ’৯৩ সালের মে মাসে। ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় তার এ আয়োজন।
এভাবে বেশ কয়েকটি ঘরোয়া শোর পরে ’৯৫তে একটি ফ্যাশন প্রতিযোগিতাতে পুরুষ বিভাগে ১ম স্থান প্রাপ্তি দেয় এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। স্ত্রীর কাজে উৎসাহিত হয়ে স্বামী খালিদ মাহমুদ খান যোগ দেন তার সঙ্গে। কে ক্রাফটের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার খালিদ মাহমুদ খান জানান, কে ক্রাফটের শুরুর দিকে সমাজের ধারণাটাই ছিল ফ্যাশন বুঝি উচ্চবিত্তের এবং মহিলাদের একান্ত বিষয়। আমরা সেই ট্রেন্ডটাকে ভেঙে ফ্যাশন ভাবনাটাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। চেষ্টা ছিল ব্যতিক্রমী কিছু সৃষ্টির।
খালিদ মাহমুদ খান ফ্যাশন, স্টাইল ও ক্রেজের ব্যাখ্যা দেন এভাবেÑ
স্টাইল সমকালীন হতেও পারে, নাও পারে তবে স্টাইলের শুরু ব্যক্তি থেকে। অবশ্যই জীবনযাপনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবং অন্যের দ্বারা প্রভাবিত। তবে ফ্যাশন হচ্ছে চলতি ধারা যা ডিজাইনাররা ডেভেলপ করেন আর মানুষ তা গ্রহণ করেন আর ক্রেজ-সাময়িক জনপ্রিয়তা। সমাজের একটা অংশ যারা বয়সে তরুণ তাদের দৃষ্টিতে ব্যতিক্রমী কিছু।
কিন্তু দেশের ধ্বংস প্রায় তাঁত শিল্প ও তাঁতিদের সঙ্গে করে ফ্যাশন সেক্টরে কীভাবে কাজ করছে কে ক্রাফট? আড়ং এর পর আমরাই তাঁতের কাপড়ের সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষক। কে ক্রাফট দেশের প্রত্যন্ত ৮টি তাঁত এলাকার তাঁতিদের ডিজাইন সরবরাহ করে, কাপড় বুনিয়ে তবেই পোশাক তৈরি করে থাকে। এতে তাদের আর্থিক সংস্থান হচ্ছে বৈকি। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব ১১ জনের ডিজাইনার টিম রয়েছে প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করতে ও আউটপুট তৈরিতে। পোশাকের ডিজাইন, কাটিং-এ বৈচিত্র্যতা, রঙ, কাপড়ের গুনগতমান রক্ষা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করেছে বলেই ১৪ বছরের দীর্ঘপথ অতিক্রম করেছে কে ক্রাফট।
আপনাদের অর্জনগুলো কী কী মনে করেন? আমরাই প্রথম খাদি কাপড়ের সঙ্গে মিক্সম্যাচ করে দেশীয় বুটিক শিল্পের মধ্যে নতুন ট্রেন্ড সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম। নিজস্ব পৃষ্ঠপোষকতায় ’৯৯তে ইয়াং ডিজাইনার্স অব দ্য মিলেনিয়াম, ২০০৪-এ খাদি উৎসব, ২০০৫-এ হ্যান্ডলুম আর্ট অব বাংলাদেশ, ২০০৬-এ মুক্তিযোদ্ধা কারুশিল্পীদের সংবর্ধনার আয়োজন এবং এই সেক্টরে পরিবর্তনে অগ্রগামি হিসেবে কাজ করা সবই দেশীয় বুটিক শিল্পের জন্য পজেটিভ বলেই আমাদের ধারণা। এ ছাড়াও ডিজাইনার শাহনাজ খান জানান, গত পাঁচ বছর কে ক্রাফট সেরা ফ্যাশন হাউস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বিভিন্ন ফ্যাশন প্রতিযোগিতাগুলোতে। সর্বোপরি আমাদের এই প্রাপ্তি আমাদের বিশাল ক্রেতা গোষ্ঠীর ভালোবাসার কারণেই সম্ভব হয়েছে। দেশে এখন বুটিক ব্যবসাতে আসছেন তো অনেকেই।
কিন্তু বর্তমান বুটিক হাউস সম্পর্কে এই ডিজাইনার দম্পতি মনে করেন, বুটিক হাউসের কাজগুলোতে বৈচিত্র্য এসেছে। তবে মিডিয়ায় প্রচারের প্রভাবে রাতারাতি জনপ্রিয় হাউসে পরিণত হওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে সঠিক বাজার বিপণন জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। এ ব্যবসায় আসার পূর্বে দেশের প্রধান সব ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখে ও পরিসংখ্যান রিভিউয়ের প্রয়োজন রয়েছে। ডিজাইনার শাহনাজ খান মনে করেন, সফল ডিজাইনার হতে হলে অবশ্যই তাকে খুঁত খুঁতে তবে ক্রিয়েটিভ, পরিশ্রমী এবং মার্কেটিং সেন্সের গুণ থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত ওয়ার্ল্ড ফ্যাশনের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে আপডেট করে নিতে হবে।
দুজনেই ডিজাইনার হওয়ার বাড়তি সুবিধে রয়েছে কী? খালিদ মাহমুদ খানের সরল উত্তর দুজনেই একই পেশার হওয়াতে ডিজাইন কনসেপ্ট ডেভেলপ নিয়ে শেয়ার করতে পারি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ডিজাইন পছন্দ নিয়ে মতের অমিল দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজি। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তি জীবন বলে কিছু থাকে না। সন্তানের যতœআত্তিতেও কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটে। তবে এখন আসলে দুজনকেই ম্যানেজমেন্ট সংশ্লিষ্ট কাজে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? বেশি মানুষের কাছে কে ক্রাফটকে পৌঁছে দেওয়া। পোশাকের পাশাপাশি গৃহসজ্জার সামগ্রী, গিফট আইটেমও তৈরিতেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া বর্তমানে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাজারে কে ক্রাফটের পণ্য যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এটা আরো বিস্তৃত আকারে করার ইচ্ছা রয়েছে। এজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।