আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলা উপাখ্যান ১



বাইরে আসতে পারবে খানিকক্ষণের জন্য? খুব সংক্ষিপ্ত একটি ফোন কল। কেন? সান শাইন দেখতে পাও না? বাইরে তাকালাম আমি। সত্যিইতো অক্সফোর্ড রোড ভেসে যাচ্ছে ঝাঁ ঝাঁ রোদে। আর বিলাতে রোদ উঠলে, আমাদের মত রোদের দেশের মানুষের না হোক, যাদের রোদ বেশ আক্রা তারা আনন্দিত হয়ই। লাঞ্চ ব্রেকে? সি ইউ দেন।

অন্য প্রান্ত থেকে কেটে দিল ফোনটা আমার বন্ধু পলা। পলা কাজ করে মেন্টাল ডিপ্রেশন নিয়ে আর আমি কালচারাল স্টাডিজ। প্রায় তিন বছর হয়ে গেল আমরা পরস্পরকে চিনি। এখন বোধ হয় বুঝিও বেশ খানিকটা। আমাদের গবেষণার বিষয়ের মত কাজের জায়গাও ভিন্ন।

পলা কাজ করে স্টপফোর্ড মেডিক্যাল বিল্ডিং-এ আর আমি লাইম গ্রোভ আর্টস বিল্ডিংএ। কাজের সময় এমন সংক্ষিপ্ত ফোন কল আমি প্রায়ই পাই ওর কাছ থেকে। তাই অবাক হলাম না। এ জন্য জিজ্ঞেসও করলাম না কোথায় আমরা দেখা করছি লাঞ্চ ব্রেকে। কারণ স্থানটা এতদিনে আমাদের দুজনেরই মুখস্থ।

মাঝে মাঝে ওকে আমি জিজ্ঞেসও করেছি, তোমার আর আমার বিষয়ের কোন মিল নেই এক রত্তিও, কিন্তু বন্ধুত্ব হল কীভাবে? আমার দিকে কটমট করে তাকায় পলা। ওর চোখ নীলাভ নয়, আবার ঠিক ইটালিয়ানদের মত কালও নয়। চুল ব্লন্ড এবং চোখটাও তেমনি। শোন বালক, ডিপ্রেশনেরও একটা সংস্কৃতি আছে। তা চেনা জগতকে অচেনা করে দেয়।

চেনা মানুষকে অচেনা করে দেয়। আবার সেই সঙ্গে তৈরি করে নতুন এক সংস্কৃতি যেখানে অচেনা হয়ে ওঠে চেনা, যদিও তার বাস্তব কোন ভিত্তি নেই। -তোমার কাছে আমার কোন ভিত্তি আছে? -আছে নিশ্চয়ই। ভিত্তি না থাকলে কোন কিছুই দাঁড়ায় না। না কোন ডিসকোর্স, না কোন সলিড কাঠামো।

আর বন্ডিংই যদি না থাকে তাহলে সম্পর্কটা কিসের? - কিন্তু বন্ডিংটা হয় কীভাবে? - কূটতর্কে যাবে না একেবারে। তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক বন্ধুত্বের, তর্কের নয়। পলা ভুলে যায় আমাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাতই হয়েছিল তর্কের মাধ্যমে। তর্ক করতে করতেই আমাদের পার হয়ে গেছে তিন বছর। য়্যুরোপ সম্পর্কে আমার যে ধারণা তার সবটাই তর্কের ভিত্তিতে অর্জিত।

আমি তখন সবে এসেছি ম্যানচেস্টারে। চিনে উঠতে পারিনি কোন কিছু, বুঝে ওঠা তো বহু দূর। হঠাত করেই একদিন ঢুঁ মারলাম ক্রো-বার-এ। উদ্দেশ্য ক্যাপুচিনো কিনে জানলা দিয়ে ক্যাম্পাস দেখা। তখন অক্টোবরের শুরু।

শীত জাঁকিয়ে বসেনি তেমন। আমার পাশের চেয়ারে মেয়েটি বসেই আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী ভারত থেকে এসেছো? আমি জানালা থেকে চোখ সরিয়ে তাকাই ওর দিকে। কেন? তোমাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে? কেন মনে হচ্ছে? তোমার এ্যাপেয়ারেন্স, তোমার চুল, তোমার স্কিন কালার। ’স্কিন কালার’ শব্দটা ও এমন করে উচ্চারণ করল, আমার কাছে মনে হল তার মধ্যে খানিকটা রেসিয়াল টোন ছিল। তারপর যা হবার তাই।

প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে চলল বিতর্ক। কীভাবে নৃতত্ব হয়ে উঠেছিল একটি কলোনিয়াল ম্যাকানিজম, যাকে কেন্দ্র করে বৃটিশ সাম্রাজ্য শাসন বিস্তার করেছিল, অত্যাচার করেছিল এবং অবদমিত করেছিল। সেদিন আমি বোধ করি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উচ্চস্বরে এবং বেশি আবেগ নিয়ে কথা বলেছিলাম। যখন কথা শেষ করলাম, তখন পলা আমাকে বলল, ক্যান আই হ্যাভ ইয়োর মেইলিং এ্যাড্রেস প্লিজ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।