আমাদের বুদ্ধি আছে তাই আমরা বুদ্ধিমান, এর সাথে আবেগ মিশানোর ফলে আমরা মানুষ।
গত সপ্তাহ :
ভীষন ব্যস্ততার ভিতর কাটছে প্রতিটা দিন। একদিন একটা ক্লাসটেস্ট দিয়ে আসতে না আসতেই পরদিন আরো একটা ক্লাসটেস্ট না হয় এসাইনমেন্ট না হয় সেশনাল ভাইভা কিংবা প্রজেক্টের কাজ। এ চিত্র গত জানুয়ারী থেকে শুরু করে প্রায় প্রতি সপ্তাহেরই। বিনোদনের উপায় ক্ষণিক বিরতিতে শোনা গান বা কিছুটা সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা।
উইকএন্ড ছাড়া অবসর নেই কারো। মাঝে মাঝে মনে হয় লাইফটা হেল হয়ে গেল রে। এ বছর টা এরকম কেন ?
আগে প্রতি সপ্তাহেই এই দল ওই দল এর কোন একটা আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ বা আভ্যন্তরীন নানা রকম দাবী দাওয়া সংক্রান্ত কারনে ফ্রি কিছু ছুটি বরাদ্দ থাকতো আমাদের। ক্যালেন্ডারে এই ছুটিগুলো দেখা যায় না আরকি। একবার তো দেখা গেছে প্রতি শনিবার কোন না কোন কারণে বন্ধ পরে যাচ্ছে।
আমরা তো মহাখুশি সাত দিন এর সপ্তাহে টানা তিন দিন ই ছুটি। শনিবার যে সেশনালটা থাকতো সেটার অধিকাংশ ক্লাসই হয়নি এবং টার্ম এর শেষ দিকে দেখা গেল দিনে তিনটা করে এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে অবস্থা কেরোসিন।
জরুরী অবস্থা ঘোষনার পর এইসব ধানাই পানাই বন্ধ। চুপচাপ ক্লাস করে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। আগে উইকএন্ডের মর্যাদাটা বুঝতাম না, এখন বুঝি উইকএন্ড কেন এত আদরনীয় !! মরুভুমিতে হঠাৎ বৃষ্টি মিডটার্ম ভ্যাকেশনটাতো দেখতে না দেখতেই শেষ হয়ে গেল।
বস্তুত এই আঠার মাসে বছরের লাইফ এ এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম আমরা যে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কিছুটা অনাহুত, বুকের উপর চেপে বসা জগদ্দল পাথরের মতই লাগছিল।
এই সপ্তাহ :
অখন্ড অবসর। ঘুমাতে যাই ভোরবেলা। ঘুম থেকে উঠি বারটায়। মাঝে মাঝে এখান সেখান ঘুরাঘুরি।
আড্ডা। মনে হয় যেন লাইফটা আবার জীবনে পরিনত হয়েছে !!!
তাই কি ? জীবন আসলে কোনটা ?
অব্যবস্থা আর দূর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে প্রবেশ করেছে, এটা থেকে কিভাবে বের হওয়া সম্ভব কেউই একমত হতে পারছেন না। স্বাধীনতার পর ৩৫ বছরেরও বেশি পার হয়ে গেল, ভাবতে অবাক লাগে একজন নেতা আমরা এখনো পেলাম না যার সুযোগ্য নেতৃত্বে ... (কত স্বপ্নই তো আছে আমাদের)
এখনও আমাদের দাবী আদায়ের উপায় হল হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট। একদল ক্ষমতায় থাকলে আর এক দল এর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এটার প্রতিশোধ নেওয়া হয় ক্ষমতা পরিবর্তনের পর।
স্বজনপ্রীতির কারনে সরকারী প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই লোকসানের অংক গুনতে গিয়ে ইন্টিজার রেঞ্জ ওভারফ্লো !! দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারনে সাধারন মানুষের ত্রাহি অবস্থা। কয়লা, গ্যাস -- চুরি হয়ে যায় দেশের সম্পদ। এই চুরির ব্যাখ্যা আবার যে যার মত বানিয়ে ফেলে।
আমাদের শক্তি হল দলাদলি। দেশের ভিতরে অফিস-আদালত-ইউনিভার্সিটি আর দেশের বাইরে যার যার কর্মক্ষেত্রে যেখানেই যাই দু'দলে বিভক্ত না হলে আমাদের অন্ন হারাম!!
ভালই।
জগৎটাইতো দুই এর খেলা। নারী-পুরুষ, নর্থ পোল-সাউথ পোল, ডেমোক্রাট-রিপাব্লিকান, কণা-প্রতিকণা, প্লাস-মাইনাস তো থাকবেই। পরমাণুর একেবারে ভিতরে ইলেকট্রন, সেখানেও পজিটিভ স্পিন, নেগেটিভ স্পিন, আর আমাদের দলাদলি না করলে হবে কিভাবে ?
আমাদের অধ্যাপনা, চাকরি, ছাত্রত্ব সবকিছুই এত বেশি নীল-সাদা গনতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল যে পনের বছরের দুর্নীতি আমাদের যে ক্ষতি করে তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করে আট মাসের ধোয়ামোছা। কেনা বুদ্ধিজীবি তো আছেই দেশে। অক্ষরের মাধুর্যে আর বাকপটুতায় আমাদের দেশে সত্য আর মিথ্যা যে যার যা মত বানিয়ে নিতে পারে।
সাপোর্টার তো আছেই। সাহিত্যিক ভাইদের জন্য কবিগুরুই তো বলে গেছেন, “ঘটে যাহা সত্যি নহে / সেই সত্য যাহা রচিবে তুমি...”। একেবারে সত্য কেও কিছুটা গালি, কিছুটা অলংকার আর কিছু আমজনতার গায়ে আগুন ধরানো আবেগসমৃদ্ধ কথা দিয়ে পরিবর্তন করতে আমাদের গায়ে লাগে না।
তাহলে উপায় কি ? আমাদের দেশের সচেতন ছাত্রসমাজ আছে না ? এই ছাত্ররাই তো দেশের ভবিষ্যত। পঁয়ত্রিশ বছরে এই ছাত্রদের থেকেই কত নেতা বেরিয়ে এল, সবাই মিলে দেশটাকে একেবারে উদ্ধার করে ফেললো।
আরে দূর্নীতিতে আমাদের দেশ চ্যাম্পিয়ন হবে কেন ? এ নিশ্চই ষড়যন্ত্র। আমাদের আসলে কোন দুর্নীতি নেই। যারা বলছে তারাই দূর্নীতিবাজ।
সচেতন ছাত্রসমাজের মুখোশ লাগিয়ে বড় বড় কথা বলা খুব সহজ। সারাদেশে এত ছাত্র, যে যখন যেটা বলবে সেটাই সঠিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে “ক্যাডারমনি” দের সাধ-আহ্লাদের মূল্যা দিতে হয় সাধারন ছাত্রদেরকে। পুলিশের নির্যাতনে শামীম রেজা রুবেলরা মারা গেলে আমাদের ছাত্র সমাজের সময় হয় না কিছু করার। জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষনের সেঞ্চুরী হলেও সচেতন ছাত্র সমাজের কিছু আসে যায় না। ক্যাডারগ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় সনি রা, তাতেও সারা দেশে খুব একটা কিছু হয় না, কারন তাতে কোন সংগঠনেরি কিছু আসে যায় না, কোন দলেরই কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নেই তাতে। ক্যাডারপ্রথা বন্ধের আন্দোলনটা কেউ করলো না।
কিছু স্বার্থলোভী তথাকথিত ছাত্র, তথাকথিত শিক্ষক, তথাকথিত নেতা এদের কারনে হুমকির সম্মুখিন আজ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হুমকির সম্মুখিন গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। পয়ত্রিশ বছরে আমরা এখনো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুগপোযোগী করতে পারিনি। এখনও শিক্ষা নিয়ে চলে নানা রকম নিরীক্ষা। দেশে মেধাবীর যোগ্যতার মুল্যায়ন হয় না।
দেশের দরিদ্র মানুষের করের টাকার শিক্ষা নেওয়া মেধাবীদের কর্মক্ষেত্র খুঁজে নিতে হয় দেশের বাইরে। আর ওই যে ছাত্রনেতা, ক্যাডার সাত ভুতে লুটে খায় দেশের সম্পদ।
আর কথা বাড়াব না। যদিও নৌকা ঠেলে দিয়ে বেহাই কে “আজ থেকে গেলেই হত” বলা হয়ে গেল। কথা তো অনেক বাড়িয়েই ফেললাম।
নিজের পড়ার কাহিনী দিয়ে শুরু করে ফাকতালে দেশটা উদ্ধার করার ডাক ও দিয়ে দিলাম। নতুন কথা খুব একটা বলিনি। বলব কি ভাবে। কথা সম্ভবত বলা হয়ে গেছে। এত বুদ্ধিজীবি, এত বই, এত বিবৃতি, এত ব্লগ, এত সাইট, এত চ্যানেল, এত সংবাদপত্র সবাই বলে ফেলেছে।
তাও কেন জানি কাজ হচ্ছে না খুব একটা।
একই বিতর্কে ঘুরছি আমরা সবাই।
একজন কান্ডারী আদৌ কি পাবো আমরা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।