ব্লগের আমি ব্লগের তুমি ব্লগ দিয়ে যায় চেনা
দুঃসংবাদের বাহক হতে ভালো লাগে না।
মাত্র গতরাতে তারাপদ রায়ের একটি কবিতা পড়ছিলাম "দেশ"-এর ২ অগাস্ট, ২০০৭ সংখ্যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খবর এলো, কবি আর নেই, চলে গেছেন।
শক্তি-সুনীলদের সমসাময়িক তারাপদ রায় পঞ্চাশ-ষাট দশকের প্রভাবশালী সাহিত্যের কাগজ "কৃত্তিবাস"-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন শুরু থেকে। এমনই সেই সম্পৃক্তি যে একমাত্র পুত্রের নামও রেখেছেন কৃত্তিবাস।
তাঁর একটি বইয়ের নাম "কোথায় চলেছেন, তারাপদবাবু?" তাই তো, কোথায় চললেন কবি?
আমার কাছে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলির একটি মনে হয় "দারিদ্র্যরেখা" নামের কবিতাটি। আশির দশকের শুরুর দিকে "দেশ" পত্রিকায় বেরিয়েছিলো। তখনো ঢাকায় জেরক্স খুব সহজলভ্য ছিলো না। মনে আছে, এই কবিতাটির অন্তত পঞ্চাশটি জেরক্স কপি বন্ধু ও পরিচিতদের মধ্যে বিতরণ করেছিলাম।
যদি সংগ্রহ করতে পারি, এখানে তুলে দেবো।
কে ভুলবে "আনন্দমেলা"-য় তাঁর "ডোডো-তাতাই পালাকাহিনী"? "দেশ"-এর পাতায় ধারাবাহিক রম্য "কাণ্ডজ্ঞান", "জ্ঞানগম্যি", "বিদ্যাবুদ্ধি" ইত্যাদি?
তাঁর জন্মস্থান ও আদি নিবাস ছিলো টাঙ্গাইলে। ৪৭-এ দেশভাগের পর কলকাতা। কিন্তু তাঁর গদ্যে-পদ্যে সর্বত্র টাঙ্গাইল ঘুরেফিরে এসেছে আজীবন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একাধিকবার এসেছেন পিতৃভূমিতে। এমনকি, সর্বশেষ কবিতা যেটি পড়ছিলাম গতরাতে সেখানেও নাম উল্লেখ না থাকলেও টাঙ্গাইলের কথাই লিখেছেন বলে অনুমান করা যায়।
কবিতাটি এখানে তুলে দিই।
************************************
পুরনো শহরতলিতে // তারাপদ রায়
আবার ফিরে এলাম,
আর একটু খোঁজ নিয়ে এলেই ভাল হত।
বাড়ির সামনের দিকে
একটা কয়লার দোকান ছিল
কাঠ, কয়লা, কেরোসিন - খুচরো কেনা বেচা,
কেউ চিনতে পারল না
দু'জন রাস্তার লোক বলল,
'এদিকে কোনো কয়লার দোকান নেই
গলির এপারে রাধানাথ দত্তের গ্যাসের দোকান
সেখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন। '
মনে আছে কয়লার দোকানের পিছনে ছিল বড় উঠোন,
কয়েকটা আম কাঁঠাল গাছ, ভাঙা বারান্দা, ঘর দোর।
এখন তো কিছুই নেই,
শুধু একটা নেমপ্লেট, 'নাগরিক'।
চারতলা বাড়ি, ষোলটা ফ্ল্যাট,
এরই মধ্যে কোনওটায় আমি ফিরে এসেছি।
কিন্তু কয়তলায়, কাদের ফ্ল্যাট?
স্বর্গীয় রূপকবাবুর পদবিটা যেন কী ছিল,
তাঁদের নতুন বাসাবাড়িতে এখন কে থাকে -
কোনও খোঁজখবর রাখি না,
শুধু মনে আছে তাঁর ভাইঝি টুলটুলি।
না। সেই বাড়িটা জগৎসংসারে আর নেই,
টুলটুলিকে কেউ চেনে না।
পুরনো শহরতলির নতুন পাড়ায় বোকার মতো ঘুরি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।