পারভেজ
দ্বিতীয় রাতের কারফিউয়ে রাজপথ ছিল একেবারেই ফাঁকা। এমনকি প্রধান প্রধান সড়ক সংলগ্ন অলিগলিতে কৌতূহলী লোকদের দেখা যায়নি। যেমনটি ছিল বুধবার কারফিউয়ের মধ্যরাত অবধি। প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালের সামনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও তাদের টহল দিতে দেখা গেছে। তিন ঘন্টা বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় দ্বিতীয় রাতের কারফিউ শুরু হওয়ার পর রাত বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি এলাকা ক্রমশঃ নিরব হতে থাকে।
জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে প্রবেশের সময় বিদেশগামী যাত্রীদের জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হয়। অপরদিকে কারফিউয়ের সময় তিনটি জায়গার চিত্র ছিল ভিন্ন রকমের। গাবতলী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে অনেক যাত্রীকে রাত কাটাতে হয়েছে। পরিবার নিয়ে বাইরে থেকে আসা যাত্রীরাই টার্মিনালে ছিলেন। একই চিত্র দেখা গেছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
প্রথম রাতের মত দ্বিতীয় রাতেও রাজপথে ছুটে চলেছে নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলো খিলগাঁও ফ্লাইওভার হয়ে রামপুরা দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় চলাচল করেছে। দ্বিতীয় রাতে কারফিউ ভঙ্গের অভিযোগে রাজধানীতে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারফিউ থামিয়ে দিয়েছে রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরের ব্যস্ততা। বাইরে থেকে বাসে চড়ে যারা রাজধানীতে এসে পৌঁছান তাদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বাসগুলো শিবচর ও দৌলতদিয়া ফেরীঘাট ব্যবহার করে রাজধানীতে পৌঁছায়। সায়েদাবাদ ও গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে যোগাযোগ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হচ্ছে ফেরীঘাট কেন্দ্রিক যানজট। খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা রাজধানীমুখী বাসগুলোর যাত্রীরা বিড়ম্বনার কবলে পড়েন। শিবচর ও দৌলতদিয়া ফেরীঘাটে যাত্রীবাহী বাসের পাশপাশি লম্বা লাইন ছিল পণ্যবাহী ট্রাকের।
বাস চালকরা জানায়, ফেরীঘাটের যানজটের জন্য তারা কারফিউ শুরু হওয়ার আগে রাজধানীতে পৌঁছাতে পারেনি।
দৌলতদিয়া থেকে ফেরী ছাড়ার পর পাটুরিয়া ঘাটে যখন পৌঁছে ঘড়িতে সময় তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। মাত্র ত্রিশ মিনিটে গাবতলী টার্মিনালে কোনভাবেই পৌঁছা সম্ভব নয়। রাত আটটা থেকে গাবতলী টার্মিনালে বাসগুলো প্রবেশ করতে শুরু করে। এই অবস্থা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অনেক যাত্রীকে ব্যাগ হাতে দারুস সালাম, টেকনিক্যাল, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর ১ নম্বর সেকশন, মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
তবে কারফিউয়ের মধ্যে হেঁটে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যাত্রীদের বাধা দেয়নি। অন্যদিকে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয় বলে বেশ কিছু যাত্রী রাত কাটান টার্মিনালে। এ ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে । কারফিউ তিন ঘন্টা শিথিলের সময় রাজপথে রিকশা চালকরা ফ্রি স্টাইলে ভাড়া দাবি করে। কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের গলাকটা ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।
কারফিউয়ের দ্বিতীয় রাতে রাজধানীর প্রধান সড়ক সংলগ্ন গলিতে লোকজনের পদচারণা ছিল না। গত বৃহস্পতিবার কারফিউ শিথিল হওয়ার দুই ঘন্টা আগে নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে চক্কর দেয়। এছাড়া পুলিশ হ্যান্ড মাইকে বার বার ঘোষণা করে ‘কারফিউয়ের সময় সবাইকে ঘরের ভিতরে থাকতে হবে। কারফিউ পাস ছাড়া রাস্তায় যাকে দেখা যাবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’। এ ধরনের ঘোষণার পাশপাশি রাত ন’টার পর নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি অলিগলিতে প্রবেশ করলে কারফিউয়ের প্রথম রাতের মত রাস্তায় কারো উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
বিশেষ করে প্রথম রাতে রাস্তার দৃশ্য দেখার জন্যে ছিল কৌতূহলী লোকদের ভীড়। এদিকে দ্বিতীয় রাতে সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়িগুলো নির্বিঘেœ চলাচল করেছে।
জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সামনে কারফিউয়ের প্রথম রাতের মত দ্বিতীয় রাতেও ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিমান বন্দর সড়কের গোল চত্বরের সামনে কারফিউয়ের আওতামুক্ত প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। পাসপোর্ট ও টিকিট দেখার পর বিদেশগামী যাত্রীদের বিমান বন্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে।
প্রথম রাতের মতই দ্বিতীয় রাতে কাওরান বাজার আড়তে কাজ হয়েছে। পুরনো ঢাকার বিভিন্ন থানা এলাকার অলিগলিতে ঘোরাফেরা করার সময় লোকজনকে কানে ধরে উঠবস করিয়ে কারফিউয়ের সময় আর বের হবে না এই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। কারফিউ ভঙ্গের অপরাধে শাহবাগ থানায় তিনজন, ধানমন্ডি, মিরপুর ও শাহআলী থানায় একজন করে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে পুলিশ ৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে। রাতের মতই গতকাল ভোর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত রাজপথ ছিল ফাঁকা।
ভোরেই পুলিশ হ্যান্ড মাইকে কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেয়। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে কারফিউ শিথিলের ঘোষণা প্রচার করা হয়
খবর ইত্তেফাক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।