আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবং সেনাবাহিনী ...



ঢাবিতে সংঘঠিত ঘটনাটি দুঃখজনক, তবে আমার কাছে আশ্চর্যজনক নয়। ইতিপূর্বেও সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক সাধারণ মানুষের সাথে প্রভুসুলভ আচরণ করার ঘটনা আমি নিজ চোখে দেখেছি। এরা আমাদের কী মনে করে? পিপিলিকা, তেলাপোকা কিংবা কেচোঁ? বিগত জোট সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিনহার্ট চলাকালে আমার শহরে সেনা টহল ছিল নিয়মিত। তখন সেনাবাহিনীর আচরণে শহরের তরুণ-যুবারা ছিল অতিষ্ঠ। আমার এক বন্ধুর বাবা তার জন্য বিদেশ থেকে খুব দামি একটি মোবাইল সেট পাঠিয়েছিলেন।

তো আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে এক বিকেলে কলেজ মাঠে বসে গল্প করছিলাম। এ সময় কলেজের পাশ দিয়ে যাবার কালে সেনাবাহিনীর একদল চৌকস দলের নজর পড়ে আমাদের দিকে। সরাসরি চার্জ- ‌‌‌‌"এই ছেলেরা কী কর তোমরা?" ‌" জী আমরা বন্ধুরা গল্প করছি। " সাথে সাথে ধমক " যাও, বাসায় যাও। " আমরা ফিরছিলাম।

হঠাত এক সেনাসদস্যের চোখে পড়ল আমার বন্ধুর হাতে থাকা মোবাইল সেটটির দিকে। তিনি হুংকার ছাড়লেন " এই ছেলে দাঁড়া!" শুরু করলেন তুই-তোকারি। অথচ আমরা সবাই অনার্স লেভেলের স্টুডেন্ট। তড়িত প্রশ্ন- " তুই এই সেট কোথায় পেলি?" বন্ধু জবাব দিল - বাবা পাঠিয়েছে। আবার হুংকার- " তুই স্টুডেন্ট।

এতো দামি জিনিস ব্যবহার করিস কেন? ভাং এটাকে। " আমাদের তো আক্কেলগুড়ুম। বলে কি? আমার বন্ধুরতো চোখ উল্টে যাবার দশা। সে বললো- "আমি ভাংতে পারবো না। এটা আমার খুব সখের জিনিস।

" টাস্। চড়ের শব্দে আমরা সবাই চমকে উঠলাম। ইতিমধ্যে আশেপাশে বেশ লোকজন জড় হয়েছে। সবার সামনেই আমার বন্ধুকে চড় মারলো ওই মহান! সেনাসদস্য। তার চোখে পানি এসে গেল।

আশপাশে দাঁড়িয়ে যারা মজা দেখছিল সবাই আমাদের চিনে, আমরা সবাইকে চিনি। আবার হুংকার " পা দিয়ে মাড়িয়ে ভাং নয়তো তোর পোন্দে দিমু এটা"। এবার আর বন্ধু বাড়াবাড়ি করলো না। বাবার পাঠানো তার সখের সেটটিকে নিজ পায়ে মাড়িয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো করলো। সেটের শোক সে কাটিয়ে উঠেছিল দু'দিনেই।

কিন্তু লোকসম্মুখে তাকে যেভাবে চড় মারা হল তা' সে আজো ভুলতে পারে নি। হয়তো পারবেও না। আত্মসম্মান খুব খারাপ জিনিস। এমন কয়েক শতাধিক ঘটনা তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের শহরে ঘটিয়ে ফেলেছিল। যার অধিকাংশই ছিল সাধারণ মানুষের কাছে অত্যাচারের মতো।

কিছুক্ষণ আগে আমার সেই বন্ধু ঢাকা থেকে ফোন করলো। "দোস্ত দেখেছিস আমাদের গর্বিত সেনা সদস্যদের কীভাবে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করা হলো? উচিত শিক্ষা হয়েছে"। আমিও ভাবি ঠিক তাই। উচিত শিক্ষাই। কিন্তু এভাবে কতোদিন? সেনাবাহিনী দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী।

সর্বোচ্চ সম্মানিত বাহিনীও বটে। সেই সেনাবাহিনী যদি পুলিশের চেয়ে নিম্নতর আচরণ করে তাহলে তাদের ওজনটা যেন আর থাকছে না। দু'বছর আগেও সেনাবাহিনীর গাড়ি কোন রাস্তা দিয়ে গেলে মানুষ হতচকিত হয়ে উঠতো। কিন্তু এখন? উহু! সেনাবাহিনীর প্রতি অনুরোধ। আপনারা নিজেদের সম্মান ও সমীহের স্তরেই রাখুন।

নয়তো দেশের সর্বোচ্চ দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় আপনারা দেশের মানুষের কোন উপকারেই আসতে পারবেন না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।