আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কনভারসেশন উইথ এন এলাইভ ডেথ



স্থানঃ কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন। কালঃ ১৯৯৯/২০০০ সালের কোন এক সময় রাত ৩টা-৪ টার মধ্যে। পাত্রঃ আমি, আমার ( ওই সময়ের ) প্রিয় বন্ধু কুমারান্থান বুলু এবং উনি। আমার একমাত্র বোন জামাই কিছুটা সেলফিস প্রকৃতির এবং ভীতুর ডিম। সংসার জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সিলেটেই আছেন।

এদেশে একটা শ্রেণী আছে যারা নিয়মিত অফিস করে, নামাজ পড়ে, বাজার হাট থেকে শুরু করে সংসারের হাড়ি বাটি পর্যন্ত অত্যন্ত যত্নের সাথে ব্যবহার করে। ইনি এই শ্রেণীর প্রাণী কিনা আমি ঠিক নিশ্চিত না। এরা কোন কিছু হারায় না, নষ্ট করে না, নিজেরা নিজেরা ভাল খায় ভাল চলে। আশে পাশে কেউ ক্ষুধায় মরন পন কষ্ট পেলেও না শোনার ভান করে। এদের বাচ্চারা দামি খেলনা বা ভাল কাপড় আলমারি থেকে নামায় না পাছে কাপড়ে কোন ময়লা বা দাগ লেগে যায়।

এইসব বাচ্চারা মা বাপের খুব নেওটা থাকে। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি একটা সুনির্দিষ্ট নিয়মে, নিজেকে সৎ এবং সজ্জন ভেবে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়ে একটা খুব ভাল হসপিটালে মারা যায়। মৃত্যুর পর এদের নিয়ে আলোচনায় তেমন কোন তথ্য থাকেনা। সুনাম- বদনাম কোনটাই হয়না। দ্রুত মানুষ এদের ভুলে যায়।

খুব সামান্য দুই-একজন আপন মানুষ হয়তো একে নিয়ে মনে মনে ঘৃণা পোষে। এরা হয়তো কখনো তাঁর অবহেলার শিকার হয়েছিল। মানুষ তো এমন যে, সে সব সইতে পারে। আপনের অপমান সহ্য করতে পারেনা। সহ্য করার ক্ষমতাও তাঁর নাই।

আমি জানি এই কাউ আজ রাতের ট্রেনে কুমিল্লা আসবে। সমস্যা হচ্ছে, সিলেট কুমিল্লা রুটের এই ট্রেন গুলোর কোন আগা মাথা নাই। যদি কুমিল্লায় পৌছার টাইম রাত ৩টা হয় সেটি আগে ভাগে পৌছলেও দেখা যায় সকাল ৪ টা ৩০ মি হয়ে গেছে। তুমি কিন্তু স্টেশনে থাকবা, সিজন ভালো না। জানো তো নাকি জাননা? আমি বললাম - জানি।

না জানার কি আছে? আমি থাকব টাইমলি। এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? ভয় পাওয়ার কি আছে মানি............? তুমি কুমিল্লা সম্পর্কে জানো টা কি........................? আমি একজন ভার্সিটির শিক্ষক......... বেং বেং বেং বেং............ উনি কথা বলতে বলতে সম্ভবত হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। এর ফাঁকে কোন মতে বললাম, ভাই আমি আছি থাকব। লাইন কেটে দিলাম। স্টেশনে ফোন করে জানলাম ট্রেনের সময় রাত ২ টা ৫০ মিঃ।

একটু আগে ভাগেই বাসা থেকে বের হলাম। সাথে সার্বক্ষণিক সঙ্গী বুলু ( সে নিজেকে কুমারান্থান বুলু বলে পরিচয় দিত। বুলুর বিবরন দিব অন্য কোন দিন অন্য কোন খানে। ) তখনকার সময়টা ছিল সম্ভবত নিজেকে শুধুমাত্র নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবার সময়। খাঁদি কাপড়ের ভারি লুঙ্গি সাথে সুন্দর গেঞ্জি আর পায়ে দামি চামড়ার চটি।

বা হাঁতে মোবাইল আর ডান হাঁতে সবসময় সিগ্রেট জ্বলছে। এমনও হয়েছে পুরো সিগ্রেটে হয়তো তিন বা চারটা টান দিয়ে ফেলে দিয়েছি। একটা নতুন সিগ্রেট ধরিয়ে তিন/চারটা টান দিয়ে ফেলে দেয়ার মজাই আলাদা। আপনার আশ পাশের লোকেরা অবাক চোখে কিছুটা খেদ নিয়ে তাকাবে যেন বলতে চায় - এতো দামি জিনিসটা এভাবে ফেলে দিলেন? লুঙ্গি পরার বিষয়টা ছিল সম্ভবত নিজেকে একই সাথে অরডিনারি, লোকাল এবং ভেরী স্পেশাল হিসেবে শো করা। যখনি সিগ্রেট খেতে ইচ্ছে করবে আপনি শুধু বন্ধুর দিকে তাকাবেন।

সে তৎক্ষণাৎ একটা ধরিয়ে আপনার হাঁতে তুলে দিবে। একটা লম্বা টান দিয়ে আপনি পুরো বিষয়টা ভুলে যাবেন। ওটা আপনার হাতেই পুড়তে পুড়তে শেষ হবে। পুরো বিষয়টার সাথেই জড়িয়ে আছে তখনকার সময়, প্রেক্ষাপট, স্টাইল, বয়স ও অর্থনৈতিক অবস্থা। স্টেশনে পৌঁছলাম ২টা বিশে।

প্ল্যাট ফরমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষের আসা যাওয়া দেখছি। রাত ২ টা থেকে ৪ টার মধ্যে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনে অনেক গুলো ট্রেন আসা যাওয়া করে। ঢাকা ও চট্রগ্রাম মুখি তূর্ণা আজ কাকতালীয় ভাবে কুমিল্লা ষ্টেশনে একে অন্যেকে অতিক্রম করল। মুহূর্তেই স্টেশন গমগম করে উঠল ঠাঁসাঠাসি মানুষ, কুলি, পান বিড়ি সিগ্রেট আর কেক খান পানি খান ওলাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে। এই গুলো ভি আই পি ট্রেন।

মানুষ উঠা নামা শেষ করার আগেই আবার চলতে শুরু করে। ভিআইপিদের কাজ কারবার। এইসব বালেরা সর্বচ্চ ৫ মিনিট স্টেশনটাকে গরম রেখে চলে যায়। হঠাৎ যেমন পুরো এলাকা গমগম করে উঠেছিল হঠাৎই আবার সুনসান হয়ে গেল। ঘড়িতে তখন ৩ টা বেজে ১৫ মিনিট পার হয়ে গেছে।

মাইক বেজে উঠল, ‘ সম্মানিত যাত্রী সাধারনের মনোযোগ আকর্ষণ করছি............ সম্মানিত যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি..................... আমি আশান্বিত হয়ে উঠলাম। নিশ্চয়ই এখন আমাদের ট্রেন আসার ঘোষণা হবে। ‘ চট্রগ্রামগামী ঢাকা মেল কিছুক্ষনের মধ্যে ২ নাম্বার প্ল্যাট ফরমে এসে........................’ আমি যে উদয়ন এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি সে ট্রেনের নাম নিশানার আওয়াজ পর্যন্ত পাচ্ছিনা। ঢাকা মেল ২ নাম্বারে ২ মিনিট দাঁড়িয়ে হেলে দুলে চলে যাচ্ছে। আমি সে দৃশ্য দেখছি।

শেষ বগিটা পার হবার সাথে সাথে আমার চোখ পড়ল একটা বস্তার উপর। বেশ দুরে দুই লাইনের মাঝখানে পড়ে আছে। তখন শুধু শাড়ি-ই ইন্ডিয়া থেকে চোরাই পথে আসত। বস্তার মুখ লাল কালোর একটা সম্মিলনী রঙ ধারন করেছে। আমার আর কোন সন্দেহ রইল না, এক বস্তা শাড়ি পেয়ে গেছি।

অনেক তাকার ধান্দা হবে। তবে সর্ব প্রথমে আমাকেই বস্তাটার মালিক হতে হবে। এইসব অলিখিত নিয়ম। গণিমতের মাল, যে পায় তাঁর। আমি ঝড়ের বেগে বস্তার সামনে উপস্থিত হলাম।

বুলু বিষয় টা বুঝতে আন্দাজ ২৫-৩০ সেকেন্ড দেরি করে ফেলেছে। আমি প্রায় ধরে ফেলেছি ঠিক এমন সময় বস্তাটা জোরে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। - ভাই, একটু পানি দেবেন? - ও আচ্ছা আচ্ছা। বিষয় টা তাহলে এই। আপনি তো দেখি দুই টুকরা ( পেটের ঠিক মাঝখান দিয়ে ট্রেনের চাকা গেছে।

নিচের অংশের কোন হদিস নাই। উপরের অংশ একদম ভাল মানে আন টাচড ) - একটু পানি দেন না ভাই ( এবার মিনতি ) - সম্ভব না। আপনে বরং নিজের নাম নিবাস বলেন। দয়া হইলে লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নিব ইনশাল্লাহ। - পা......নি.........পা.........নি।

- বুঝছি বুঝছি আপনি কোন সোজা আদমি না। আলোচনা সমাপ্ত। বাই বাই টাটা বলে আমি বুলুর অচেতন দেহটা নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। ১২। ০৯।

১৩ইং

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।