‘স্যার স্যার, খবির সাহেব তো চইল্যা আসছেন। উনি জিগাইতাছেন বিরোধীদলের আকমল মিয়া আসছেন কি না। সময় তো আর বেশি বাকি নাই। রাইত ১১ বাজতে আর মাত্র ৫ মিনিট। ’ একটানা কথাগুলো বলে গেল গফুর মিয়া।
‘শোন, খবির সাহেবকে কখনওই বলা যাবে না যে আকমল মিয়া এখনও আসেন নাই। এরা রাজনৈতিক নেতা। এরা সবসময়ই সবার পরে আসতে পছন্দ করে। তুই খবির সাহেবকে বল আকমল সাহেব অনেক আগে এসেই বসে আছেন স্টুডিওতে। ’ আমি বেশ শান্ত হয়ে গুছিয়ে বুঝিয়ে বললাম গফুরকে।
আমার এই একটাই গুণ। অনেক জটিল কথাও বেশ গুছিয়ে সাজিয়ে শান্ত হয়ে বলতে পারি। আমি দেখতে শুনতেও খুব একটা খারাপ নই। আমাকে নাকি দেখলেই মনে হয় আমি একজন সৎ মানুষ। তার জন্যই মিডিয়া আমাকে পছন্দ করে নিল।
আমি এখন নামকরা টিভি চ্যানেল ‘এক্স ওয়াই জেড’ এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান রাতের টক শো’র উপস্থাপক।
কি সর্বনাশ, রাত ১১ টা তো বাজে। আকমল মিয়া তো এখনও আসলেন না। ফোনটাও বিজি। বোধহয় রাস্তায় আছেন।
কিন্তু সময় মত না আসলে তো মুসকিল।
যাক গে, গফুর, তুই খবির সাহেবকে নিয়ে আয়। তাকে নিয়েই অনুষ্ঠান শুরু করে দেই। আজকাল সময় মেইনটেইন না করলে মালিক গালি দেয়।
এই খবির সাহেবকে দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে।
বিরক্ত বিস্তৃত হয়ে মুখ, জিহ্বা ছাড়িয়ে পেট পর্যন্ত গুলিয়ে ওঠে। বমি বমি লাগে। তার চেহারাটাই আমার সহ্য হয় না। গালে একটা বিশ্রী কাটা দাগ। রাস্তা-ঘাটে মানুষের মাইর খেয়ে বোধহয় অমনটা হয়েছে।
তাকে অপছন্দ করার আমার একশো একটা কারণ আছে। তার মুখে তো কথার ঝুড়ি না, তার মুখে থুতুর ঝুড়ি। একটা তিন অক্ষরের পূর্ণাঙ্গ শব্দ উচ্চারণ করতে তার মুখ দিয়ে দু-তিন ফোঁটা থুতু বের হয় বুলেটের মত বেগ নিয়ে। একবার তার সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে আমার তো জঘন্য অবস্থা। বাসায় এসে তিন বার গোসল করেছিলাম।
বউ বলে, কি গো, কোন্ ডোবায় ডুবে এলে?
সত্যিই, সাংবাদিকতা করা আর নোংরা ডোবায় ডুব দেয়া একই কথা। যত সব চোর বাটপারদের সাথে কারবার আমাদের।
আজ অবশ্য খবির সাহেব কে একেবারেই অন্যরকম লাগছে। বেশ সুন্দর সাদা রঙ্গের একটি মার্জিত শার্ট পড়ে এসেছেন। কালো প্যান্ট।
কালো স্যান্ডেল। লোকটার রুচিজ্ঞান নিয়ে আমার বরাবরই ব্যাপক সন্দেহ আছে। একবার এক কাজে তার বাসায় গেলাম। প্রথমে আমাকে আপ্যায়ন করলেন পানি দিয়ে। এরপর দিলেন দুটো নোনতা বিস্কুট।
তারপর একটি ডিম পোজ্। আমি বিস্কুট মুখে দেব, এমনি সময় খেকিয়ে উঠলেন খবির সাহেব। বললেন, খালি বিস্কুট খাচ্ছো কেন, ডিমের কুসুমের সাথে বিস্কুটটা মাখিয়ে নাও, দেখবে কি চমৎকার লাগে খেতে।
কিভাবে যে খেলাম সেদিন বিস্কুটগুলো। তার বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে লেবুর রসের শরবত খেলাম।
তবুও জিহ্বার বিস্বাদ যায় না। পরে দুটো আপেল, দুটো কমলা রাস্তায় দাঁড়িয়েই খেয়ে নিলাম। তারপর মনে হল, ভেতরটা একটু ভালো লাগছে।
সেদিন থেকেই লোকটার কিছুই আমার ভালো লাগে না। তবে আজ তিনি একেবারেই অন্যরকম।
ক্যামন যেন থতমত খেয়ে গেলেন আলোচনার টেবিলের সামনে আসার সাথে সাথেই। মনে হচ্ছে, যেন জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে এলেন।
ক্যামেরা তাক করা আছে আমাদের দিকে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ আমার কানে কাছে এসে খবির সাহেব বললেন, কি ভায়া, আকমল মিয়া কই।
শুনলাম উনি নাকি আগেই আসছেন?
আমার কানের পুরোটা আর গালের অর্ধেক থুতুতে ভরে গেল। ইচ্ছে হল, সপাং করে লোকটার গালে চর বসিয়ে দেই। মানুষের জীবনে তো কত ইচ্ছাই পূরণ হয় না। আমি জানতাম, আমার এ ইচ্ছাটাও পূরণ হবার নয়।
খুব মার্জিত ভাবে বললাম, স্যার, উনি টয়লেটে গ্যাছেন।
আমরা শুরু করি। উনি এক্ষুণই চলে আসবেন।
খবির সাহেব কফির মগটার দিকে হাত বাড়ালেন।
আমি শুরু করে দিলাম, ‘আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আজকের রাতের টক শো’র বিশেষ আয়োজনে। আমাদের সাথে আছেন দেশের প্রধান বিরোধীদলের জনপ্রিয় নেতা জনাব খবির উদ্দিন(খবির সাহেব মাথা নামিয়ে সম্মতি জানালেন)।
আমাদের মাঝে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হবে সরকারদলীয় পক্ষের জনপ্রিয় নেতা জনাব আকমল মিয়া।
আজ আমরা এই মুহূর্তে দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। যে বিষয়টি প্রতিদিন আলোচিত হয় এদেশের মাঠে-ঘাটে-নদীতে-বন্দরে। এমনকি জলের তলাতেও এ নিয়ে আলোচনা শোনা যায়।
আমাদের আজকের আলোচনায় বিষয়: ইঁদুরের পঞ্চম পা কবে গজাবে ?
এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে।
দেশবাসী আতঙ্কিত। সাম্প্রতিক সময়ে সংশোধিত ইঁদুর সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী, ইঁদুরের পঞ্চম পা কোনদিনও গজাবে না। কিন্তু বিরোধীদল এ সংশোধনীর বিরোধিতা করে আসছে শুরু থেকেই। তাদের দাবী, ইঁদুরের পঞ্চম পা গজাতেই হবে। তা না হলে আরও ঘন ঘন হরতাল দেয়া হবে।
দেশ অচল করে দেয়া হবে।
আসন্ন এক মহাসঙ্কটের মুখোমুখি দেশ। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় কি? সে নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
আমি আনন্দের সাথে জানাতে চাই, এইমাত্র আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হলেন সরকার দলীয় পক্ষের জনপ্রিয় নেতা জনাব আকমল মিয়া। (ইয়া বড় একটা ভুড়ি নিয়ে সদম্ভে বসে হাসলেন আকমল মিয়া।
ভুড়িটা যে চুরির টাকায় তৈরী, বোঝাই যায়। )
আমি প্রথমেই বিরোধীদলের নেতা খবির সাহেবের কাছে জানতে চাই, এ সঙ্কট সম্পর্কে। ’
খবির সাহেব একটু একটু করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছেন আর আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন। গলাটা খ্যাক খ্যাক করে বলে উঠলেন, ‘দেখুন, সঙ্কট সম্পর্কে বলতে গেলেই বলতে হয় সরকার দলীয় একরোখামো আর দুর্নীতির কথা।
একটা সময় ছিল, ইঁদুরের পঞ্চম পা গজানো শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। দেশবাসী কায়মনোবাক্যে চাইছিলেন, ইঁদুরের পঞ্চম পা গজাক। কিন্তু আমাদের সরকার, দেশবাসীর কথা ভুলে যেয়ে, তাদের চাহিদাকে প্রাধান্য না দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে ফেললেন, ইঁদুরের পঞ্চম পা হওয়াটাকে থামিয়ে দিলেন।
আমরা সরকারকে বার বার বলেছি। আমরা প্রয়োজনে আলোচনায় বসেতে প্রস্তুত।
অন্তত একটি সর্বদলগ্রহণযোগ্য খন্ডকালীন সরকার তৈরী করে হলেও এ সমস্যার সমাধান টানুন। নইলে সংকট অবশ্যম্ভাবী। ’
আমি বেশ নিরাশ হয়ে তাকালাম আকমল মিয়ার দিকে। দেখলাম, তিনি রাগে জ্বলজ্বল করছেন।
বললাম, ‘জনাব আকমল মিয়া, এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?’
আকমল মিয়ে বলতে লাগলেন,‘দেখুন, এই সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহারে ছিল ইঁদুরের চারটি পা থাকবে।
কোনভাবেই তার ব্যত্যয় হবে না। আজ কেন বিরোধীদল আরও একটি পা নিয়ে উঠে পড়ে লাগলেন, আমি সেটাই বুঝতে পারছি না।
সংবিধানকে আমরা সকলেই শ্রদ্ধা করি। আমরা সংবিধান থেকে এক চুল পরিমাণও নড়ব না। ’
আমি বললাম,‘তাহলে এ সংকট সমাধানে সরকারের ভূমিকা কি?’
আকমল সাহেব বললেন, ‘আমরা তো অনেকবার আলোচনার কথা বলেছি।
আলোচনার জন্য আমাদের দরজা সবসময়ই খোলা। ইঁদুরের পা গজানো এখন একটি জাতীয় ইস্যু। এ নিয়ে কোন চুদুর বুদুর চলবে না। ’
আমি বললাম, ‘দেখুন স্যার, এখানে আপনাদেরকে দেশবাসী দেখছে। দয়াকরে আপনারা মুখের ভাষাটাকে সংযত রাখবেন।
এমনিতেই দেশবাসী ইঁদুরের পা গজানো নিয়ে দুশ্চিন্তায়। তার উপর আপনারা যদি এমন করেন…। ’
আমার ডানপাশ থেকে খবির সাহেব বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। বললেন, ‘খারাপ কথা আমরা বলি না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা খারাপ কথা বলতে পারি না।
সরকার দলীয় পক্ষ যেন কথাটা মনে রাখে। ’
আমার হয়েছে জ্বালা। নেতাদেরকে ঠিক রাখবো, নাকি খবির সাহেবের মুখের থুতুর গোলা থেকে নিজেকে বাঁচাবো, ঠিক বুঝতে পারছি না। আমার সাদা রুমালটা পকেট থেকে বের করে বাঁ পাশের কান ঢেকে, গাল ঢেকে জড়িয়ে রাখলাম। একটু উদ্ভট দেখাচ্ছিল, কিন্তু কিছু করার ছিল না।
খবির সাহেব দেখে বেশ বিরক্ত হলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। আরও একবার কফির মগে চুমুক দিলেন। বেশ শব্দকরে কফি পান করছেন তিনি।
আমি চাচ্ছিলাম খবির সাহেব যত কম কথা বলেন ততই ভালো।
কিন্তু একটা প্রশ্ন তাকে জিঞ্জাসা না করে পারছিলাম না। আমি বললাম, ‘তো খবির সাহেব, আপনারা ভবিষ্যতে কি করবেন যদি সরকার দল সংবিধান সংশোধন না করে, যদি শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের পঞ্চম পা না গজায়। ’
খবির সাহেব শুরু করলেন। আমি প্রস্তুত হয়ে নিলাম। আমার মুখটাকে একটু আড়ালে রাখতে হবে যে করেই হোক।
আজ বাসায় যেয়ে তিনবার গোসল করতে পারব না। আমার ঠান্ডা লেগেছে।
‘দেখুন, ইঁদুরের পঞ্চম পা গজাবেই। সে যেভাবেই হোক। প্রয়োজনে রাজপথে কঠোর আন্দোলন হবে, হরতাল হবে, অবরোধ হবে।
প্রয়োজনে দেশের সকল ইঁদুরকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। ইঁদুর সমাজ আজ অনেক বেশি সচেতন তাঁদের পঞ্চম পা গজানোর ব্যাপারে। আমি বেশ কয়েকজন ইঁদুরের সাথে কথাও বলেছি। তাঁরা বলেছেন যে, তাঁরা আমাদের সাথে আছেন। যে কোন মূল্যেই তাঁরা তাঁদের পঞ্চম পা চান।
আলোচনার জন্য আমরা সবসময়ই প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের ইঁদুরদের উপর অত্যাচার চালিয়ে, তাঁদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে, তাঁদের হত্যা করে সরকার আজ স্বেচ্ছাচারিতা কায়েম করছে।
একদিকে তারা আমাদের ইঁদুরদের নির্বিচারে হত্যা করছে, অত্যাচার চালাচ্ছে। অন্যদিকে আলোচনার কথা বলছে। মনে রাখবেন, আমাদের ইঁদুর ভাইদের রক্তের উপর দিয়ে আমরা কখনও আলোচনায় বসব না।
রক্তের প্রতিশোধ প্রয়োজনে রক্ত দিয়েই নেয়া হবে।
পৃথিবী ব্যাপী ইঁদুর সমাজ আজ সরকারপক্ষের অত্যাচার নিয়ে চিন্তিত। এ সমস্যা আজ আন্তর্জাতিক। যদি ভালো চান, তবে অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করুণ। নইলে পরে পালানোর জায়াগা পাবেন না।
’
আমি দেখলাম, টেবিলের সামনের অংশটুকু সাদা সাদা থুতুর ফোটায় ভরে গেছে। কোনকোন থুতু বিন্দু মুক্তার মত জ্বলজ্বল করছে।
বেশ ভদ্রভাবেই আকমল মিয়া শুরু করলেন, ‘দেখেন, গত সপ্তাহে মিত্ররাষ্ট্রের ইঁদুর বিষয়রক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন’। তিনি সার্বিক অবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদের ইঁদুর সমাজের প্রতিনিধিদের সাথেও কথা বলেছেন।
এ নিয়ে আর সন্দেহের কোন অবকাশ আছে বলে মনে হয় না যে আমাদের ইঁদুর সমাজ তাঁদের চারটি পা নিয়ে বেশ শান্তিতে আছে। ’
এবারে উত্তপ্ত খবির উদ্দিন। বললেন, ‘আপনাদের সেসব ইঁদুর তো আপনাদের কোলের উপর শোয়। আপনাদের সাথে রাত কাটায়। সেসব ইঁদুরকে দিয়ে স্বীকারোক্তির ধার এদেশের জনগণ এবং এদেশের ইঁদুর সমাজ ধারে না।
’
আমার এক গালে রুমাল লাগানো। বেশ বুঝলাম, রুমালটা ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। ওপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম আকমল সাহেব রুমাল দিয়ে বেশ বিরক্ত হবার ভঙ্গিতে মুখ মুছছেন। তার মুখেও কি থুতু ছিটিয়ে গেল?
এবারে ক্ষিপ্ত আকমল সাহেবও। বললেন,‘আমাদের ইঁদুর নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলবেন না।
আপনাদের ইঁদুর আপনাদের কোলের উপর শোয়। আমাদের ইঁদুর আপনাদের ইঁদুরের মত চরিত্রহীন নয়’।
ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন খবির উদ্দিন। আমি আসলে এতটা আশা করিনি। খবির সাহেব হাত মুঠ পাকিয়ে মারতে আসছেন আকমল সাহেবকে।
আমি অসহায় উপস্থাপক। আমাকে তো সবকিছু মেইনটেইন করতেই হবে। আমি খবির সাহেবকে থামানোর জন্য তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লাম।
ওদিক থেকে আবার অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আকমল সাহেবও উঠে পড়েছেন। তার চোখ রক্তিম।
হাত মুষ্টিবদ্ধ।
আমি এক ঝলক দেখলাম, দুজনের মুষ্টিবদ্ধ হাত দুদিক থেকে তেড়ে আসছে। তারপর আর চোখে কিছু দেখতে পেলাম না।
আমার ডান কানের কাছে ঢাম্ করে একটা শব্দ হল। আমি তীব্র আঘাতে বসে পড়লাম।
মাথায় ঝিমুনি লেগেছে আমার। তারপর চোখ মেলে তাকালাম। অনুষ্ঠানতো চালাতে হবে। দেখি, তারা দুজন দুজনের জামা-কাপড় টানা-টানি করে ছিড়ছেন। এর মধ্যে খবির সাহেব আকমল সাহেবের গালে মারলেন কষিয়ে এক চর।
আকমল সাহেব ও কম যান না। শরীর-স্বাস্থ্য তারও খারাপ নয়। তিনিও হাত মুঠিয়ে খবির সাহেবকে মারলেন এক ঘুষি।
আমার নির্দেশে পাঁচ-ছয় জন নিরাপত্তারক্ষী এসে ধরে ফেললেন নেতাদ্বয়কে। তাদের ধরে জোর করে বসানো হল চেয়ারে।
তারপর তাদের হাত-পা-কোমর শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা হল চেয়ারের সাথে।
আমার দুপাশে দুটো আহত বাঘ ফুঁসছে। আমার ভয়ও করছে। আমার বামগালে সাদা রুমালটা আবার জড়ালাম (ধস্তাধস্তির সময় পড়ে গিয়েছিল)। ডানগালে ব্যান্ডেজ্ লাগানো হল।
দেখলাম, সময় এখনও আছে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করল যে তারা মারামারি করছে ভাল কথা, কিন্তু তারা আমাকে কেন মারল? আমি তাদের কি ক্ষতি করেছি?
প্রশ্নটা করা মাত্রই খবির সাহেব চেঁচিয় উঠল। বলল,‘তোকে তো আরও বেশি করে মারা দরকার। শয়তান উপস্থাপক। সেই শুরু থেকেই আমার সাথে মিথ্যে কথা বলছিস।
আমি যখন এসেছি তখনও আকমল চোরা আসে নাই। আর তুই আমাকে বলছিস্, আকমল আগেই আসছে ? তরপর, আমার টেবিলে কফির মগ দিয়ে রাখছিস। কিন্তু ওতে তো কফি দিস্ নাই। আমি এতক্ষণ খালি মগে চুমুক দিয়ে কফি খাওয়ার ভান করে গেলাম যেন দর্শক না বোঝে। তোকে আমি ছাড়ব না।
’
আমার ব্যথা আরও বাড়তে লাগল। যদিও অনুষ্ঠানের সময় আরও ২০ মিনিট আছে। আমি বুঝতে পারলাম, আমার চিকিৎসা দরকার। আমি উঠে চলে এলাম। ছিন্ন কাপড়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা দেশের দুই জনপ্রিয় নেতা।
আমার সবস্টিটিউটে আর একজন উপস্থাপনা করতে আসছে ২০ মিনিটের জন্য। ওর পরণে দেখলাম বেশ ভারী জ্যাকেট। মনে হল ওটা লোহা দিয়ে তৈরী। মাথায় হেলমেড। ফুল প্রকেকটেড্।
মনে মনে ভাবলাম, ভুলই হয়ে গ্যাছে। আমার পরিবর্তে আসা আধুনিক উপস্থাপকটি অনেক বেশি বুদ্ধিমান। পরিস্থিতি যত উত্তপ্তই হোক, তার কিছুই হবে না।
ফিরে যাবার সময় শুনলাম, ছিন্ন কাপড়ে বাঁধা অবস্থাতেই নেতাদ্বয় বাক্ যুদ্ধে লেগে গেছেন আবার। ইস্, শুরুতেই যদি নেতাগুলোকে এমনভাবে চেয়ারের সাথে বেঁধে বসানো হত, তাহলে অন্তত আমার মত অসহায় উপস্থাপকের কপালটা পুড়তো না ।
।
(সমাপ্ত)
(এই লেখায় উত্থাপিত সকল ব্যক্তি,বস্তু ও ঘটনা নিতান্তই কাল্পনিক। জীবিত অথবা মৃত কোন ব্যক্তি, অতীত অথবা বর্তমানের কোন প্রতিষ্ঠান বা ঘটনার সাথে কাকতালীয়ভাবে মিলে গেলে লেখক কোনভাবেই দায়ী নন। )
ই-মেইল:
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।