যা বুঝি, যা দেখি, যা শুনি এবং যা বলতে চাই
বছরের শুরুতেই বুঝা গিয়েছিল এ বছর বন্যা -বছর। বড় একটা বন্যার আশংকা তখন থেকেই। ৮-১০ বছর পর পর বড় বন্যা হয় বাংলাদেশে এখন। ১৯৮৮ এর পর ১৯৯৮ এ বড় বন্যা হয়ে গেছে। আরেকটা বড় বন্যা হওয়ার প্রাকৃতিক চক্র অপেক্ষায় ছিল।
বন্যা এমন বছর আসলো যে বছর ক্ষমতায় অপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার। সরকারের অবস্থা লেজেগোবরে। বিরাট সব প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসা সরকার এখন খুঁজছে এক্সিট রুট। রেহমান সোবহান তার লেখায় এর মাঝেই দেখিয়ে দিচ্ছেন প্রস্থানের পথ।
এত দ্রুত বিদায়ের কথা কেন? শুরুর তথ্যটা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা স্বয়ং।
তিনি অবশ্য দিয়েছিলেন এসওএস ম্যাসেজ। সেইভ আওয়ার সোলস। তিনি বলেছেন, এই সরকারকে বাঁচিয়ে রাখা জাতির দায়িত্ব। কিন্তু তার এই কথায় অন্য এক সত্য বের হয়ে আসে। নানা কৌশল করেও টিকে থাকতে পারছে না সরকার।
কেন পারছে না?
সরকারের সদস্যরাই মনে করেন, একটা কারণ তাদের অভিজ্ঞতার অভাব। আরেকটা কারণ জনগণের সাথে যোগাযোগের অভাব। কি হাস্যকর। অভিজ্ঞতার অভাবে দারোয়ানের চাকরি পাওয়া যায় না যে দেশে সে দেশে গোটা সরকার চলছে এমন লোক দ্বারা যারা অনভিজ্ঞ।
আসল কথা হলো তারা জনবিচ্ছিন্ন।
সৈনিকদের জনবিচ্ছিন্ন করেই রাখা হয়, যুদ্ধে তাদের নৃশংসতাকে প্রকট করে তোলার জন্য। তারা যখন ভুলক্রমে দেশের মাটিকে যুদ্ধের ময়দান ভেবে হামলে পড়ে তখন তারা এক ঝটকায় জনদরদী হয়ে উঠবে এমন আশা করা বৃথা।
জনদরদী হয়ে উঠেছিল এরশাদ সরকারও। ১৯৮৮ এর বন্যায়। বন্যায় হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাতে দেয়া তার পোজ আজো তার মূল সেলিং পয়েন্ট।
ব্যাকগ্রাউন্ডে "আমি যেতে যাই বাংলার মানুষের কাছে" গান।
এবছরের বন্যা একই সুযোগ এনে দিয়েছে নতুন সরকারের জন্য। বন্যায় যখন লক্ষ-লক্ষ মানুষের সহায়-সম্বল ভেসে যাবে তখন এই সরকারের ভেসে উঠার সুযোগ। পরামর্শ দেবার জন্য এরশাদ এখনও নিজের প্রাসাদেই আছেন।
তবে বন্যা মোকাবেলায় সফলতা কিভাবে আসে সে পরামর্শে কিন্তু কাজ হবে না।
তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী ক্ষয়-ক্ষতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের বড় বন্যা হচ্ছে ১৯৯৮। তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। খুব সফলভাবে তারা বন্যাকে মোকাবেলা করেছিল। এসব সফলতার কথা মিডিয়ায় আলোচনা হয় কম। মানুষের মনেও থাকে কম।
এখান থেকে শিক্ষার কিছু নাই। শিক্ষা নিতে হবে এরশাদের কাছ থেকে।
শিক্ষা নিতে হবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে। নওয়াজ শরিফ আর বেনজির ভুট্টোর দুর্নীতি নির্মূলের আওয়াজ দিয়েই এসেছিলেন মোশাররফ। এখন তার আসন টলমলে।
বেনজিরের সাথে ভাগাভাগি করে প্রেসিডেন্ট থাকতে চাচ্ছেন তিনি। আমাদের সেনাপ্রধানরা এসব কথা আরো গভীরভাবে জানেন। পাশের দেশে ষাট বছর ধরে গণতন্ত্র। তা থেকে তারা কিছুই শেখেন না। পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র তাদের নখদর্পনে।
সেসব মডেল বানিয়ে বাংলাদেশেও তারা দেশোদ্ধারের মহড়া দেন মাঝে মাঝে।
এক লাল মসজিদের চেয়ে বন্যা অনেক বড় জিনিস। বন্যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের জীবনকে উলট-পালট করে দিয়ে যায়। এবারের বন্যায় হাহাকার উঠবে আরো তীব্র হয়ে। দেশে অনভিজ্ঞ সরকার।
তাদের মার্চপাস্ট আর যৌথবাহিনীর শুটিং প্র্যাকটিসে দরদী মানুষেরাও এখন সরকার থেকে নিরাপদ দূরত্বে। একা এই সরকার বন্যা সামলাতে পারবে বলে মনে হয় না। এখনই তারা ডাকছে সাহায্যের জন্য, ব্যক্তিকে, রাজনীতিবিদদের এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোকেও।
বন্যা বড়ই ভয়ংকর। সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
এই নড়বড়ে সরকার সেই জলে ভেসে উঠতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে কি তারা ভেসেই যাবে, এই বন্যায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।