সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
ক্যামেরার কবি ইঙ্গমার বার্গম্যানকে চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে মহৎ শিল্পীদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করা হয়। ৩০ জুলাই ২০০৭-এ তিনি মারা যান সুইডেনের বাল্টিক উপকূলের ছোট দ্বীপ ফারোতে। বয়স হয়েছিল ৮৯। জন্মেছিলেন ১৪ জুলাই ১৯১৮-তে সুইডেনের উপশালায়।
বিশ শতকের ফিল্ম জগৎকে যারা বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছেন বার্গম্যান তাদের অন্যতম।
উডি অ্যালেনের মতো করে কেউ কেউ বলেন, মোশন পিকচার আবিষ্কারের পর থেকে সব দিক বিবেচনায় তিনিই সম্ভবত পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফিল্ম ডিরেক্টর। আমেরিকান ডিরেক্টর উডি অ্যালেন ও রবার্ট আল্টম্যান, রাশিয়ান ডিরেক্টর আন্দ্রেই তারকোভস্কি, জাপানিজ ডিরেক্টর আকিরা কুরোশাওয়া তাদের কাজে বার্গম্যানের প্রভাবের কথা সরাসরি স্বীকার করেছেন।
তার কাজের বিস্তৃতি ছিল বহুমুখী। তিনি স্মাইলস অফ এ সামার নাইটের মতো কমিক থেকে শুরু করে দি সেভেনথ সিলের মতো ভয়ঙ্কর কাজ করেছেন যেখানে ক্রুসেডার ঈশ্বরের খোজে বেরিয়েছে।
তৈরি করেছেন মারাত্মক রোগগ্রস্ততার মুভি ক্রাইস অ্যান্ড হুইসপারস আর পারিবারিক আবহের হিউমারাস মুভি ফ্যানি অ্যান্ড আলেকজান্ডারও।
তিনি কাজ করেছেন বেদনা ও নিদারুণ যন্ত্রণা, কামনা ও ধর্ম, শয়তান ও ভালোবাসা নিয়ে। অনেক মুভিবোদ্ধার মতে, বার্গম্যান মুভি জগতে নতুন সচেতনতা এনেছিলেন ১৯৫০-এর দশকে।
ফ্রেঞ্চ পরিচালক বার্ট্রান্ড টাভেরনিয়ারের মতে, বার্গম্যান প্রথম পরিচালক যিনি মুভি পর্দায় অধিবিদ্যা, ধর্ম, মৃত্যু ও অস্তিত্ববাদের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু বার্গম্যানের সবচেয়ে বড় অবদান হলো নারীদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি, নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিষয়ে তার অভিমত।
তিনি হলেন বিশুদ্ধতা সন্ধানী একজন খননকারী।
৪০ বছরের পরিচালক জীবনে বার্গম্যান ৫০টি মুভি তৈরি করেছেন। যার বড় অংশের মনোযোগ ছিল নারী ও পুরুষের সম্পর্ক ও মানুষ ও ঈশ্বরের সম্পর্কের ওপর।
বার্গম্যান তার কাজগুলোকে প্রায় আত্মজৈবনিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা এমন এক প্রক্রিয়ায় চিত্রায়িত হয়েছে যেভাবে স্বপ্ন অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে যায়।
রক্ষণশীল একটি পরিবারে জন্ম হয়েছিল তার। বাবা ছিলেন যাজক। এ রক্ষণশীলতা তার মনে গভীর ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। বলা হয়, শৈশবের অভিজ্ঞতা তার পরবর্তী জীবনের চলচ্চিত্র তৈরির গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
তিনি কাজ করেছেন মঞ্চেও।
শুরুটা মঞ্চে হয়েছিল। স্টকহোমের রয়াল ড্রামাটিক থিয়েটারের পরিচালক ছিলেন। বিয়ে করেছিলেন কয়েকটি। তার স্ত্রীরা ছিলেন পাবলিক ফিগার ও আলোচিত ব্যক্তি। একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও গোল্ডেন গ্লোবসহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।
অনেক স্বীকৃত ও আলোচিত তালিকায় তার মুভি সেরা বলে তালিকাভুক্ত হয়েছে। জীবন জুড়েই আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছেন তিনি।
বার্গম্যান পৃথিবীর সেই মানুষদের দলের যারা নিজেদের কাজের প্রভাব সরাসরি দেখে যেতে পারেন। শুধু একটি দেশ বা একটি ভাষায় নয়, নানা দেশ ও নানা ভাষায় প্রজন্মের পর প্রজন্মের ফিল্ম মেকার, মুভিবোদ্ধাদের তিনি প্রভাবিত করেছেন। জীবিত অবস্থায় পরিণত হয়েছেন লেজেন্ডে।
ফলে তার বেচে থাকার আলাদা একটা মর্ম ছিল।
বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছে, তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সিনেমা জগতে একটি যুগের অবসান হলো। যুগের অবসান কথাটি এতোই ব্যবহৃত হয় যে, এর তাৎপর্য সব সময় বোঝা সম্ভব হয় না। কিন্তু সত্যি সত্যি যখন কারো মাধ্যমে যুগের অবসান ঘটে তখন সেটা অনুভব করতেও কষ্ট হয়। বার্গম্যান একটি যুগের প্রবর্তন ঘটিয়েছিলেন।
তার মৃত্যুর সঙ্গে সে যুগের আক্ষরিক অবসান হয়তো ঘটলো কিন্তু তার চিন্তা ও কাজ তো থেকে গেল।
বার্গম্যান সেলুলয়েড নিয়ে কাজ করতে করতে কখনো কখনো মৃত্যুর প্রতি আকর্ষণ বোধ করতেন। পরে তিনি বলেছেন, আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন মৃত্যুভয়ে দারুণ ভীত ছিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারি এটা একটা খুব বিজ্ঞতাপ্রসূত ব্যবস্থা। এটা ফুরিয়ে যাওয়া একটা আলোর মতো।
খুব বেশি স্নায়বিক উত্তেজনা তৈরি করে না।
একটি বার্গম্যানিয়ান মৃত্যুই হলো তার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।