চাঁদটা গোল হলেই গোল বাধে ভেতরে...!!!
(হিন্দি সাহিত্যের জনপ্রিয় রম্যলেখক 'হরিশংকর পরসাঈ' এর 'রামসিং কি ট্রেনিং' গল্পটি মূল হিন্দি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছিলাম 'রামসিংহের ট্রেনিং' নামে। প্রকাশিত হয়েছিলো দৈনিক সমকালের সাহিত্যসাময়িকী 'কালের খেয়া'তে। )
*******
সংক্ষেপে হরিশংকর পরসাঈ:
রম্যলেখক হিসেবে হিন্দি সাহিত্যে হরিশংকর পরসাঈ
একটি পরিচিত নাম। জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালের ২২ অগাস্ট, ভারতের মধ্য প্রদেশের হোশঙ্গাবাদে। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাশ করেন।
লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে কিছুদিন বনবিভাগে চাকরি এবং অধ্যাপনা করেন, কিন্তু কোনোটাতেই মন বসাতে না পেরে ১৯৫২ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পূর্ণোদ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। স্থায়ীভাবে আস্তানা গাড়েন জবলপুরে এসে। সেখানেই ’৫৬ সালে নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ‘বসুধা’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা। কিন্তু আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে বেশিদিন চালাতে পারেন নি পত্রিকাটি, মাত্র দু’-বছরের মাথায় ’৫৮ সালে ‘বসুধা’র অকালমৃত্যু ঘটে। ‘বিকলাঙ্গ্ শ্রদ্ধা কি দৌর’ বইয়ের জন্যে হরিশংকর ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি’ পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়া সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্যে জবলপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে ডি লিট উপাধিও দেওয়া হয়।
প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহÑ ‘হাঁসতে হ্যায়, রোতে হ্যায়’, ‘ভূত কে পাঁও পিছে’, তব্ কি বাত অউর থি’, য্যায়সে উনকে দিন ফিরে’, ‘বৈষ্ণব কি ফিসলান’, ‘শিকায়াত মুঝে ভি হ্যায়’, ‘আপনি-আপনি বিমারি’, ‘ঠিঠুরতা হুয়া গণ্তন্ত্র’, ‘নিঠল্লে কি ডায়েরি’, ‘মেরি শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ রচ্নায়েঁ’, বোল্তি রেখায়েঁ’, ‘এক লেড়কি পাঁচ দিওয়ানে’, ‘অউর অন্ত্ মেঁ’,‘নট্ কি খোজ’, ‘মাটি কহে কুমহার সে’, ‘পাখন্ড্ অধ্যাত্ম’, ‘সুনো ভাই সাধো’, ‘বিকলাঙ্গ্ শ্রদ্ধা কি দৌর’। এছাড়া ছয়খন্ডে প্রকাশিত ‘পরসাঈ রচনাবলী’ ।
মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৫ সালের ১০ অগাস্ট।
*******
প্রতিদিন সন্ধ্যায় রামসিংহ আমার কাছে আসে।
মুখোমুখি বসে ঘন্টাখানেক গালিগালাজ করে ফিরে যায়।
পড়শিরা হতবাক ওর এই কান্ডে। আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘ লোকটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি?’
‘না,’ উত্তর দেই আমি।
তখন তারা আমাকে পরামর্শ দেয় রামসিংহকে কষে একটা ধোলাই দেওয়ার জন্যে, আর তাতে যদি আমার আপত্তি থাকে, তাহলে ব্যাপারটা যেন তাদের ওপর ছেড়ে দেই Ñ প্রতিবেশীর দায়িত্ত্ব হিসেবে এই মহৎ কাজটি তারা সানন্দেই করবে।
কোনো জবাব না দিয়ে আমি হাসি।
তখন তারা মনে মনে আমাকে পাগল না কি কাপুরুষ ভাববে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে।
রামসিংহ শুধু গালাগালি করেই ক্ষান্ত হয় না। একরাতে সে আমার বাড়িতে গাঁজার কয়েকটা পোটলা রেখে যায়। পরদিন সকালে এসে সে আমাকে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য রাখার দায়ে। হাতকড়ার বদলে রুমাল দিয়ে আমার হাতজোড়া বাঁধে।
রামসিংহকে আমি ছোটো ভাইয়ের মতোই আদর করি। নিজেকে যোগ্য করে তোলার তার এই প্রচেষ্টা দেখে আমি খুশি না হয়ে পারি না। খুব দ্রুত রামসিংহ কাজ শিখে নিচ্ছে, বোঝা যায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে সে উন্নতি করতে পারবে।
আট-দশ দিন আগের কথা। রামসিংহের বড়ো ভাই হনুমান সিংহ বিষম হতাশ আর মনমরা হয়ে আমার কাছে আসে।
বলে, ‘তুমি জানো, হরিশংকর, আমার ছোটো ভাই রামসিংহ ছুটিতে এসেছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর হওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে সে পাগল হয়ে গেছে। পুরো বাড়িটাকে সে মাথায় তুলে রেখেছে। ঘরের দরোজা বন্ধ করে সে নিজে নিজে চিৎকার-চেঁচামেচি আর খিস্তি -খেউর করে। একদিন খিড়কির ফুটো দিয়ে আমি দেখলাম, আমাদের পূর্বপুরুষ আর রাজনীতিবিদদের যে-ছবি দেয়ালে টাঙানো আছে, সেগুলোর দিকে তাকিয়ে সে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে।
’
‘একদিন আমি আমার ছেলে মুন্নাকে পড়াতে রামসিংহকে বলে বাইরে চলে যাই। যখন বাড়ি ফিরে এলাম, তখন আমার বড়ো মেয়ে আমাকে বললো, ‘বাবা, রামসিংহ কাকার কি মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি? তুমি বাইরে চলে যাওয়ার পর মুন্না পড়া ছেড়ে উঠে বাইরে খেলতে চলে যায়। যখন সে ফিরে এলো তখন কাকা মুন্নাকে বললেন, ‘এই মুন্না, জলদি একআনা দে, নয়তো দাদাকে বলে তোকে মার খাওয়াবো। ’ আমরা হাসাহাসি করতে করতে মুন্নাকে একআনা দিয়ে বললাম কাকাকে দিয়ে আসার জন্যে। হা ভগবান, উনি ঐ একআনা নিয়ে পকেটে রেখে দিলেন!’
‘রামসিংহ আজকাল উদ্ভট সব কান্ড করে বেড়াচ্ছে।
ছোটো বাচ্চাদের পানি আনার জন্যে হুকুম দেয়, আর একটু দেরি হলেই চিল্লাতে শুরু করেÑ ‘জলদি পানি নিয়ে আয়, ভেবেছিস কী, অ্যাঁ? সাত বছরের জন্যে চোদ্দশিকের ভেতর ঢুকিয়ে দেবো। ’ দোস্ত, আমি এখন কী করি, বলোতো? ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই সে হেসে বলে, ‘আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে, দাদা, অতো দুশ্চিন্তা কোরো না। ’ ভাই, আমার মনে হয়, তার মাথা পুরোটাই খারাপ হয়ে গেছে। ’
রামসিংহকে আমি ছোটোবেলা থেকেই চিনি। খুবই সৎ, ভদ্র এবং বিনয়ী ছেলে সে।
আর একারণে ব্যাপারটা মেলাতে পারছিলাম না।
পরদিন রাস্তায় তার সাথে দেখা। জিজ্ঞেস করলাম, ‘ব্যাপার কী, রামসিংহ, এসব কী শুনছি?’
সে বললো, ‘বুঝতে পারছি, হরিদা, দাদা আপনার কাছে এসে অভিযোগ করেছে। আসলে কেউ আমাকে বুঝতে চেষ্টা করছে না। আমি সবাইকে বলছি, একটা মাস আমাকে সময় দাও।
আমার মাথা পুরোপুরি ঠিক আছে, আমি পাগল হই নি। ’
আমি বললাম, ‘তো তুই এসব উদ্ভট কাজ কেন করে বেড়াচ্ছিস?’
উত্তরে সে যে-গল্পটা আমাকে শোনালো, সেটা হুবহু তার ভাষাতেই এখানে উদ্ধৃত করছিÑ
‘হরিদা, আমি তখন সবে পুলিশে জয়েন করেছি। নতুন ইন্সপেক্টর। মনে তখন সততা, ন্যায়পরায়ণতা আর মানুষের সেবা করার চিন্তা। একজন সৎ, আদর্শ পুলিশ অফিসার হওয়ার জন্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
একদিন সকালে পাশের গ্রামের একটা ছেলে এসে রিপোর্ট করলো, রাতের বেলা তাদের বাড়িতে চুরি হয়েছে। আমি খোঁজখবর করার জন্যে তাড়াতাড়ি সেখানে গেলাম।
‘ওদের বাড়ির উঠোনে একটা বুড়ো লোক মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলো। আমাকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে, ভীতস্বরে বললো, ‘দারোগা সাহেব, আপনি!’ উঠোনে একটা ছোটো খাট রাখা ছিলো, আমি গিয়ে সেটাতে বসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলামÑ ‘বাবা, আপনার ঘরেই কি চুরি হয়েছে?’
‘কিছু না বলে লোকটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাবা, চুরি কি আপনার এখানে হয়েছে?’ সে বললো, ‘আমাকে বলছেন, হুজুর?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি।
’ তখন বুড়ো বললো, ‘কিন্তু দারোগা সাহেব, আমার নাম তো ‘অ্যাই শালা বুড়ো’, ‘বাবা’ তো আমার নাম নয়। ’
আমি বুড়োর কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, চুরি কবে হয়েছে?’ বুড়ো উত্তর না দিয়ে চুপ মেরে রইলো। আমি আবার জিজ্ঞেস করতেই বুড়ো হাত জোড় করে বললো, ‘ভুল হয়ে গেছে, হুজুর। ছেলেটা অবুঝ।
আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম, এই ফাঁকে ছেলেটা রিপোর্ট করতে চলে গেছে। আমি থাকলে কিছুতেই রিপোর্ট করতাম না, আর আপনাকেও কষ্ট করে এখানে আসতে হতো না। ছেলেটার বয়স কম, না বুঝে রিপোর্ট করেছে, ওকে মাফ করে দিন, হুজুর। ’
‘আমি ফাঁপরে পড়ে গেলাম। এই লোক বলছেটা কী? তাকে বললাম, ‘আপনি তো বড়ো আজব কথা বলছেন।
চুরি হলেতো রিপোর্ট অবশ্যই করতে হবে। আমরা পুলিশেরা আছি কী জন্যে? আমাদের দায়িত্বই তো চোরদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া, আর আপনাদের চুরি যাওয়া মাল উদ্ধার করা। এবার বলুন, কখন চুরি হয়েছে, আর কী কী জিনিস খোয়া গেছে!’
বুড়ো আবারও চুপ মেরে গেল। অসহায় দৃষ্টিতে সমবেত লোকজনের দিকে তাকাতে লাগলো। বুড়োর ছেলে একটা গেলাসে করে দুধ এনে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
আমি নিতে না চাইলে বুড়ো বললো, ‘নিন হুজুর, আমার পোষা গাইয়ের দুধ। ’ আমি বললাম, ‘না না, এখন আমি ডিউটিতে আছি। আপনার কাছ থেকে কিছুই আমি খেতে পারবো না, এমনকি এক টুকরো সুপারিও না। ’
আমি দেখলাম সমবেত লোকজন খুবই অবাক হয়ে গেলো আমার কথায়। বড়ো বড়ো চোখ করে তারা আমাকে দেখতে লাগলো।
আমার প্রতিটি কথায় ওরা চমকে উঠছিলো, আর ফিসফাস করে কী সব বলছিলো একে অপরকে।
আমি বুড়োকে বললাম, ‘বাবা, আপনিও খাটে এসে বসুন আমার পাশে। মুরুব্বি মানুষ, দাঁড়িয়ে থাকবেন কেন?’
‘এইকথা শুনে বুড়ো ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে গেলো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে কানে কানে কী যেন বললো। আমি খুব হতাশ হয়ে পড়লাম।
ওরা এতো ভয় পাচ্ছে কেন? আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ওরা কানাকানি করেই চলেছে। একটু পর বুড়ো জেব থেকে কিছু টাকা বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো, ‘হুজুর, আমি মানছি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। ছেলেটার বয়স কম, না বুঝে রিপোর্ট করেছে। আমি হলে জীবনেও রিপোর্ট করতাম না। আমি জানি, আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে, অনেক জরুরি কাজ ফেলে আপনি ছুটে এসেছেন।
আপনার সময়ের মূল্য আছে, এই পঞ্চাশটা টাকা রাখুন। ছেলেটাকে মাফ করে দিন, ভবিষ্যতে এরকম ভুল আর কোনোদিন হবে না। ’
‘আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে। কিছুক্ষণ গুম মেরে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর বললাম, ‘দেখুন, আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
হয় আপনি একটা পাগল, নয়তো আমি স্বপ্ন দেখছি। আমি কেন টাকা নেবো? সরকার আমাকে বেতন দিচ্ছে আমার কাজের জন্যে। এর বাইরে কারো কাছ থেকে একটা পয়সা নেওয়াও আমার জন্যে হারাম। ’
বুড়োর প্রতিক্রিয়া হলো দেখার মতন। দেখলাম ভয়ের ছায়া সরে গিয়ে তার চেহারায় কঠোর একটা ভাব ফুটে উঠছে।
উপস্থিত গাঁয়ের লোকজনদের দিকে তাকিয়ে সে বললো, ‘ কী, এখনো তোমাদের সন্দেহ আছে?’
সমস্বরে লোকজন জবাব দিলো, ‘না!’
তখন বুড়ো সবাইকে হুকুম করলো, ‘তবে আর হাঁ করে দেখছো কী, বাঁধো শালাকে!’
আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকজন আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। হাত-পা বেঁধে ফেললো দড়ি দিয়ে। এরপর বুড়ো একটা লোকের দিকে ফিরে বললো,‘যা, থানায় গিয়ে ইন্সপেক্টর সাহেবকে বল, এক জোচ্চোর-ডাকাত পুলিশের উর্দি পরে ধোঁকা দিতে এসেছিলো আমাদের। বুঝতে পেরে আমরা তাকে বন্দি করেছি। ’
‘মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার।
চিৎকার করে বললাম, ‘আমি ঠগবাজ নই। আমি পুলিশ ইন্সপেক্টর। ’
‘তুই মোটেও পুলিশ ইন্সপেক্টর নস। এই পোশাক তুই চুরি করেছিস, আর পুলিশ সেজে এসেছিস আমাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্যে। কিন্তু বাছা, আমাকে ধোঁকা দেওয়া এতো সহজ নয়।
তুই কি ভেবেছিস আমি কোনোদিন পুলিশ দেখি নি, অ্যাঁ? পুলিশের লোক দেখতে দেখতে বুড়ো হয়ে গেলাম। পুলিশ কখনো তোর মতো সুন্দর ব্যবহার করে না। তুই একটা ঠগবাজ। ’
‘আমি জানতে চাইলাম, ‘কেন তোমার সন্দেহ হলো যে, আমি পুলিশ নই?’
বুড়ো উত্তর দিলো, ‘তোর মধ্যে সাচ্চা পুলিশ অফিসারের কোনো লক্ষণই নেই। পুলিশ অফিসার দেখতে দেখতে আমি চুল পাকিয়ে ফেললাম।
কেউ আমাকে ‘অ্যাই শালা বুড়ো’ ছাড়া কোনোদিন সম্বোধন করে নি। আমার তো তখনই সন্দেহ হয়েছে, যখন তুই আমাকে আদর করে ‘বাবা’ বললি। এরপর আমার ছেলে যখন দুধ নিয়ে এলো, তুই খেলি না। আমার দেওয়া টাকাও নিতে চাইলি না। কোনো পুলিশ অফিসার এরকম করবে না।
আমরাতো কখনো চুরির রিপোর্টই করি না, পুলিশ আসবে এই ভয়ে। পুলিশ আসলেই বিরক্ত করে মারবে, টাকা চাইবে, মারধোর করবে। আর তুই বলছিস কি না এক পয়সাও নিবি না, উল্টো চোর খুঁজে বের করে শাস্তি দিবি! এরকম পুলিশ অফিসার তো আমি আমার বাপের জন্মেও দেখি নি। তুই অবশ্যই একটা জোচ্চোর-ধোঁকাবাজ। কিন্তু বাছা, কম্মো কাবার করতে পারলি না, তার আগেই ধরা পড়ে গেলি এই বুড়োর চোখে।
এবার আসল পুলিশ অফিসার আসছে থানা থেকে। পাঁচ-দশ বছরের সাজাভোগ করার জন্যে তৈরি হয়ে যা। ’
‘বুঝলেন, হরিদা, এরপর বিকেল পর্যন্ত আমি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওখানে পড়ে রইলাম। সন্ধে হওয়ার আগেই আমার এক সহকর্মী ইন্সপেক্টর এলো থানা থেকে। এসেই সে বুড়োর চোদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে শুরু করলো।
বুড়োকে বললো, ‘কিরে শালা বুড়োর বাচ্চা, ওনাকে বেঁধে রেখেছিস কেন?’
গালি শুনে বুড়োর চেহারায় স্বস্তির ভাব ফুটে উঠলো। বললো, ‘এ কথাটাই আমি এই ঠগবাজ লোকটাকে বলছিলাম। ’ এরপর আমার দিকে ফিরে বললো, ‘দেখেছিস, পুলিশ অফিসার এরকমই হয়, হুজুরের মতো। আর তুই কিনা ‘বাবা বাবা’ করছিলি!’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রামসিংহ তার গল্প শেষ করলো। বললো, ‘এই দুরবস্থার পর আমি বুঝতে পারলাম, হরিদা, আমার ট্রেনিঙ অপূর্ণ রয়ে গেছে।
পুলিশের উর্দি পরা অবস্থাতেও সাধারণ লোকজন আমাকে পুলিশ মানতে নারাজ। সবাই মনে করে আমি ঠগবাজ। তাই একমাসের ছুটি নিয়ে আমি বাড়ি চলে এসেছি, আমার ট্রেনিঙ পুরো করার জন্যে। ’
আমি তাকে বললাম, ‘রামসিংহ, আমাদের বড়োই দুর্ভাগ্য যে, তোর-আমার দু’জনেরই পিতা এই ভবসংসার ছেড়ে চলে গেছেন। নইলে তাদের ওপর তুই প্র্যাকটিস করে দু-চারদিনের মধ্যে তোর অসমাপ্ত ট্রেনিঙ শেষ করতে পারতি।
যাক, তা যখন হওয়ার নয়, এখন আমি আছি, তুই আমার ওপর প্র্যাকটিস চালিয়ে যা। তোর উপকারে আসতে পারলে আমি খুশিই হবো। ’
এরপর থেকে রামসিংহ প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে এসে আমাকে গালাগালি করে, আর আমি হাসিমুখে তা হজম করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।