আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিন্দিতা'র চিঠি - ৭,৮ (শেষ পর্ব)

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

চিঠি - ৭ আনন্দ, তুমি চলে যাবার ঠিক কদিন পরেই, তোমার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছিল ভার্সিটি প্রশাসন। তোমার অনার্সের রেজাল্ট, তোমার অন্যান্য কৃতিত্ব, তোমার অতীত ইতিহাস সবকিছু বাদ সাধলো তোমার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার স্বপক্ষে। জানতাম তোমাকে আটকে রাখতে পারবে না। ছাত্রদের অব্যাহত দাবীর মুখে কোন কিছুই আর ধোপে টিকলো না। কিন্তু কি ভীষণ অভিমানী আর জেদী ছিলে তুমি।

কিছুতেই ফিরে এলে না ভার্সিটি ক্যাম্পাসে। মাস্টারর্স পরীক্ষাটাও দিলেনা। আমার বিশ্বাস ফার্স্টক্লাশটা তুমি পেয়ে যেতে। শিক্ষকের চাকরীটা হয়তো হয়ে যেত। কিন্তু কিছুই করলে না।

একবারের জন্যে হলেও তুমি আমার কথাটা ভাবলে না। একটা মেয়ের সোনালী দিনের স্বপ্ন এভাবেই গুঁড়িয়ে দিলে। এতো বোকা কেন তুমি? নিজের ভালটাও বুঝতে শিখলে না? কি হতে পারতো তোমার জীবনটা একবার ভেবে দেখেছো? আমার কথা না হয় বাদই দিলাম- নিজেকে কতটা ঠকিয়েছো হিসেব করে দেখেছো কখনও? মধ্যে থেকে তুমি আমাকেও ঠকালে। চিরকালের জন্য ভালবাসার কাঙ্গাল করে গেলে। জীবনভর শুধু কাঁদাতেই শিখেছিলে।

কষ্ট দিতে কী এতোই ভাল লাগে? আমার জীবনেতো কান্নার শেষ নেই। আর কত কাঁদলে তুমি সুখী হতে, বলবে আমাকে? তুমি কী ভেবেছো কাউকে কাঁদিয়ে তুমি সুখ পাবে? পুরুষ হয়েছো বলেই কী ভেবেছো তোমার চোখে কান্না নেই? সব চোখেই কান্না আছে। - অনিন্দিতা চিঠি - ৮ আনন্দ, আমি সবদিক থেকেই হেরে গেছি। সেই বসন্ত আজ আমার কাছে বিবর্ণ প্রায়। আমি আজ এক শুকনো ঝরা পাতা।

কষ্টের প্রহরগুলো কেটে যাক নির্ঘুম জোসনার বিছানায়। যা পাবার নয় তা পাইনি। এ যে আমার কপালের লিখন। এ আমার ভবিতব্য। একদিন আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতেই হলো।

সবার এতো পীড়াপিড়ি এতো চাপ কিছুতেই ফেরাতে পারলাম না। তুমিতো সেই যে নিরুদ্দেশ। আর কোন খবরই নিলেনা। এই সমাজে একটা মেয়ের একা থাকা যে কত কষ্টের তা তুমি বুঝবে না। সেই বোকা লোকটা সবকিছু জানার পরও আমাকে মেনে নিল অকপটে।

হ্যাঁ আমার বরের কথাই বলছি। তোমার চিঠিগুলো ওকে পড়তে দিয়েছিলাম। ও সেগুলো আমাকে পড়ে শোনাতো। বলতো- “এমন চিঠি পাবার ভাগ্য যার, সে আজ আমার। এ যে আমার কি সুখ তা বলে বোঝানো যাবেনা”।

ওর কথা শুনে কান্না আসতো। ও তোমার মত চৌকস ছিলনা মোটেও। বলতে পারো, নিরীহ গোবেচারা। অনেক চেষ্টা করেছি- কেন জানিনা তোমার জায়গায় ওকে কিছুতেই বসাতে পারিনি। অথচ ও কিন্তু তোমাকে না দেখেও মনে মনে শ্রদ্ধা করতো।

আমাকে প্রশ্ন করে জ্বালিয়ে মারতো। তুমি আর কেমন কেমন ছিলে সব জানতে চাইতো। এটাতো ঠিক, আমার ভালবাসার সিংহাসনটা ছিল তোমার দখলে। আমার ভালবাসার মুকুটে জোসনার যে আলোটা পড়তো সেই চাঁদটাতো ছিল তোমার আকাশে। আমি শুধু অমাবশ্যা বুকে নিয়েই কাটিয়ে দিলাম সতেরটি বসন্ত।

শধু শেষ কথাটা জেনে যাও, যে মানুষটা তোমার মত হতে চেয়ে আমাকে নিরন্তর সেবা দিয়ে গেছে সে আজ আর নেই। আমাকে একা ফেলে চলে গ্যাছে বহুদূরে। বিয়ের আগে যে লাল পেড়ে সাদা শাড়িটা পড়ার জন্য একদিন ভীষণ জেদ ধরেছিলে, সেটাই চিরতরে পড়িয়ে রেখে গ্যাছে তোমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে। তুমি খুশী তো! - অনিন্দিতা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।