"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
চিঠি - ৫
আনন্দ,
সব কিছুই লিখবো তোমাকে। একটু সময় দরকার। একদিনে কি আর
সব লিখে শেষ করা যায়? তোমার অভিযোগ, অনুযোগ আর অভিমানের
সব উত্তর তুমি পাবে। শুধু আমাকে একটু সময় দাও। সব জানতে পারবে
তুমি।
একটা কথা বিশ্বাস করবে কী না জানিনা, আমি তোমার মতো ভাল
লিখতে পারিনা। অভ্যাস নেই। ভাষার তেমন দখলও আমার নেই। তাই
চিরকুট লিখে পাঠাতাম লীনার হাতে। আর তা নিয়ে তুমি ব্যঙ্গ করতে।
চিরকুট পাঠালে মন খারাপ করতে। কতদিন বলেছো, “চিঠি লিখতে এতো
কার্পণ্য কেন? লিখতে পারো, অথচ লিখবেনা। কেন সেটা বুঝতে পারিনা”।
আমি চুপ করে থাকতাম। এর কোন উত্তর আমার জানা ছিল না।
বিশ্বাস
করো, নিজে না লিখলেও, তোমার লেখা পড়তে আমার বেশী ভাল লাগতো।
তাই চাতক পাখীর মতো অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম কখন তোমার
চিঠি পাবো। তোমার সূধাসিক্ত চিঠি আমার কষ্টের জীবনে প্রশান্তি এনে দিত।
আমি কখনও ঝর্ণার সুপেয় জল পান করে দেখিনি। তবে ওই মুহূর্তে তোমার
চিঠি পেলে আমি তৃষ্ণার্ত বেদুইনের মতো আজলা ভরে তা পান করতাম।
মন যতই খারাপ থাকুক না কেন তোমার চিঠি পড়া শেষ হলেই মনটা কেমন
জানি ভাললাগায় ভরে যেতো। ছুটে চলে যেতাম রাস্তার ধারের জানালায়।
তোমাকে দেখার ইচ্ছেটা তখন প্রবল হয়ে উঠতো। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে
থাকতাম রাস্তার দিকে। মনকে জিজ্ঞেস করতাম, আনন্দ তুমি কোথায় ?
- অনিন্দিতা
চিঠি - ৬
আনন্দ,
তুমি কী জানো? তোমার এতোটুকু ভালবাসা পাবার জন্য- এই আমি,
সারা জীবনের জন্য বৈধব্য মেনে নিতেও কুন্ঠিত ছিলাম না।
মন্ত্রমুগ্ধের
মতো তোমার লেখার জালে জড়াতে জড়াতে আমার সবকিছুই তোমাকে
সঁপে দিতে চেয়েছিলাম। লীনা, রুবি, তাহেরা ঠাট্টা করে বলতো- ওকে
একটু আগলে রাখিস, নইলে দেখবি কবে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবো টেরও
পাবি না। আমি তো তোমাকে ছোঁ মেরে নিতে পারিনি- ওরাও পারেনি।
ওরা কেউ নিলেও মন্দ হতোনা। অন্তত তোমার সব ভালমন্দ খবরগুলো
নিয়মিত পেতাম।
ভার্সিটির সেই আন্দোলনের ঢেউ একসময় থেমেছিল।
বেশীরভাগ শিক্ষকের অভিমত ছিল, তোমাকে বহিষ্কার করা ঠিক হয়নি।
আন্দোলন সফল হবার পরদিন থেকে তোমাকে ক্যাম্পাসে কেউ খুঁজে
পায়নি। একদিন তোমার বাসায় লীনাকে পাঠিয়েছিলাম খবর নিতে।
লীনা এসে জানালো তুমি নাকি ঢাকায় চলে গ্যাছো।
কবে ফিরবে কেউ
কিছু জানেনা। আমার জীবন থেকে তুমি হারিয়ে গেলে চিরতরে। আর
কোনদিন তোমার সাথে দেখা হলোনা। এই বুঝি ছিল তোমার ভালবাসা?
- অনিন্দিতা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।