মিলার গলা এতণে প্রায় স্বাভাবিক শোনায়। একটু থেমে বলে, আজকে সকালে ফুফু এসে বলতেছে, একটা ডাক্তার ছেলে পাইছে, ওদের নাকি সামনের শুক্রবারে দেখাতে নিয়ে আসবে।
শুনে বুকটা ধরাস করে ওঠে। বলে কি? কোথাকার কোন ডাক্তার-মাক্তার এসে আমার মিলাকে গরু দেখার মতো করে দেখে যাবে? বুঝেছি, এই জন্যই মিলার মেজাজ আজকে এতো চড়া। তাই তো বলি আসতে না-আসতেই আজকে আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন? তিয়াকে নিয়ে ও-কথাটা মিলা তাহলে আমাকে রাগানোর জন্য বলেছে, যাতে কথটাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য আমি তড়িঘড়ি বিয়েতে রাজি হয়ে যাই।
আসলে ও কিছু বুঝতে পারে নি। যাক, বাঁচলাম। মিলা এম্নিতে শান্ত মেয়ে, তবে সেন্টিমেন্টাল হওয়ায় রেগেও যায় দ্রুত। বাট শি ইজ রিয়েলি আ গুড গার্ল। মাস্টার্সে পড়ার সময় বেশিরভাগ দিনই আমার কাস শুরু হতো সকাল আটটায়।
সেসব দিনে মিলা আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসতো। কারণ কাস ধরতে ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা না খেয়ে আমি ইউনিভার্সিটি দৌড়াতাম। কাস শেষে ডাকসু বা আইবিএ ক্যান্টিনে বসে মিলার আনা নাস্তা খেতাম। কলা, সিদ্ধ-ডিম, সাদারুটি। অনেকেই তখন আমাদের দিকে কৌতূহলী-চোখে তাকাতো।
আমার লজ্জা লাগতো, মিলাকে বলতাম, ধুর, তুমি আর নাস্তা এনো নাতো, মানুষ তাকিয়ে থাকে। মিলা সেদিকে মোটেও ভ্রƒপে করতো না, বলতো, ওরা তাকায় কারণ ওরা মনে মনে আফসোস করে ওদের প্রেমিকারা কেউ কষ্ট করে ওদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসে না। নাস্তা ছাড়াও মাঝে মাঝে মিলা বাসা থেকে নুডুলস্, পিঠা, পুডিং, এটা-সেটাও নিয়ে আসতো। সত্যিই মিলা চমৎকার একটি মেয়ে। এমন একটি মেয়েকে ভালোবাসতে পেরে এবং ভালোবাসা পেয়ে সত্যিই আমি গর্বিত।
কি, চুপ করে আছো যে?
একেবারে শান্ত স্বাভাবিক গলা মিলার, যে গলায় সবসময় আমার সাথে কথা বলে।
আমি চোখ তুলে দেখি মিলা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে। একটু আগ পর্যন্ত যে মেয়েটা আমার সাথে কড়া কড়া কথা বলছিলো সে যেন অন্য কেউ। আমিও ওর চোখে খানিক তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি আনার চেষ্টা করি, শ্বাস ফেলে বলি, হু, ভাবছি।
মিলা এবং মাÑ দুদিক থেকেই এখন বিয়েটা করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
কাল রাতে খাবার সময় মা আমাকে উদ্দেশ্য করে সগতোক্তির মতো বলছিলো, কবে পোলায় বিয়া করবো আর কবে নাতি-নাতকুরের মুখ দেখমু, এর আগেই না-জানি কবরে যাইতে হয়!
দাঁড়াও দাঁড়াও, কয়টা দিন ওয়েট করো মা, বিয়া তো করবোই, তারপর দেখবা নাতি-নাতকুরে ঘর ভরে গেছে। মশকরাটা করতে গিয়েও চুপ করে গিয়েছিলাম। শুধু মনে মনে হাসছিলাম। কিন্তু বিয়ের কথাটা ভাবলেই যে টুনটুনির মুখটা মনে পড়ে যায়। বুকটার মধ্যে হু হু করে ওঠে।
না না, টুনটুনির প্রতি আমার অন্য কোনো আকর্ষণ নেই, শুধু দেখার আকর্ষণ। এখানে হয়তো ফ্রয়েডকে হাজির করে বলা যেতে পারে, তিয়ার প্রতি আমার আকর্ষণ চেতন মন থেকে অবদমিত হয়ে নির্জ্ঞান মনে অবস্থান করছে। স্কুলে পড়াকালীন একটি মেয়েকে আমার ভালো লাগতো। ছাদে উঠে প্রায়ই আমি ওকে দেখতাম। একদিন রাতে স্বপ্ন দেখলাম বিছানায় আধশোয়া হয়ে আমরা পরস্পরকে আদর করছি।
এবং অবাক কাণ্ড সেই বিছানারই কিনারে পা ঝুলিয়ে বসে আছে মেয়েটার বাবা-মা, তারা আমাদের দিকে পিছন ফিরে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে টিভি দেখছে। নির্লজ্জের মতো তাদের সামনেই আমরা যে এমন একটা কাজ করছি এতে তাদের কোনো ভ্রƒপেই নাই যেন খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা এবং তাজ্জব ব্যাপার, আমার কাছেও বিষয়টাকে মোটেই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। আজো এ স্বপ্নের কথাটা মনে হলে আমি মনে মনে হেসে উঠি। ফ্রয়েড মিয়া অবশ্য বলেছেন, আমাদের নির্জ্ঞান মনে অবস্থান করা অবদমিত আবেগ বা ইচ্ছাগুলো ঘুমের মধ্যে প্রকাশিত হওয়ার চেষ্টা চালায় আর সেগুলোকেই আমরা স্বপ্ন বলি। আরে ধুর, এইসব ফ্রয়েড-ম্রয়েডের তত্ত্ব ভাবলে মাথাটা উলটা-পালটা লাগে।
নির্জ্ঞান মনে কি আছে ওইসব জানার দরকার কী? আমার স্বপ্নের মধ্যে মিলার সঙ্গে তিয়া যদি জোর করে ঢুকেই পড়ে তো আমি কী করবো? ওইসব জানাজানির মধ্যে আমি নাই। আমি জানি টুনটুনিটারে আমি প্রাণভরে দেখতে চাই আর মিলারে শরীর-মনে পেতে চাই, ব্যস। কিন্তু একজনকে পেয়ে আরেকজনকে তো হারাতে চাই না! ব্যাপারটা নিয়ে আমি ভাবতে থাকি, প্রতিবারের মতো ভাবনায় কেবল তলিয়ে যাই, ভাবনার আর তল খুঁজে পাই না।
কি হলো? তোমার জবান বন্ধ হয়ে গেলো নাকি? মিলা রসিকতা করে। আমার হাত টান দিয়ে বলে, চলো তো হাঁটি।
বসে বসে পায়ে ঝিঁঝি ধরে গেলো।
আমি চাপা শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াই, চলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।