সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও পাহাড়ি বনাঞ্চল উজার হয়ে যাবার ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বন্যপ্রাণীরা খাদ্যাভাবের অভাবে লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে মানুষের হাতে। প্রানী সংরক্ষণবিদগণ জানান, সংরক্ষিত বন এলাকায় ফলজ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি ও গহিন বন কমে যাওয়ায় এসব বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে ।
গত দু'বছরে মৌলভীবাজারের রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে আসা দেড় শতাধিক বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে । স্থানীয় বন বিভাগ ও জনতার হাতে ধরা পড়া এসব বন্য প্রাণীদের আবার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও চট্রগ্রাম ডুলাহাজারা সাফারী পার্কে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বন বিভাগ সুত্র জানায়, গত ৩ মাসে দুটি মেছো বাঘ, একটি লজ্জাবতি বানর, কাকড়া, কচ্ছপ, দুটি মায়া হরিণ, একটি অজগর, ৩টি গুলবাহার প্রজাতির সাপ, একটি সোনালি বিড়াল ও বিরল প্রজাতির একটি মায়া, বিরল প্রজাতির প্রজাপতি ও বিরল প্রজাতির হরিণ শাবক লাউয়াছড়া এবং চট্টগ্রামের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হয়।
লোকালয়ে আসার সময় সম্প্রতি ৪ টি মেছো বাঘ সাতগাঁও রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নেমে আসলে ট্রাক চাপায় মারা যায়।
জানা যায়, ১২৫০ হেক্টর আয়তনের ওই বনাঞ্চলকে ১৯২৭ সালের বন আইনের আওতায় ১৯৯৬ সালে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্টা করা হয়েছিলো ন্যাশনাল পার্ক।
ন্যাশনাল পার্ক, অভয়ারন্য ও গেম রিজার্ভ বাংলাদেশে মোট ১৭ টির মধ্যে লাউয়াছড়া একটি। ১৯৯৭ সনে মাগুরছড়া গ্যাসকুপে বিস্ফোরণ হওয়ার পর যে পরিমান ক্ষতিসাধিত হয়েছে তা কল্পনাতিত। এ পার্কে বিরল প্রজাতির পশুপাখি বাস করত।
গ্যাসকুপ বিস্ফোরনের ফলে সেখানে বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক সময় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীদের সচরাচর দেখা যেত। সেখানে এসব প্রাণীর আবাসস্থলও ছিল নিরাপদ। বর্তমানে সেই উদ্যানে প্রাণীদের খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারন করায় বন্য প্রাণীরা বিভিন্ন সময় এখন লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে।
সেখানে বিরল প্রজাতির তিনশতাধিক পাখি, দেড়শতাধিক প্রজাতির বৃক্ষ, ১০ প্রজাতির সরিসৃপ, অর্ধশতাধিক পশুর বসাবাস ছিল।
এসব প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে, চিতা বাঘ, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ, খরগোশ, অজগর, বানর, গুলবাহার (সাপ), সোনালি বিড়াল, লাজুক বানর, বনরুই, সিবিক ঘ্যাটি, উল্লুখ, ধনেশ পাখি, বন মোরগ, সজারো, ময়না পাখি, গুইসাপ, শেয়াল, হনুমান, বন বিরাল, খেকশিয়াল, বেজী, কাঠ বিড়ালী, খাকড়া ইত্যাদি। এছাড়াও দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ ক্লোরোসমসহ বিভিন্ন প্রজাতির গুল্ম লতা, পরগাছা, পরজীবি উদ্ভিদ, অরকিড, ফার্ন, লাইকেন, মস জাতীয় উদ্ভিদ ও বহু প্রজাতির পোকামাকড়সহ ক্ষুদ্র প্রাণী।
বেসরকারী উদ্যোগে বন্যপ্রানী সংরক্ষনবীদ সিতেশ রঞ্জন দেব ২২ দফায় অনেক পশুপাখি সেখানে অবমুক্ত করেছেন। ২০০১ সালে ৫ জুন সজারু, বানর, বন্য শুকুর, অজগর, খরগোশ, বন মোরগ অবমুক্ত করা হয়। ২০০২ সালের তিনটি মেছোবাঘ অবমুক্ত করেছিলো বন বিভাগ।
কিন্তু ২০০৪ ও ২০০৫ সালে শিকারী কুকুরের কামড়ে ২ টি ও গাড়ীর নিচে পড়ে ৩ টি মারা গেছে। ২০০৩ সালের ৯ নভেম্বর অবমুক্ত পশুপাখির মধ্যে লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে ৫ হাজার কাকড়া বন্য প্রানীর খাবার হিসাবে ছাড়া হয়। ২০০৪ সালে ৪টি গোল্ডেন ক্যাটবা সোনালি বিড়াল এবং তার 4টি বাচ্চা ছাড়া হয়। ২০০৪ সালের ২১ জুলাই ২১ টি অজগরের বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়। ২০০৫/২০০৬ এবং ২০০৭ সালেও অসংখ্য পশুপাখির অবমুক্ত করা হয়।
এদিকে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ন্যাশনাল পার্কে অবমুক্ত করা প্রণীর সংখ্যা বন বিভাগের কাছে নেই। তাছাড়া যে সমস্ত প্রাণী অবমুক্ত করা হয়েছিল সেগুলো এখন আছে কি না তাও তারা জানে না।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ সীতেশ দেব বলেন, গহিন অরণ্যের অভাবেই বন্যপ্রাণীরা খাদ্যের অভাবে চলে আসছে লোকালয়ে। তিনি বলেন, লাউয়াছড়া এখন আর বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ নয়। সেখানে ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
এক শ্রেণীর লোভী মানুষের হিংস্র থাবায় বনাঞ্চল নির্বিচারে উজাড় হবার প্রেক্ষাপটে বনাঞ্চলে ফলজ গাছের সংকট দেখা দেয়ায় প্রাণী খাদ্যের অভাব প্রকট আকার ধারন করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে করে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কটি গড়ে তোলা হলেও যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন ও বন উজাড়ের ফলে বনাঞ্চল দিনে দিনে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
মহকুমা বন কর্মকর্তা জানান, মাগুরছড়া গ্যাসকুপ বিস্ফোরনে ধ্বংসপ্রাপ্ত বনাঞ্চল ও জীব বৈচিত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বন বিভাগ লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে নানা মুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।