আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দুই প্রেমিকা



আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকান ক্যান? আম্মুকে বলে দেবো। কী?! আচমকা তিয়ার কথাটা শুনে থতমত খেয়ে উঠি, একেবারে বেক্কেল হয়ে যাই। বলে কি মেয়েটা? এইটুকুন মেয়ে, মাত্র ছয় কাসে পড়ে, নাক টিপলে এখনো যার দুধ বেরুনোর কথা, সে কিনা আমার চোখের চারিত্রিক দুর্বলতা নিয়ে অভিযোগ তোলে! আবার আম্মুকেও বলে দেওয়ার হুমকি! কয়েক সেকেন্ড আমি পুরো থমকে যাই। থমকে ওর মুখের ওপর তাকিয়ে থাকা আমার অবাক স্থির চোখদুটোকে একটু বাদে সরাতে বাধ্য হই। চোখ রাখি খোলা অংক বইটার ওপর।

শতকরা অনুশীলনী থেকে দশটা অংক তিয়াকে হোমওয়ার্ক দিয়েছিলাম। একটাও করেনি শুনে বিরক্ত-চোখে খানিক ওর দিকে তাকিয়েছিলাম, শেষটায় অবশ্য সে দৃষ্টির একটু রকমফের হতে পারে কিন্তু তাই বলে এমন সাংঘাতিক অভিযোগ! শত হলেও আমি ওর শিক, হই না প্রাইভেট টিউটর, তাতে কী? বয়সেও আমি ওরচে’ বারো বছরের বড়ো। এতসব কিছুকে ছাপিয়ে পুচকে মেয়েটা বেফাঁস কথাটা মুখে আনলো কী করে? আরো অবাক লাগছে, এই ড্যাবড্যাবের শব্দটা তিয়া শিখলই বা কোত্থেকে? ও, দুপুরবেলা হোমওয়ার্কের বদলে আজকাল মায়ের সাথে বসে বসে নিশ্চয়ই বাংলা ছবি দেখা হয়! এমন ড্যাবড্যাব করে তাকানোর কথাটা জীবনে আর কোনো মেয়ের মুখ থেকে আমাকে হজম করতে হয়েছে? মগজের অলিতে-গলিতে দ্রুত উঁকি-ঝুঁকি মারতে সেই স্কুলজীবনে ফিরে যাই। শাওনই ছিলো একমাত্র মেয়ে যে এই কথাটা আমাকে বলেছিলো। বলে ফেলেই টুক করে মিষ্টি হেসে কোমর দুলিয়ে চলে গিয়েছিলো।

শাওনের সেই অভিযোগে রস ছিলো, যেই রসে জারিত হওয়া যায়, যেই রসে কেবল চুমুকে চুমুকেই তৃপ্তি, অভিযোগ স্বীকার করে নেয়াতেই আনন্দ কারণ এতে অভিযোগওয়ালারও পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু তিয়ার েেত্র? ঠিক তার উল্টোটা। ছোটোখাটো কোমল মেয়েটা যে মাত্র সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে, গায়ে এখনো শৈশবের গন্ধÑ ওর মুখে এমন কমপ্লেন শোনা শিক হিসেবে আমার জন্য যেমন দারুন লজ্জার আবার কথাটার একেবারে প্রতিবাদ না-করা মানে আমার বেচরিত্র স্বীকার করে নেয়া। এ-ক থাপ্পড় লাগাবো ফাজিল মেয়ে, বেত্তমিজের মতো কথা! তোমার দিকে আমি ড্যাবড্যাবিয়ে তাকাতে যাবো কেন? চোখ গরম করে ডানহাতের থাবা তুলে মনে মনে তিয়ার কথাটার প্রতিবাদ করি। কিন্তু ও যেমন মেয়ে, বিন্দুমাত্র দমে না-গিয়ে ফস্ করে বলে ফেলতে পারে, এ-হ, নিজে খারাপ করে তাকাবে আবার বললে বলে থাপ্পড় মারবে? মারেন দেখি? কোনটা যে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকানো আর কোনটা যে নরমাল করে তাকানোÑ দুটোর বিচারকই যেহেতু তিয়া, অতএব সে যা বলবে সেটাই শেষকথা এবং বিচারে তালগাছ ওরই ভাগে।

অবশেষে একটা হাঁটুরবয়সী মেয়ের কাছ থেকে ‘চরিত্রহীন গৃহশিক’ আখ্যা পেতে হবে? উঃ, কী সাংঘাতিক! না না, এ ব্যাপারে ধমকি-ধামকি তো দূরের কথা, কথা বলারই দরকার নাই। এম্নিতেই কথাটা ওর মা’র কানে যায় কিনা সেটা নিয়েই তো এখন ভয় লাগছে। তিয়া তাহলে এবার বড়ো হয়ে গেছে, পুরুষের দৃষ্টির ভাষাও পড়তে শিখে গেছে! স্যার, এখন কি করবো? অ্যা? আমি প্রায় চমকে অংক বই থেকে চোখ তুলে তিয়ার দিকে তাকাই। প্রশ্নের উত্তরের জন্য তিয়া আমার দিকে চেয়ে। স্বাভাবিক চাহনি।

একটু আগে যে কথাটা বলে আমার বুকের ধড়ফড়ানি ঘণ্টায় পঞ্চাশ মাইল করে দিয়েছিলো সেটা যেন ভুলেই গেছে, যেন এটা আর আট-দশটা কথার মতোই সহজ সাদসিধে কথা। কী হলো, বলেন না কী করবো? ও, ইয়েÑএই হোমওয়ার্কটাই শেষ করো আগে। কোনোরকমে গলা স্বাভাবিক রেখে জবাবটা দেই। আচ্ছা। বলে তিয়া বই টেনে নিয়ে করতে শুরু করে।

আমি চেয়ারে পিঠ এলিয়ে দিয়ে একটা চাপা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ি। আড়চোখে তিয়াকে দেখি, অংক করছে। ছোট্ট টুনটুনি পাখিটা ছোট্ট হাতে কলম চেপে গুটি গুটি করে খাতায় লিখছে। ওর হাতের লেখা মোটেই সুন্দর না, কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং মার্কা কিন্তু ও যখন লিখতে থাকে আমার দেখতে ভালো লাগে। লেখার সময় ও ঘাড়টা এমন ভাবে বাঁকায়, চোখে থাকে এমন একটা দৃষ্টি, হাত এতো আস্তে আস্তে সুন্দর করে চলতে থাকে যে আমি মুগ্ধ হয়ে তিয়াকে দেখি।

ওকে পড়াতে এলে সবসময় আমি চেষ্টা করি কীভাবে ওকে লেখা দিয়ে ব্যস্ত রাখা যায়। ও আবার একদম লিখতে চায় না। পড়াশুনাও যে তেমন একটা করে তা-না। ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে পড়াতে হয়। খালি ফাঁকিবাজির তালে থাকে।

আমার জান দফা-রফা করে ফেলে মেয়েটা। মাঝে মাঝে অতিষ্ঠ হয়ে যখন বকাঝকা শুরু করি ও ভুরু-চোখ-মুখ কুঁচকে বিদঘুঁটে একটা চেহারা তৈরি করে, গোঁজ হয়ে কথার উত্তর না দিয়ে ঝিম মেরে বসে থাকে। ওর চেহারা তখন বড়দের মতো রাগি-রাগি হয়ে যায়, নাকের পাটা ফুলে ওঠে। টুনটুনিটা আবার রাগও করতে পারে! উপরে উপরে গলা তুলে ধমকি-ধামকি চালালেও ভিতরে ভিতরে ওর এই ভঙ্গিটা দেখতে আমার দারুন লাগে। আমার খুব ইচ্ছে করে ও তখন প্রেমিকার মতো আমার সাথে ঝগড়া করুক, আমার সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলুক।

ঝগড়ার মধ্যেও তো একটা মজা আছে, তাই না? কিন্তু ও একেবারে বোবা সেঁজে থাকে তখন, দশটা কথা জিজ্ঞেস করলে ঝাঁমটা মেরে একটা কথার উত্তর দেয়। যা হোক, তিয়া এখন শান্ত হয়ে শতকরার অংকগুলো করছে। কালকে ওর এটার ওপর কাস টেস্ট। দশটা অংক ওকে আগে বহুবার করানো হলেও প্রত্যেকবারই ও সিলি মিসটেক করে দু-তিনটা অংক ভুল করবেই। এর মধ্যে তিয়া দুটো অংক ভুল-ভাল না-করে শেষ করে এখন তিন নম্বরটি শুরু করেছে।

আমি জানি আর একটা বা দুইটা শেষ করেই তিয়া ঠাস করে খাতার ওপর কলমটা রেখে চেয়ারে দেহটা সোজা করে বলবে, উহ, হাত ব্যথা হয়ে গেছে, আর করবো না স্যার, সবগুলাই পারি। আমাকে তখন বলতে হবে, পারলে করে দেখাও। আরে বাবা, পারি তো, খামাখা করবো কেন? সবগুলা অংক তুমি একদিনও কারেক্ট করতে পারছো? তিয়া তখন অকৃত্রিমভাবে হেসে উঠবে, স্বীকারোক্তিপূর্ণ দুষ্টমি ভরা হাসি। হাসলে ওর দুই গালে বিন্দুর মতো টোল পড়ে, অদ্ভুত লাগে দেখতেÑ বড়সড় টোলের চেয়ে এ ধরনের বিন্দুর মতো টোল-পড়া গালের হাসি আরো সুন্দর ও রহস্যময় লাগে। হাসার সময় তিয়ার দুই কাঁধ খানিক উঁচুতে উঠে যায়, বুকও ওঠেÑ পুরো দেহেই কয়েক সেকেন্ড মৃদু কাঁপুনি চলে।

আমি তখন চোখেমুখে একটা রাগের নকল-ভাব এনে ওর দিকে তাকাই। আমি রেগে যাচ্ছি দেখে তিয়ার হাসিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়, ও মজা পায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ওর এই হাসির জন্য আমি যে পিপাসার্তের মতোই অপোয় থাকি ছোট্ট টুনটুনিটা এটা জানে না। এমন হাসির সময়েই ছোট্ট টুনটুনিটার কুঁড়ির মতো দুটি বুক প্রি ভঙ্গিতে ওঠা-নামা করে। সেই মুর্হর্তে সেদিকে অবশ্য আমি আঁশ মিটিয়ে তাকাতে পারি না কারণ তিয়ার চোখ থাকে আমার দিকে।

আমি কেবল আঁড়চোখে কোনরকমে একবার দৃষ্টিটা সেদিকে ঘুরিয়ে এনেই জোরে ধমকে উঠি, থামো। তিয়া থেমে যায়, সাথে সাথেই থেমে যায়। করো, সবগুলা শেষ করো। আমি গম্ভীরস্বরে আদেশ দেই। আমি সবগুলাই পারি, শুধু শুধু কষ্ট করতে পারবো না।

সবগুলা করে তারপর বলো পারি। আমি সবগুলা করবো না, ব্যস। আমি বলেছি তোমাকে সবগুলা করতে হবে, তুমি করবে। তো প্রায়ই পড়া নিয়ে এরকম টানাটানি চলে। মাঝে মাঝে আমি জিতি, মাঝে মাঝে তিয়া।

কখনো কখনো মনে হয় আমি না তিয়াই আমাকে পড়াচ্ছে। তিয়ার ওপর জোর খাটিয়ে কাজ করানো খুবই কঠিন মামলা। মেয়ে মানুষ, গায়ে হাত তোলারও উপায় নেই। তার উপর বাপের পেয়ারের কন্যা। বাপ থাকে অ্যামেরিকায়, বাপের কড়া নির্দেশ মেয়েকে পেটানো যাবে না।

কী আর করা? মায়ের কাছে বিচার দিয়ে আর ধমকি-ধামকি-রাগারাগি করে যতটুকু চালানো যায়, সেভাবেই চলছে। ইদানীং আবার তিয়াকে নিয়ে আমার অন্য টেনশনও হচ্ছে। সেদিন বললো, ওই পাশের বিল্ডিংটার একটা ছেলে নাকি ওকে দেখতে পেলেই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকে। দেখে মিটিমিটি হাসে। শুনে আমার মাথা দিয়ে আগুন বেরুচ্ছিলো, যৌবনের বাতাস মাত্র লাগতে শুরু করেছে তিয়ার গায়ে, এখনই এরকম হলে কদিন পরে তো..., আমার নিশ্বাস আটকে আসছিলো, জিজ্ঞেস করলাম, আর তুমি? তিয়া খিলখিল করে হেসে উঠলো, আমি আবার কী করবো? বাধ্য হয়ে ঘরের জানালা বন্ধ করে দেই।

আমি ঘড়ি দেখি। আধাঘণ্টা হয়েছে পড়াতে এসেছি। আর বিশ-পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই তিয়ার মা নাস্তা নিয়ে আসবে। আজকে সম্ভবত নুডুলস্। খানিক আগে অফভয়েসে শোনা গেলো, কাকে যেন নুডুলস্ আনতে পাঠানো হচ্ছে।

ভালোই, নুডুলস্ আমার পছন্দের একটা খাবার আর তিয়ার মা’র হাতে বানানো নুডুলস্ তো অসাধারণ, বাংলাদেশে আর কোথাও আমি এতো ভালো নুডুলস্ খাইনি। একদিন সুযোগ বুঝে এ-কথাটাই তিয়ার মাকে বলতে তিনি খুশি হয়েছিলেন এবং এর পর থেকে দেখা গেলো নাস্তা হিসেবে ঘন ঘন নুডুলস্ আসছে। আমি আবার ঘড়ির দিকে তাকালাম। পাঁচটা বাজতে খুব বেশি দেরি নেই। অপরাজেয় বাংলার সামনে পাঁচটা বাজে মিলা আমার জন্য অপো করবে।

তিয়াকে শেষ করে সিএনজি-তে গেলেও বিশ মিনিট লেট হয়ে যাবে। কমপে একঘণ্টা না-পড়িয়ে চলে যাওয়া খারাপ দেখায়। অবশ্য তিয়া একঘণ্টার বেশি পড়েও না। আমি বেশি সময় দিতে চাইলেও কাটায় কাটায় একঘণ্টা পার হলেই মেয়েটা উসখুশ শুরু করে। তারপর হোমওয়ার্কের খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলে, নেন স্যার, হোমওয়ার্ক লিখে ছুটি দ্যান।

সিএনজি করে ইউনিভার্সিটির অপরাজেয় বাংলার সামনে যখন এসে পৌঁছলাম তখন সাড়ে পাঁচটা। ঝকঝকে বিকেল চারপাশে ছড়ানো। মিলা একটা ইউক্যালিপ্টাস গাছের নীচে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ওর মুখের কঠিন ভঙ্গি। আমি গুটি গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে অপরাধীর মতো ওর পাশে বসে বললাম, সরি।

মিলা কটমট করে তেরছা চোখে একবার আমাকে দেখে নিয়ে পলকে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললো। চটে আছে মিলা। চটারই কথা। শুক্রবার ও ছায়ানটে গান শিখতে আসে। গানের কাস শেষ হয় পাঁচটা বা পাঁচটার আগেই।

এতোণ শাড়ি পড়া একটা সুন্দরী মেয়ের জন্য একা একা অপো করা মোটেই সুখকর কাজ না। আইÑ, শোনো নাÑ বাসায় গেস্ট আসছিলো তো, বের হতেই দেরি হয়ে গেছিলো। আমি আস্তে আস্তেকৈফিয়ত দেয়ার সুরে বলতে থাকি কিন্তু মিলার মুখ এইদিকে ঘোরে না। আমি কণ্ঠে আদুরে ভঙ্গি আনি, কী করবো বলো? ওই টিউশনিতেও-তো একঘণ্টার নীচে পড়ানো যায় না। শুক্রবারসহ তিনদিন মোটে পড়াইÑ কথা আর শেষ করা হয় না, মিলা গরম-চোখে তাকিয়ে ছ্যাৎ করে ওঠে, টিউশনিটা তুমি ছেড়ে দিতে পারো না? দরকার কী তোমার টিউশনির? সপ্তাহের একটা দিনও আমারে সময় দিবা না? তিয়াকে আমি কাস ফাইভ থেকে পড়াচ্ছি।

স্বভাবমতো যতœ নিয়ে পড়ানোয় প্রথম পরীায় ভালো করে। ভালো টিচার হিসেবে আমার একটা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়ে যায়। অংকে বহুকষ্টে পঞ্চাশ পাইয়ে ওকে সিক্সে উঠাই। এদিকে আমারও মাস্টার্স শেষ হয়ে যায়। এখন ছয় মাস হলো একটা মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করছি।

সাড়ে সতেরো হাজার টাকা বেতন। আমার চাকরির সুখবরটা শুনে তিয়ার মা হাসিমুখে বলেছিলেন, ভালোই তো। ..অফিস-টাইম পাঁচটা পর্যন্ত? তাহলে আর অসুবিধা কী? তুমি তো আসো সন্ধ্যার পরে। কষ্ট করে হলেও আমার মেয়েটাকে তুমি পড়াও বাবা, দরকার হলে একদিন কম আসো। ছোট্ট টুনটুনিটাকে ছেড়ে আমিই কি যেতে চাই? চাকরির কথাটা বলে নিজের একটু দাম বাড়িয়ে নিলাম আর-কি।

মাস শেষে দেখা গেলো চারদিনের জায়গায় তিনদিন পড়ানোর পরেও বেতন পাঁচশো টাকা বেড়ে গেলো। আমি কাঁচুমাঁচু মুখে উত্তর দেই, অনেকদিন ধরে টিউশনিটা করাই, একটা ভালো রিলেশন হয়ে গেছে। ..চাকরি পেয়েতো ছেড়েই দিতে চাইছিলাম.., তাছাড়া বেতন আর টিউশনির টাকাটা মিলে একটা রাউন্ড ফিগারÑ বিশ হাজার টাকা আসেÑ কথাটা বলে আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিলাম, মিলা আমার দিকে তীক্ষ্মচোখে চেয়ে হঠাৎ েেপ যায়, বাজে কথা না-বলে সত্যি কথাটা বললেইতো পারো? বলতে পারো না তুমি ঐ মেয়ের প্রেমে পড়ছো? তিয়াকে জড়িয়ে মিলা এমন একটা কথা বলবে আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি। মেয়েদের কি ঈগল-চোখ? মনের ভিতরটাও দেখে ফেলতে পারে? মিলার কাছে কি আমার অবচেতন মনের কোনো আচরণে ধরা পড়েছে তিয়ার প্রতি আমার দুর্বলতা? হঠাৎ বুকের ভেতরটা ফাঁকা মাঠের মতো শূন্য লাগে, নিজেকে অপরাধী মনে হয়। এই প্রথমবারের মতো মিলার চোখের দিকে তাকাতে সংকোচ লাগে।

মিলা তো মিথ্যে বলেনি, আমি বোধ হয় তিয়ার প্রেমেই পড়ে যাচ্ছি। দেখার প্রেম। তিয়াকে আমার কেবল দেখতেই ভালো লাগে, এছাড়া অন্য কোনো ব্যাপার নেই। ও যখন বইখাতা বুকে চেপে আমার কাছে পড়তে আসে, চেয়ারে এসে বসেÑ কী অদ্ভুত সুন্দরভাবে যে তিয়া হেঁটে আসে! ছোটোখাটো টুনটুনিটা ছন্দের তালে তালে যেন হাঁটে, আমি দেবীর দৃষ্টিতে ওকে দেখতে শুরু করি, কারণ আমার দেখা শুরু হয় পা থেকে। আমি দেখি ছোট্ট দুটি কোমল পা আমার দিকে এগিয়ে আসছে..।

আমি অপোয় থাকি ও কখন পড়ার মাঝে কোনো অজুহাতে উঠে অন্য ঘরে যাবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো ওর প্রসারমান সদ্য কিশোরী-নিতম্বের উল্লাস, ওর কাঁধের ওপর নেমে আসা চুলের গোছার নাচানাচি। হ্যাঁ, আমি কেবল ওকে দেখতেই ভালোবাসি, শুধু চোখভরে দেখতে আর কিচ্ছু না। এটাকে প্রেম বলা যায় কিনা আমি জানি না। মনে পড়ে স্কুলজীবনে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওর পাশের বাড়ির মেয়েটির নামের প্রেমে পড়েছিলো। বন্ধুটি সমস্ত বই-খাতা-ডিকশনারি-টেবিলে এমনকি ওদের ঘরের দেওয়ালের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত মেয়েটির নাম লিখে লিখে ভরিয়ে ফেললো।

আমি যতোই ওকে বলি, তুই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিস। ও বলে, না, ওর নামটা আমার ভালো লাগে তাই লিখি। এর দুই বছর পর শুনলাম, বন্ধুটি ততোদিনে মেয়েটির গভীর প্রেমে তলিয়ে গেছে। আমার েেত্রও কি সেরকম কিছু ঘটতে যাচ্ছে? আমি হতভম্ব গলায় বলি, তু-মিÑ, কী বলছো এসব? একটা বাচ্চা মেয়ে, মাত্র কাস সিক্সে পড়ে! ওকে নিয়েÑ ছিঃ, এতো ছোটো মনের তুমি! মোটেই দমে না গিয়ে মিলা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, তাহলে তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছ না কেন? তোমার সমস্যাটা কোথায়? বলো আমাকে? আমি যখন ফোর্থ ইয়ারে মিলা তখন ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। একই ডিপার্টমেন্ট।

মাস্টার্সে এসে কিভাবে কিভাবে যেন ওর সাথে হয়ে গেলো। চাকরি পাওয়ার পরপরই মিলা বললো, এবার আস্তে আস্তে বিয়ের প্রস্তুতি নাও, বাসা থেকে আমার বিয়ে দিয়ে ফেলতে চাচ্ছে। চাকরি পাওয়ার পর ফ্যামিলিও আমার বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী। আমাদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি। বাবা চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন, তার আগেই মাথা গোঁজার জন্য একটা দোতলা বাড়ি করেছেন, একমাত্র বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে।

এখন বাড়ি ফাঁকা। মা-বাবা চাচ্ছেন ঘরে বউ আসুক। মিলাকে সে কথা বলেছিও। কিন্তু তার মানে এই নয় যে খুব শিগগিরই আমাদের বিয়ে করতে হবে। এতো তাড়াহুড়ার কি আছে? তাছাড়া বিয়ে করে ফেললে ছোট্ট টুনটুনি পাখিটার কি হবে? ওকে নিশ্চয়ই আমি আর পড়াতে পারবো না? এ-কারণে বিয়ের কথাটা আসলেই মনটা কেমন আকুলি-বিকুলি করে, ছোট্ট টুনটুনির দুষ্টমিভরা মিষ্টি মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ওকে না-দেখে আমি থাকবো কি করে? কিন্তু মিলাকে আমি সত্যিকারের ভালোবাসি, ওর দিকে তাকাই আমি উপর দিক থেকেÑ যে দৃষ্টিতে কাম থাকে।

এই যে প্রতি শুক্রবারে মিলা শাড়ি পরে আসে, আমি ফাঁকে-ফোঁকড়ে সুযোগ বুঝে চোরা-চাহনি দিয়ে ওর উন্মুক্ত পেটের গোল চাঁদটি দেখার চেষ্টা করি, আর ভাবি বিয়ের পর সেই গোলকের সুরা আমি অঢেল পান করবো। আমি মিলাকে পেতে চাই তবে ওই টুনটুনি পাখিটাকেও যে দেখতে চাই! টুনটুনিকে কেবল দেখতেই চাই, পেতে না। তুমি এসব কি উলটা-পালটা কথা বলতেছো? বিয়ে করতে চাইবো না ক্যান? আমি অধৈর্য হয়ে মিলার মুখের দিকে তাকাই। মিলার গাল লাল হয়ে গেছে, মুখ যেন তিরতিরিয়ে কাঁপছে। মিলা রাগ সামলাতে চেষ্টা করে বলে, কেন চাচ্ছো না সেটাই তো জানতে চাচ্ছি? আমি বোঝাতে চেষ্টা করি, দ্যাখো, বিয়ে তো কোনো ঘটনা না, করলেই করে ফেলা যায়।

কিন্তু তোমার অনার্সটা কমপ্লিট করে নিলে ভালো হয় না? বিয়ের পর পড়াশুনায় ঢিলামি এসে যায়। ..আমি চাচ্ছিলাম তোমার অনার্সটা শেষ হোক আর এই ফাঁকে হাতে কিছু টাকা-পয়সা জমাইÑ আমার বাসায় আর অপো করতে চাচ্ছে না। আমি বলে বলে এতো দিন রাখছি। তুমি একটু বুঝতে চেষ্টা করো। মিলার গলা এতণে প্রায় স্বাভাবিক শোনায়।

একটু থেমে বলে, আজকে সকালে ফুফু এসে বলতেছে, একটা ড

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।