জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
সামাজিক বন্ধনটা মানুষকে এমনভাবে বেঁধেছে যে, এখানে একজন আরেক জনের পরিপূরক। ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ থেকে নিয়ে দৈনন্দিন সবকিছুর পাশাপাশি চিন্তাধারায় সমাজের মানুষেরা পরস্পর নির্ভরশীল। তাই দেখা যায় কোথাও কিছু ঘটলে বাতাসের বেগে তা ছড়িয়ে পড়ে লোক থেকে দূরলোকে। সমস্যা হয় তখনি, যখন এই ছড়িয়ে পড়াটা তার আসল রূপ হারিয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করে। অবশ্য এর জন্য সমাজ ব্যবস্থা নামক সংঘবদ্ধ প্রক্রিয়াটি দায়ী নয়; দায়ী তার ধারক-পরিচালক-বাসিন্দাদের অজ্ঞতা।
কথিত আছে যে, কারো ঘরে একটি কালো দেখতে সন্তান জন্মেছে আর এ খবর বিকেল পর্যন্ত গড়িয়ে "কালো সন্তান" "কালো কাকে" পরিণত হয়ে গেছে লোক মুখে মুখে। আবার কোথাও কারো মনে জাগলো যে, যাত্রার প্রাক্কালে খালি কিছু দেখতে নাই, দেখলেই লক্ষ্য অর্জন ব্যর্থ হবে। ব্যক্তির ধারণার প্রকাশ এক সময় অন্যদেরকেও আচ্ছন্ন করে দিল; মূর্খতার এই পর্যায়ের নাম কুলক্ষণ।
কুলক্ষণের কোন বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা নেই। কেননা, বিজ্ঞান বিশ্বাসের ধার ধারে না।
তাই বলে শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদিতেও আবার মানুষের জীবন চলে না, তদুপরি যেখানে বিজ্ঞানের থিওরী যুগে যুগেই পাল্টায়। কুলক্ষণ এক ধরণের বিশ্বাস, কিন্তু ভ্রান্ত বলে এবং কোন সঠিক আগমনী অথবা প্রারম্ভ সূত্রের সাথে সম্পর্ক রাখে না বিধায় সত্যিকারের বিশ্বাসের মাপকাঠিতেও তা স্থান পায় না। সমাজে প্রচলিত কুলক্ষণের মধ্যে রয়েছে, 'ডান চোখ ফড়কালে ভাল কিছু ঘটবে আর বাম চোখ ফড়কালে মন্দ ঘটবে', তেমনিভাবে রয়েছে পাঁজরের ডান-বাম, পরীক্ষার পূর্বে ডিম খেয়ে গেলে ফলাফল ডিম বা শূন্য হবে, –এমনি হাজারো কুলক্ষণের জঞ্জালে ভরপুর আমাদের সমাজ।
কুলক্ষণের জন্ম মূলত কুসংস্কার থেকে আর কুসংস্কার অজ্ঞতা থেকে। অজ্ঞতা প্রতিরোধে শিক্ষাই যথেষ্ট নয়; বরং প্রয়োজন সঠিক জ্ঞানার্জন ও তার অনুধাবন।
কেউ নিছক ঠাট্টার ছলে কিংবা বাচ্চাকে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে কিংবা গল্পের বাতিকে মুখ ফসকে কিছু একটা বলেই ফেললো কখনো। শ্রোতার যদি সে ব্যক্তির প্রতি আস্থা থাকে কোন কারণে তবে তাতে সে বিশ্বাস করে বসে। কখনো কখনো এই বিশ্বাস যদি বাস্তবেও রূপ নেয় স্রষ্টার পূর্ব নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী কিংবা কাকতালীয়ভাবে, ব্যস বিশ্বাসের দেয়াল আরো পোক্ত হয়ে গেল। অথচ বাস্তব খুঁজলে দেখা যাবে যে, হয়ত ঘুমের ঘাটতিতে কিংবা অতিরিক্ত দৃষ্টি নিবন্ধনে অথবা রক্ত সঞ্চালন ঘটিত অন্য কোন কারণে চোখের পাতা লাফিয়েছে অথবা শরীরের কোন অংশের মাংস পেশী টান টান হয়েছে আর অন্ধ বিশ্বাসী-যে কি না বিশ্বাসের উৎস-উৎপত্তি কোন কিছুরই খোঁজ না করে শুধুই লোকমুখে শুনেই আস্থাশীল হয়-তাতেই প্রাণান্ত করে বসে আছে।
ইসলাম কখনোই এসব মূর্খতাকে প্রশ্রয় দেয়নি।
জাহেলী যুগেও নানাবিধ কুলক্ষণের প্রচলন ছিল। তাই সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা নিয়েছেন। উরওয়া বিন আমের রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত: ((রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শুভাশুভ লক্ষণের উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন: এর মধ্যে উত্তম হলো শুভ লক্ষণ পোষণ করা এবং কুলক্ষণ মুসলমানকে বিরত রাখতে পারে না। তোমাদের কেউ অপছন্দনীয় কিছু দেখলে সে যেন বলে: أللهُمَّ لاَ يَأْتِيْ بِالحَسَنَاتِ إلاَّ أنْتَ ، وَلاَ يَدْفَعُ السَّيَِّئَاتِ إلاَّ أنْتَ ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةّ إلاَّ بِكَ অর্থাৎ, "হে আল্লাহ! আপনি ব্যতীত কেউ কল্যাণ নিয়ে আসতে পারে না, আপনি ব্যতীত কেউ অকল্যাণ সরাতে পারে না এবং আপনার সাহায্য ব্যতীত কেউ ভাল কাজ করতে ও মন্দ কাজ থেকে বাঁচতে পারে না"। )) [সহীহ্, আবু দাউদ: ৩৯১৯]
ইসলামী জ্ঞান ও জীবনধারাই মানুষকে পারে কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে সত্যের আলোতে নিয়ে আসতে।
আসুন আমরা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করি এবং জীবন, সমাজ ও দেশ থেকে কুসংস্কারের অন্ধকার দূরীভুত করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।