তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।
ইউনিতে আমাদের বন্ধুদের মাঝে একটা অলিখিত নিয়ম ছিলো। কারো অনুপস্হিতিতে যদি কোন বন্ধু এসে যায় তাহলে সমস্ত খরচ যে উপস্হিত থাকবে তাকেই বহন করতে হতো। নিজেরা হয়ত সপ্তাহে ৫ দিনই ডিম দিয়ে খাবার খাই। কিন্তু বন্ধুরা উপস্হিত হলে পোলাও,বিরয়ানী খাওয়া হতো প্রচুর।
দেশের বেশির ভাগ লোকজনের যাওয়া আসা ফ্রাঙ্কফুট এয়ারপোর্ট দিয়েই। বিশেষ করে জার্মানির সাউথে যারা থাকেন। পরিচিত আত্মীয়,বন্ধুদের কেউ দেশ থেকে আসলে বা দেশে যেতে চাইলে এয়ারপোর্টে যেতে হয় প্রায়ই। স্টুডেন্ট অবস্হায় খুব বেশিই যাওয়া হতো। লোকজনকে রিসিভ করে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনে তুলে দেওয়াই ছিলো আসল দায়িত্ব।
মাঝে মাঝে ট্রেনের দেরী হলে বসে বসে গাজানো। কয়েকদিন পর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। পাবলিক এসব সাহায্য সহানুভুতির কথা পরে ভুলে যায়। জার্মানিতে থাকলে হয়ত মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয় কিন্তু যারা দেশে যায় ওরা ভুলেও একটা মেসেজ পাঠায় না। ধীরে ধীরে নিজেকে গোছিয়ে নিলাম।
এখন কামলা খাটি। সপ্তাহে ২দিন ছুটি। পার্টি,রেষ্ট নিয়েই সময় কেটে যায়। খুব কাছের কেউ ছাড়া এখন আর ঐদিকে পা বাড়াই না।
সামওয়্যারের লোকজন ওদের নরওয়ে ট্যুর শেষে মিউনিক আসার কথা ছিলো (আনিকার পোষ্ট অনুসারে)।
হঠাত করে রাত ১১:৩০ টায় টিটু ভাইয়ের ফোন। ওরা ফ্রাঙ্কফুট আসবে। আমি যেনো ওদের রিসিভ করে ওদের নিয়ে উনার ওখানে চলে যাই। আমার ঐদিন একটা গ্রুপ মিটিং ছিলো তাই আসতে পারবো না। আর রবিবারটাকে একটু নিজের মতো করে রেষ্ট নিতে চাই।
পরের দিন থেকে আবার কামলা। উনি ফ্লাইট নাম্বার দিয়ে দিলেন। মা'কে জানালাম কাল সকালে আমি এয়ারপোর্টে যাব। কিছু গেষ্ট আসবে। এতো রাতে কিছু বানানো যাবে নাকি? মা তাড়াতাড়ি একটা কেক বানালো।
আমি কিছু চানাচুর আর চকলেট ব্যাগে ঢুকিয়ে ঘুমুতে রাত ২:৩০ টা। পরেরদিন সকাল ৬ টায় টিভি অন করে ফ্লাইট সিডিউল দেখে তো ঐ ফ্লাইট নাম্বার খুজে পাই না। সাথে সাথে ইন্টারনেট অন করে অনলাইনে ও পেলাম না। জিমেইলে ঢুকতেই দেখি হাসিব ভাইয়ের দুইটা মেইল। উনি ফ্রাঙ্কফুট আসতেছেন।
এদিকে ঝড়ো ও আমাকে অনলাইনে দেখে ম্যাসেজ পাঠাতে শুরু করেছে। হাসিব ভাইকে ফোন দিয়ে জানলাম উনি ফ্লাইটের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ঝড়োকে পরিস্হিতি বলাতে উনি অফ। এখন টিটু ভাইকে ফোন দিয়ে জানা গেলো ফ্লাইট নাম্বার ভিন্ন। এবং ফ্লাইট ৮:৩০ মিনিটে ল্যান্ড করতেছে।
কোন মতে চা খেয়ে সাইকেল নিয়ে স্টেশনের দিকে দৌড়। মা'কে রাতে একটু হিন্টস দিয়েছিলাম। হয়ত ৪/৫ জন গেষ্ট আসতে পারে। অতিরিক্ত সর্তরকথা।
প্লেন ঠিকমতোই এসেছে।
কিন্তু সবকিছু শেষ করে উনাদের আগমন ১০ টায়। একজনের লাগেজে কি যেনো সমস্যা। উনি এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছেন। উনাদের কারো টিকিটেই হোটেল ছিলো না। রবিবার আবার জার্মানির সবকিছুই বন্ধ থাকে।
উনাদের কেউ কেউ আবার হোটেল শেরাটন, মারিটিম এ যাওয়ার প্লান করছেন। শুধু আনিকা, মৌসুম ওরা কোথাও ঘুরতে ইচ্ছুক। এদিকে হাসিব ভাই মেইন স্টেশন থেকে ফোন করেই যাচ্ছেন। ট্রেনের টাইম কম। এই ট্রেন চলে গেলে পরের ট্রেনে গিয়ে ফিরে আসতে গেলে কোন কিছু দেখা হবে না।
যাক, অনেক ব্লা, ব্লা'র পর উনারা যেতে রাজি হলেন। উনাদের ট্রেন স্টেশনে পৌছে দিয়ে আমি বিদায়। হাসিব ভাইয়ের সাথে প্রথম দেখা হলো। কিন্তু খুব একটা আলাপ করতে পারিনি। তবে কিছু কিছু ব্যাপারে আমার মেজাজ ছিলো সপ্তমে।
ঐগুলো এখানে বাদ। আবারও তওবা করলাম এয়ারপোর্টে কাউকে দিতে বা নিয়ে আসতে যাবো না। কিন্তু কপাল। পরের সপ্তাহে আর একজনকে টিকেট কেটে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দিয়ে আসতে হলো।
গত সপ্তাহে আবারও গ্রুপে মেইল।
দেশ থেকে কিছু ক্ষুদে বিঞ্জানী আসতেছেন। ওদের গ্রুপ লিডার জাফর ইকবাল স্যার। ওরা ফ্রাঙ্কফুট হয়ে যাবে। ওদের প্লেন যে সময় ল্যান্ড করবে তখন ঐ লাইনে কোন ট্রেন নেই। তাই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একজন গ্রুপে মেইল করেছে।
কাজের চাপে সব মেইল পড়া হয় না। শুক্রবার রাত থেকে ফোন শুরু। কিভাবে ওদের রিসিভ করা হবে, কোথায় থাকবে, কিভাবে থাকবে..। এতো বড় একজন মানুষকে কি আর ফ্লোরিং করে রাখা যায়। আমি ভাইয়াকে বলে ২টা রুমের ব্যাবস্হা করলাম এবং আমার বাসা সম্পর্কে আমি আমার অবস্হান ব্যাখা করলাম এই বলে যে, সবাইকেই আমার বাসায় রাখতে পারবো।
কিন্তু ওদের খুব ভোরে ট্রেন ধরতে হবে। আমার বাসা যেহেতু সিটি থেকে একটু বাইরে। তাই ওদের বেশি কষ্ট হবে। সবাই ওদের রাখতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু সবারই কিছু না কিছু কমতি আছে।
শেষ পর্যন্ত একজনের বাসা সিলেক্ট হলো। এখন ল্যাপ, বালিশ, ঘটি-বাটি নিয়ে সকাল থেকেই দৌড়াদৌড়ি। সবগুলো অপশন ছিলো আমাদের হাতে। এখন স্যারের সাথে কথা বলে ফাইনাল করতে হবে। বিকেলে প্রায় ৭/৮ জন এয়ারপোর্টে হাজির।
স্যার তো একটা গেভারটিন প্যান্ট আর একটা ফতোয়া পরে হাজির। আমাদের সবার গায়ে সামার জ্যাকেট দেখে একটু অবাকই হলেন। আবার অভয়ও দিলে লাগেজে উনার গরম কাপড় আছে। স্যার এসে এতো বাঙালি দেখে তো অবাক। আমরা বল্লাম সবাই তো আসতে পারে নাই।
যাওয়ার সময় যখন পার্টি হবে তখন হয়তো সবাইকে দেখতে পাবেন। ওদের নিয়ে রাত ১২ টা পর্যন্ত আড্ডা, ফটো সেশন, খাবার। এতোগুলো বাঙালী খাবারের আইটেম দেখে সবারই চোখ ছানাবড়া। শেষ পর্যন্ত স্যার ঐ বাসায়ই থেকে যেতে চাইলেন। আমরা বিদায় নিলাম।
এই বছরটা মনে হচ্ছে পার্টির জন্য। শুরু হয়েছে ক্যাসেলে পার্টি দিয়ে। শেষ যে কবে হবে আল্লা জানে। একটা শেষ না হতেই আর একটা। বিরাট বিরাট পার্টি।
সবগুলোই ২ দিনব্যাপি পার্টি। এরমধ্যে যারা পরিবার নিয়ে থাকেন তাদের তো খবর। সবারই আত্মীয়-স্বজন ইউরোপ থেকে সামার উপলক্ষ্যে উড়ে আসতেছে । দাওয়াত দাওয়াত খেলা চলছে। যদিও সবাই আবহাওয়া নিয়ে খুবই চিন্তিত।
জুলাই মাসের শুরুতেও যে পরিমান ঠান্ডা। সকালে ১০/১১ ডিগ্রি। বন্ধুদের সবাই সামারের ছুটির সিডিওল নিয়ে ব্যস্ত। এখন বন্ধুদের ফোন করলেই শুরু প্লেনের টিকিটের গল্প। নিজে ও দেশে যাওয়ার প্লান।
দেশে যাবার আগে একবার হল্যান্ড এবং ফ্রান্সে যেতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।