ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের। বাংলাদেশের মানুষের কলঙ্ক মোচনের একটি দিন হিসেবে ২১/১/১৩ এর এই দিনটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই থাকবে। ১৯৭৩ এ বঙ্গবন্ধুর শুরু করা যুদ্ধাপরাধীর যে বিচারটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
দীর্ঘ ৪০ বছর পড়ে এসে তা সফলতার মুখ দেখল। সেইসাথে প্রমাণিত হল কোন ষড়যন্ত্রই অপরাধীদের রক্ষায় সফল হয় না। একদিন না একদিন কাঠগড়ায় দাড়াতেই হয়। কোন দীর্ঘশ্বাস কোন অশ্রুই বৃথা যায় না। আজও যারা এই ঘৃণ্য অপরাধীদের বাচাতে উঠেপড়ে লেগেছে।
তাদের জন্য কুম্ভাশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে ইতিহাস তাদেরও ক্ষমা করবে না।
একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন (সদস্য) আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে ধারার সূচনা করলেন নিঃসন্দেহে তার ফল হবে ইতিবাচক এবং সুদূরপ্রসারী। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি এ দেশে গড়ে উঠেছে তার ফলশ্রুতিতেই আমরা হারিয়েছি অনেক সূর্য সন্তান। এমনকি যিনি এই সংস্কৃতি লালন করেছেন তাকেও। সেইসাথে কালিমালিপ্ত হয়েছে দেশ।
আর তাই ঐতিহাসিক এ রায় এ জাতির কলঙ্ক মুক্তির প্রথম সোপান।
একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অপহরণ ও নির্যাতনের বিচারের বহুল প্রতীক্ষিত এ রায় কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর দাবী নয়। এটা এ দেশের সকল স্তরের সব মানুষের দাবী।
স্বাধীনতাযুদ্ধের মূল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সদস্যকে ত্রি পক্ষীয় চুক্তির আওতায় ছেড়ে দেওয়া দেওয়া হলেও যে সেই সুযোগে তাদের সহযোগীদের বিচার করা যাবে না এমনতর কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
একটি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরুদ্ধ মন ভাবাপন্ন মানুষ থাকতেই পারে।
আর সে জন্য কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানোও হয় না। দাড় করানো হয় তখনই, যখন কেউ সরাসরি হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশান্তর করাসহ নানাবিধ মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরেন। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার করা জাতীর অবশ্য কর্তব্য। যারা এদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন যারা তাদের মহাপাপকে লঘুপাপ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। যারা তাদের মহান সংসদে প্রবেশের অধিকার দেন।
যারা তাদের গাড়ীতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন তাদের জন্যেও ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।
এই রায় ঘোষণার পর থেকেই সাধারণ জনমনে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় হিসেবে দেখা দিয়েছে তা হল এই রায় কার্যকরী হবে তো?
এ প্রশ্নের পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। আমরা দেখেছি গোয়েন্দা নজরদারি থাকা স্বত্বেও বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
আমরা দেখেছি স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ১ নং ট্রাইব্যুনালের বিচারের রায় প্রলম্বিত করার সফল ষড়যন্ত্র।
আমরা দেখেছি এই বিচারকে বন্ধ করার জন্যে আন্দোলন করার মত ধৃষ্টতা দেখাতে এমনকি সেই আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দেয়ার মত প্রধান বিরোধী দলকে অনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেও।
জানা যায় অপরাধীদের এবং তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের এখন একমাত্র লক্ষ বিচারকে বিলম্বিত করা। তার কারণটি সহজেই অনুমেয়। যা এই আশংকাকেই উস্কে দেয়। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজো আমরা এই আশংকা মুক্ত হতে পারছি না। আমাদের নেতৃবৃন্দ আমাদের সমর্থন আশা করেন অথচ আমাদের আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হন!
তারা কি সত্যিই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোভাব বুঝতে অক্ষম নাকি এখনো দূরবর্তী অঙ্গুলি নির্দেশে তারা চলেন নিশ্চয়ই এ প্রশ্নও অবান্তর নয়।
চলমান বিচার প্রক্রিয়া যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় এবং দ্রুততম সময়ে এই রায় কার্যকরী করা হোক। এ দাবী আজ প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রাণের দাবী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।