যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
নগরের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের অলিক স্বপ্নদোষের কথা বাদ দিলে যে স্বপ্নটুকু রয়ে যায় মহানগরের বাকী অধিকাংশের জন্য সেটাকে স্বপ্ন বলেই হয়ত অনেকের মনে হয় না। কেননা তথাকথিত স্বপ্নের যারা রচয়িতা তারা কোন না ভাবে হয়ে ওঠেন মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত ইন্টেলেকচুয়াল। তারা একটা বিশেষ স্বপ্নের চোখেই দেখে থাকেন এই নাগরিক অধিকাংশকে অর্থাৎ ঢাকা শহরের নিম্নআয়ের মানুষজনকে।
তবে এই চেতনা মহানগরেই বন্দী থাকেনা, ছড়িয়ে পড়ে অন্য নগরে, মফস্বলে এমনকি গ্রামে। আর তাই নগরের নিশাচর, হুমায়ুন আহমেদের হিমু হবার প্রত্যাশায় থরথর কেঁপে ওঠে কতনা কিশোর কিশোরীর মন। এমনকি কাংখিত প্রেমের জন্য অন্তত পোষাকে আর আচরণে কিছুটা পাগলামি ভরে এলাকার পাতি ইন্টেলেকচুয়াল, বড় ভাই প্রাইভেট পড়ানোর নামে সুন্দরী বালিকাদের মুগ্ধ চোখ দেখার জন্য কতই না পরিশ্রম করেছেন। তবে সে যুগেরও অবসান হয়েছে বেশ ক-বছর হল। এখন ফারুকীর পাল পাল উৎপাদনে মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে এমন একট দুটো বড় ভাই, সাংস্কৃতিক বা নাট্যকর্মী।
মারজুকের আবাল অপনিভয়কে অকুতভয় সচ্ছ্যন্দ বহি:প্রকাশ হিসেবে গণ্য করে অনেকেই দেখি পিছপিছ ঘোরে। আজিজে তাই একা দেখা যায় না প্রায় কাউকেই। দল না থাকলে কি সফল বলা যায়। তবে পরিণামে সবাই কর্পোরেট। যে যত দ্রুত সে তত সফল।
এমনি নাগরিক ইন্টেলেকচুয়ালে তৈরী হয় এক অলিক বাস্তবতা, যেটা দেখে মধ্যবিত্ত দর্শক সবচেয়ে আন্দোলিত হয়, আমোদিত হয়, হর্ষ উল্লাসে মেতে ওঠে।
আর তাই প্যাকেজ নাটকে বা ধারাবাহিকে কাজের বুয়ার চরিত্রগুলোর এতটা জনপ্রিয়তা। তবে কেউ কেউ আরো একটু এগিয়ে যান আর নগরে আমদানী করেন বাউল আর লালন। কিন্তু আর সব আমদানীর মতই ট্যাক্স এত বেশি পড়ে যে মহানগরের উপযোগী তাকে হয়ে উঠতেই হয়। আহা লালন।
তারপরও ডিজে আর আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড নিয়ে সফল কর্পোরেট মেতে ওঠে ডি-রকস্টারের খোঁজে।
তবুও সিরিয়াস নাট্যকার, সাহিত্যিক বা নির্মাতা কি যেন বলে...ঐ যে নাসরিন জাহান যে মাঝে মাঝে বলেন, হ্যা বাঙলার যাদুবাস্তবতা, সেটা লিখতে থাকেন। আমি ভাবি বাঙলার নতুন যাদুবাস্তবতা কি জিনিস বাপ। ! এমনকি মাঝে মাঝে জেমসও দেখি গেয়ে ওঠে লাল টুক টুক লাল টুক টুক সেলাই দিদিমনি। কিন্তু গণমাধ্যমে, শিল্পে যে বাস্তবতা নির্মিত হয় তাতে নিম্নআয়ের মানুষরাই সবচেয়ে বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে।
একি তাদেরই কথা!! একি তাহাদেরই কথা!! তবে এখন তারাও আর বিস্মিত হয় না কেননা এখন ক্যাবেল টিভি ভিসিডি আছে আর আছে ব্যাচেলর, হৃদয়ের কথা, হঠাৎ বৃষ্টি একেবারে দারুণ ভদ্র পারিবারিক ছবি। একটানে সবাইকে সিনেমা হলে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই সবাই কারা? শিক্ষিত মধ্যবিত্ত আর তাদের চেতনা দ্বারা প্রভাবিত মানুষজনই তো।
তবুও মধ্যবিত্ত; ভালো নয় মনে করে নাগরিক ইন্টেলেকচুয়াল নায়িভ হবার চেষ্টা করে। কি লেখায় কি কথায় কোনখানেই যাতে মনে না হয় এটা কোন শিক্ষিত মাইনষের পড়াশুনা করা তথ্যবাজের লেখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তর্ক শেখা মেধাবী লোকের লেখা। এটাকে মনে হতে হবে এটা নাইভ, এটাই এখন চল। কিন্তু এইটা শিখছেন কোথা থিকা....পইড়া জাইনা, বুইঝা, রাজনীতি কইরা। তারপরও এক অভিনব ন্যাচারালরে খোঁজা নগরে কিংবা নগর থেকে পালিয়ে। অথচ মধ্যবিত্তের রোমান্টিক স্বপ্নগুলান যে নাই, হয়ত কোনদিনই ছিল না যেগুলারে তারা অধিকাংশের স্বপ্ন বইলা চালাইছে।
আরেকটা অভিনব দল আছে, তারাও কিন্তু পিছায় নাই, তারা হইল এনজিওবাদী মিডিয়া বা সাহিত্য। সামনে তারাই লিড দিব, তারাই আমাগোরে বুঝাইব। এমনকি কাজকাম ভালামত করলে আমারে ভাড়া করব, আমারে ভাড়ায় খাটাইবো। আমিও ফাল দিয়া করুম। হেরা আবার কয় হেরাই নাকি তাগোরে সবচেয়ে ভালো জানে, তাগোর স্বপ্ন বোঝে, তাগো দু:খ কষ্ট বোঝে, নারীর উপর অত্যাচার বুঝে।
কিন্তু তাগো অনেকেই ঋণের বোঝা আর সুদের টাকার কথা বোঝেনা শুনতেই চায়না। তারা শুধু মোবাইল দিতে চায় আর চান্সমত টিন খুইলা, ইজ্জত তুইলা নিয়া যায়। তারা আবার পুরুষগো বুঝতে চায় না, পুরুষগো বেশি বুঝতে আবার নিষেদ আছে।
এইরকমই কোন না দলে ঢোকার জন্য পাছার মাংস শক্ত কইরা, এটা সেটা নেটা লোটা দাবরাইয়া আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠি। খুব সকালে যদি বাইরে যাই তাইলে লালটুকটুক দিনিমনিগো পাছা দেখি আর বুক দেখি আর কবিতা লিখি, বলদের মত বলগ করি, আজিজে গেলে ইন্টে ইন্টে লেক করি।
আর তাগো স্বপ্ন লেখার চেষ্টা করি। এই খ্যামতা আমারে কিডা দিল? বারে আমি নাগরিক শিক্ষিত না? আমি সেমিনার সিম্পোজিয়াম ফাটাইয়া ফেলি না? আমি শর্ট ফিলিম বানাই না? আমি পলিসি অ্যাডভোকেসি করিনা। আমি বিজেএমইর হয়ে চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টারের ইন্সপেকশনে যাই না? আমি ফটোগ্রাফী
করে তাগো নিয়া প্রদর্শনী করিনা? আমি এমবিএ করি না? আমি মগবাজার যাই না? আমি কাঁটাবন থেকে শুকনা কিনি না? আমি বইমেলা যাই না? আমি রেডড্রাগণ যাই না? আমি ভাই ছাড়া ভাবী আর প্রেমিকা ছাড়া দেবর না? আমি নগরের মুক্তিযোদ্ধা আর নগরের রাজাকার না? আমি প্রবাসী আমি সিংগাপুর ব্যাংকক, স্কয়ার, এপোলো না? আমি ইংলিশ মিডিয়াম ঢাবি জাবি বুয়েট রূয়েট না? আমি স্পোর্ট্স জোন না, আমি রেড ড্রাগন সাকুরা, নাটক বেইলি রোড না? আমি আপ ডাউন নর্থ সাউথ না? আমার অপূর্ণতা কোথায় আমার তো স্বপ্ন আছে আমি এমনকি স্বপ্নও তৈরী করে দেই যেটা অধিকাংশ দেখে।
কিন্ত তারপরও আমার শঙকা যায়না, আমি বুঝিনা কিভাবে একই জায়গায় একই ভংগিতে একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা করে চলে। অন্য আর সবকিছুর মত ঠিকসময়ে কর্মস্থলে আসে আবার চলেও যায়।
কৌতুহল হলেও আমি তাকে কিছু বলিনা আমি নাটক দেখি আমি আনিসুল হক পড়ি। বাঙলাদেশের অধিকাঙশ আমাদের চোখে কখনো ধরা পড়ে না। শক্তিহীনের, দূর্বলের সঙখ্যার বেশি আর কম কি? তাই আমরা পৃথিবীর অর্ধাংশও দেখি না। আমরা মাগী বুঝি মানুষ বুঝিনা। মূসলমান বুঝি হিন্দু দেখিনা, বাঙালী দেখি আদিবাসী দেখি না, সাদ্দাম দেখি ইরাক দেখিনা।
যদিও চোদনে বুশও বুঝি আমেরিকাও বুঝি অথচ রেডইন্ডিয়ান বুঝিনা। আমেরিকায় এত কালো কিন্তু সাদা ছাড়া কালো দেখিনা। আমরা কমোড বুঝি হাগা বুঝিনা।
তারপরও কোন এক সকালে সারারাত না ঘুমিয়ে আমি হাঁটতে যাই, কিন্তু আমি এলোভেরার শরবত বিক্রেতার স্বপ্ন বুঝিনা, আমি বাসের কন্ডকটরের মুখ খিচানির অর্থ বুঝিনা। আমার আসলে বোঝার দরকার নাই কারণ আমি লিখব আমি যা আঁকবো, আমি যা দিয়া ফিলিম বানাবো, ব্লগে পষ্টু দিব সেটাই তো তাগো স্বপ্ন সেটাই তো তাগো বাস্তবতা।
কারণ আমার লেখার বলার কথা কওনের ভাষা জানা আছে , কাউরে যদি আমার মতও কইতে হয় তাইলে আমার ভাষাই তার শিখতে হইব। কিন্তু আমার ভাষা শিখলে সেকি আর তার মত থাকবো?
অনেকদিন আগের একটা ঘটনা; এক ঈদের দিনে আমি খাবার না খাইয়া ঘুমাইয়া পড়া এক বৃদ্ধার ছবি তুলছিলাম। তখন পাশ থেকে আমার শিক্ষিত বন্ধুটা আমারে কয়, মামা এসব ছবি তুলনের কি এখন আর ফ্যাশান আছে, এই ধরণের ছবি তো অহন পুরান হইয়া গেছে। আমি আজকেও একটা ছবি তুলছি, ভোর ছটায়। তখনি ওর কথা মনে হল।
ছবির বিষয়বস্তু মধ্যবিত্ত বয়ানে হয়ত পুরান হইয়া গেছে কিন্তু ঘটনাতো পুরান হয় নাই। এই শহরেই হাজার হাজার মানুষ নিয়মিত রাস্তায় রাত কাটায়। মধ্যবিত্তের ফটোগ্রাফে, নাটকে, গল্পে হয়ত এই কাহিনীর অহন বেল নাই বুঝলাম কিন্তু ক্যামনে ভুলি দশক দশক ধরে এই ছবিটাই মহানগরের নিত্যদিনের ঘটনা । ছবি পুরান হইলেই তো ঘটনা পুরান হয় না। উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের স্বপ্নদোষে অধিকাংশের স্বপ্ন পূরণ হয় না।
বি:দ্র: ছবিগুলো আজ ভোরে তোলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।