বিক্ষিপ্ত জীবন. . . কখনো হাসায় . . . কখনো কাদাঁয় . . . আবার কখনো নির্ভেজাল অন্ধকার ঘিরে ফেলে চারদিক থেকে . . .
আমার বাবা ২৫ বছর চাকরি করেছে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের সাথে। বলা যায় প্রথম দিকের গ্রামীণ ব্যাংক স্টাফ ছিলো সে। সেই হিসেবে জনাব ইউনূস কয়েক বার আমাদের বাসায় এসেছেন। খাওয়া দাওয়া করেছেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে উন্নতি কামনা করেছেন।
বাবা এখন আর গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করেন না। ড. ইউনূসের নোবেল জয়ের বছর খানেক আগেই গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরি থেকে পেনসন নিয়েছেন তিনি। সে যাই হোক, ইউনূস নোবেল পাওয়ার পর বাবাকে অনেক উচ্ছাসিত হতে দেখেছি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গিয়েছিলেন ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে। আর বাবাকে পাগলা ডেকে বুকে জিড়িয়ে নিয়েছিলেন ইউনূস।
আনন্দের অতিসয্যে বাবা একটা কলামও লিখে ফেলেছিলেন ইউনূসকে নিয়ে। ছাপা হয়েছিলো সাপ্তাহিক ২০০০- এ।
ইউনূসকে নিয়ে কিছুটা ফ্যান্টাসি ছিলো আমার মধ্যেও। বাবা সব সময় ইউনূসীয় পদ্ধতিতে আমাকে অনেক কিছু শেখানোর চেষ্টা করতো এবং হতাশ হলেও হাল ছাড়তো না। ইউনুস নোবেল পাবার পর আমি একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম দৈনিক ইত্তেফাকে।
আমার প্রতিবেদনের ব্যাপক সমালোচনা করে তার একটি উত্তর দৈনিক জনকন্ঠে ছেপেছিলো জনাব মোস্তফা জব্বার।
ইচ্ছা ছিলো দেশের বাইরে ইউনূসের একটি প্রোগ্রাম কভার করতে যাবো। সুযোগও আসলো দ্রুত। গত ডিসেম্বরে হংকংয়ে আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ডের উদ্ভোধন করলেন ড. ইউনূস। ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে সেই প্রোগ্রাম কভার করার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার।
তখন বুক ফুলিয়ে প্রেস বক্সে বসে বলেছিলাম, দেখো এত জমকালো অনুষ্ঠানে দুই জন মাত্র বাঙ্গালী আছে। একজন আমি আরেকজন ইউনূস। ড. ইউনূসকে নিয়ে করা আলাদা প্রেস ব্রিফিংয়েও জিজ্ঞেস করলাম গুটি কয়েক প্রশ্ন। দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের মধ্যে আমিই তাকে চিনতাম সবচেয়ে বেশি। আর তাই আমার প্রশ্নগুলোও ছিলো গোছালো।
যাইহোক, ইউনূসের দেশের বলে সেখানকার সাংবাদিকরাও আমাকে সহায়তা করলো। এক মালয়শিয়া বংশোদ্ভুত হংকংয়ের নারী রিপোর্টারের সঙ্গে রাতে গল্প করছিলাম হংকং ভিকটোরিয়া হারবারের পাশে বসে। সে জানালো ইউনূস আছে হংকংয়ের সবচেয়ে বিলাশ বহুল হোটেলে। তুমি চাইলে কথা বলতে পারো। আগ্রহ দেখালাম।
নারী সাংবাদিকটি তার মোবাইল দিয়ে কথা বললো হোটেল কতৃপক্ষের সাথে। একটু পর মোবাইলটা এগিয়ে দিলো আমার দিকে, হ্যালো বলতেই ওদিক দিয়ে শুনলাম ড. ইউনূসের গলা। আমার পরিচয় দিয়ে দেখা করার জন্য ৫ মিনিট সময় চাইলাম। ড. ইউনূস জানালেন, আমার শরীর একটু খারাপ। শুয়ে পড়েছি।
আমি বললাম, তাহলে কালকে সকালে দেখা করি। সে বললো, 'আমি আলো ফুটবার আগেই হংকং ত্যাগ করবো। দেশে অনেক কাজ'। আমি আর আগ বারালাম না, কারন দেশে ফিরে তার সাথে দেখা করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়।
হংকং থেকে দেশি ফিরবো।
হংকং এয়ারপোর্টে আসার গাড়ীতে বসে কথা হলো হংকং হেরাল্ড এর এক নারী রিপোর্টারের সাথে। পরিচয় দিতেই বললো ড. ইউনূসের সাথে ভালো পরিচয় তার। একাধিকবার ড. ইউনূসের প্রোগ্রাম কাভার করেছে সে। এমনকি গত কয়েকদিন আগে খুবই ভোররাতে ড. ইউনূস সাক্ষাৎতকার দিয়েছে তাকে। মজা লাগলো, হংকংয়ের মাত্র একজন রিপোর্টার ড. ইউনূসের আলাদা সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছে।
এবং সেই রিপোর্টারের সাথেও দেখা হলো হংকং ত্যাগের আগ মুহুর্তে। ডেসটিনি একেই বলে।
ছবি: সবার জন্য ড. ইউনূস, এই থিমের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি শো পিসের ছবি এটি। হংকং হেরাল্ডের রিপোর্টারের ল্যাপটপ থেকে পাওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।