ভূল সময়ের মর্মাহত বাউল
শাহ্ আলম এখন আর নেই। আমাদের এই প্রিয় মানুষটি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ২০০৬ সালের ৩০ মে প্রথম প্রহরে মৃত্যুর মুহুর্তে যেসব মানুষ শাহ আলম এর পাশে ছিলেন আমিও তাদের একজন ছিলাম। প্রায় দশ বছরের সম্পর্ক এভাবে অনুষ্ঠানিক আবহে হঠাৎ করে শেষ হয়ে যাবে সেকথা এখনও ভাবতে পারিনা।
আমার সাথে শাহ আলম এর সম্পর্কের কোন বর্ননা আমি দিতে পারবনা।
তাঁর সাথে যখন পরিচয় হয় তখন আমরা কেউই আলাদা মানুষ হয়ে উঠিনি। কৈশোর উত্তির্ণ। শাহ আলম সবে তুলির আঁচড় দেওয়া শিখছেন। আমি এবং আমার বন্ধুরা সংস্কৃতির নানা শাখায় হাত পাকানোর চেস্টা করছি।
২৯ মে দুপুরে ফোন করেন।
বলেন, মহা ফাঁকিবাজি করলাম, ধরতে পারলা না মিয়া। আমি বলি, একদিন আসনি এইতো। তিনি যোগ করেন, আমি সিলেটেই ছিলাম না। আম্মারে দেখে আসলাম। হ্যাঁ, হঠাৎ করেই চলে গিয়েছিলেন বাড়িতে।
কি এক টান টেনেছিল তারে? রাত ৮টার পর অফিস থেকে একটু বাইরে যেতে হচ্ছিল। বল্লাম, তোমার কম্পিউটার আর ক্যামেরা এসেছে। আমি আসি ওগুলো সমঝে তারপর যেও। অফিসে এসে আর পাইনি। তাড়াহুড়ো দেখিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
১১টার দিকে মোবাইলে কথা হয়। নূর ভাই একটা আইডিয়া দিলেন। সাথে নির্দেশ এই ব্যাপারে বাপ্পা আর আমার সাথে কথা বলা যাবে না। একা একা করতে হবে। ফোনটা আমার হাতে এলে বলেন, দেখ মিয়া নূর ভাই কি বলেন, তোমাদের সাথে কথা না বলে কাজ করবো কিভাবে? তার সেই প্রশ্নের উত্তর আর দেওয়া হলো না।
এক ঘন্টা না পেরুতেই নূর ভাই ফোন করেন। শাহ আলম অসুস্থ, খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি বেরুচ্ছেন। আমিও যেন বেরুই। তাকে পরে বেরুতে বলে আমি বেরুই। আম্বরখানায় লাইফ কেয়ার কিনিকের সামনে গিয়ে মাসুমকে উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটতে দেখি।
ক্লিনিকের এক কর্মী জানান, অবস্থা ভালো না। ওসমানীতে নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কেউ সেখানে ছিলেন না। বাপ্পা কাঁদছে। সেই কর্মীই সাহায্য করেন।
এম্বুলেন্স ছুটে যায় ওসমানীর দিকে। নূর ভাইকে ফোনে জানাই সেখানে যাওয়ার জন্য।
ইমার্জেন্সির ডাক্তার রোগীর কাছের কাউকে খুঁজছিলেন। বল্লাম, আমরা একসাথে কাজ করি। আর কেউ নেই?Ñবলে প্রশ্ন করলেন।
আমি বলি, আমাকেই বলেন। সবাই তখন আবেগ আঁকড়ে কান্নায় মশগুল। আমি পাষাণের মতো তখনো চোখের পানি আটকে রেখেছি। তাই নিষ্ঠুর সেই কথাটা আমাকেই প্রথম শুনতে হলো...।
আমার খাতায় শুধু বিষন্নতার কথামালা লেখা থাকে।
প্রাপ্তির খাতাটা ভয়েই মেলে দেখিনা কখনও। সেই খাতায় আরেকটি বিষন্ন রাত আর ৩০ মে লিখা হয়ে যায়।
আমি অন্যসকল মানুষের মত অতি আবেগ দেখাইনা। কিংবা দেখাতে পারিনা। কখনই লেখালেখিতে একেবারে পুতুপুতু ভাব নিয়ে আসিনা অথবা আনতে পারিনা।
আমি নিরাবেগ বর্ননায় বয়ান করি দিনলিপি। সেই আমিও শাহ আলম এর জন্য আবেগে আক্রান্ত হই। কবরে শুইয়ে দিতে গিয়ে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে আমার... আমিও তবে কাঁদতে পারি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।