জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
ওহে সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বার!!!! ওপারের পর্দা সরিয়ে খানিক উঁকি মেরে দেখে যাও। যাদের মুখে ভাষা ফোটানোর জন্য বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করেছিলে রাজপথ; এরা কি তারা? কোথায় রেখে গিয়েছিলে তোমাদের চেতনাবোধ, এ প্রজন্ম যে আজ তা খুঁজেই পাচ্ছে না। চেতনার বৃদ্ধির জন্য ওরা এখন ভিক্ষা চাইছে জগতের সকল অশ্লীল এবং সামাজিক সৌন্দর্য রক্ষায় অপ্রকাশিত শব্দাবলী আর তাদের নিকৃষ্ট ধারকদের কাছে। '৫২-র রাজপথে ঢালা তোমাদের রক্তের উপাদানগুলো হতে কি এ প্রজন্মের জন্য কিছুই বাকী নেই?
ওহে '৭১-এর বীর শ্রেষ্ঠরা! অগুণিত মুক্তিযোদ্ধা শহীদেরা!! ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তান সরকারের হায়েনাদের অত্যাচারে যে পরিমাণ উচ্চশিক্ষিত আর বুদ্ধিজীবী মানুষেরা নিহত হয়েছেন, তারাই কি ছিল এ জাতির সর্বশেষ সংগ্রামী দেশপ্রেমিক অগালিবাজ এবং রুচিশীল প্রজন্ম? তারপর কি এ জাতি দিনে দিনে নতুন আরেক প্রজন্মের তৈরী করেছিল? যাদের কোন চেতনাবোধ নেই, নেই ভাষা আন্দোলন হতে, নেই মুক্তি যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জনের সোনালী অধ্যায় হতে? আর তাই আজ নগন্য বাস্তব আর অসংখ্য কল্পিত রাজাকারদের বিরুদ্ধে চেতনা সংগ্রহের জন্য তাদেরকে গালাগালের আশ্রয় নিতে হয়, জাতির হীনবল কাপুরুষদের হাত-পা ধরতে হয়? জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আপনারাও হয়ত রাজাকারদের সামনে পেয়েও এতটা নীচে নামেননি, যতটা চেতনা হীন, নির্বোধ, প্যারালাইজড এই প্রজন্ম নেমেছে।
দুঃখিত, কি বলে ফেললাম, আপনারা গালি দিয়ে নিজেদের মর্যাদার হানি ঘটাবেন কেন? আপনারা তো ছিলেন বীর! চির উন্নত যাদের শির! অপরাধীরা, শয়তানেরা, বিশ্বাসঘাতকেরা যাদের নাম শুনলেও ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়! আপনারা গালি দেয়ার তো কোন প্রশ্নই উঠে না। গালি দেয় কারা? দু'পক্ষের লড়াইয়ে হেরে যাওয়া, দুর্বল, কাপুরুষ, হীন মানসিকতা সম্পন্ন পক্ষই শক্তিতে, হিম্মতে, মেধায়, যুক্তিতে, তর্কে এবং সাহসে কুলোতে না পেরে নিরাপদ দূরত্ব থেকে খিস্তি আউড়াতে থাকে। জন্মভূমির স্বাধীনতার বীর সৈনিকদের জন্য তো এমন নীচুতা কেউই মেনে নেবে না। বরং আপনারা শক্তি, হিম্মত, সাহস আর বীরত্ব দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেছিলেন। কিন্তু এ কোন কাপুরুষ প্রজন্ম রেখে গেলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে?? যারা কোনভাবেই ধরে রাখতে পারছে না আপনাদের সাহসী চেতনাবোধকে, জলে ভাসা শ্যাওলা পড়া ডাবের মতই তাদের হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধ।
হারিয়ে ফেলা বস্তু সম্পর্কে দায়ী ব্যক্তির বলা "আছে, আছে আমার কাছে, পেয়ে যাবো নিশ্চয়....." -এ জাতীয় কথাবার্তায় তাদেরকে এখন নিজেদের মনকে সান্ত্বনা দিতে হচ্ছে। আর কাউকে সহ্য করতে না পারলে পাগলের মত জগতের যাবতীয় নিষিদ্ধ শব্দাবলীতে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করবে।
হে মুক্তিযোদ্ধাগণ! আপনারা যারা এখনো জীবিত আছেন। আপনাদের লক্ষ্যে, উদ্দেশ্যে, চেতনায়, বীরত্বে কোথাও কি কোন ফাঁক ছিল? আমার এই দৃষ্টতার জন্য ক্ষমা চাই। বলতে বাধ্য হলাম এ কারণে যে, মাত্র ত্রিশ/পঁয়ত্রিশ বছরের মাথাতেই কেন তাহলে আপনাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গড়ে তোলা জাতি আরেকটি যুদ্ধ চায়, আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে? ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনময়ে নিশ্চিন্ত স্বাধীনতা নিয়ে কি ত্রিশ বছরও চলা সম্ভব হলো না? ওরা বলে রাজাকারদের বিরুদ্ধে।
রাজাকারদের বিরাট একটা অংশকে তো বিজয়ের পাশাপাশিই খতম করে দিয়েছিলেন আপনারা। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার সারা দেশ খুঁজে মাত্র ৮২ জনের মত বের করতে পেরেছিলেন। তাদেরও অনেকেই আজ আর পৃথিবীতে বর্তমান নেই। যদি থাকতোও, তাহলেও কি মাত্র ৮২ জন মানুষের বিরুদ্ধে একটা জাতির আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ কামনা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননা নয় কি?
যখন এসব প্রলাপের বিরুদ্ধে সঠিক কথা বলতে যায় কেউ, তখনি ওরা তাদেরকে বানিয়ে ফেলে নব্য রাজাকার। আর তাদের সাথে যুক্তিতে, তর্কে, সত্যতায়, সহনশীলতায়, উত্তম ব্যবহারে, সর্বোপরি দেশের প্রতি ভালবাসা ও দেশ গঠনের পরিকল্পনা এবং কর্মে যখন হেরে যায়; তখনি মাতালের মত খুঁজতে শুরু করে চেতনা বর্ধক গালাগাল।
আশ্চর্য হই, দেশের সাংবাদিক, উচ্চ ডিগ্রিধারী, দেশে বিদেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এবং শিক্ষকেরা পর্যন্ত এদের মধ্যে শামিল। আজো অজপাড়া গাঁয়ে দেখা যায় মাধ্যমিক পড়ুয়া লোকেরাও সমাজে সুন্দর কথা ও উত্তম ব্যবহারের ধারক হয়ে আছেন। হায় আফসোস! যে জাতির শিক্ষিত জনেরা খিস্তির চর্চা ও তার স্বপক্ষে কথা বলে, সে জাতির প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য করুণাই হয়। আমায় ক্ষমা করবেন দেশের বীর শহীদ এবং বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা। আপনাদের প্রতি প্রতিপালকের রহম কামনা করছি।
(ব্যক্তিগত ব্লগীয় নোটিশঃ সকল প্রকার গালাগালকে মুছে ফেলা হবে এবং গালীবাজকে ব্যান করা হবে। কারণ, কেউ কোন নিকৃষ্ট প্রাণী পছন্দ না করলে নিজের বাড়ীকে কখনোই সেটার খোয়াড় বানাবে না। কেউ কেউ এটাকেও কাপুরুষতা বলতে চায়; এমন কথা আসলে কারপুরুষরাই বলে থাকে, বীর মুক্তি যোদ্ধারা রাজাকারদেরকে আশপাশে রেখে তাদের কাছ থেকে খিস্তি শুনেননি; বরং শূট করেছিলেন । আর ব্লগীয় শূট হচ্ছে ব্যান। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।