'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'
ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে সেই যে মহান চিঠিখানা লিখেছিলেন, তার একখানা জবাব আমি পাঠিয়েছিলাম এবং এই ব্লগের সদস্যদের পাঠের জন্য এখানেও পোস্ট করেছিলাম। তার সেই চিঠিতে তিনি যে লিখেছিলেন প্রচুর মানুষের অনুরোধে তিনি রাজনীতিতে আসতে চান- আমি সে প্রসঙ্গে সবিনয় জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আসলে কতোজন মানুষের অনুরোধ পেয়েছেন এবং কীভাবে? তখন সেই জবাব আমি পাইনি। আজ যখন আবার দ্বিতীয় একখানা চিঠি দিয়ে তিনি রাজনীতিতে তার পাশে যথেষ্ট যোগ্য লোকের অভাবে সরে যাবার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন কায়দায় দুঃখ প্রকাশ করলেন, তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না, প্রথম চিঠিতে উদ্ধৃত তার সেই অনুরোধ করনেওয়ালা আসলে কারা ছিলেন।
ইউনূসের প্রথম ও দ্বিতীয় চিঠির বক্তব্যগুলো যদি সত্য ধরে নিই, তাহলে, আরো একটি বিষয় সামনে আনা জরুরি, তা হলো, প্রথম চিঠিতে তিনি যে মানুষের অসম্ভব সাড়া পাচ্ছেন বলে চিঠি-পরবর্তী সময়ে বোলচাল আওড়ানো হচ্ছিলো, সেগুলো তবে কি ছিলো? মানুষ যদি তাকে অনুরোধ করেন, তাহলে তো তার যোদ্ধার অভাব হবার কথা ছিলো না। নাকি নাঈমুল ইসলাম খান যা বলছেন তাই ঠিক, আসলে তিনি চেয়েছিলেন পুরনো মালগুলোকে নিয়ে, রেডিমেe লোকজনকে নিয়ে একটি রেডিমেe দল গঠন করতে, যাদের লক্ষ্য থাকতো কেবল পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতার মসনদে বসা।
একটু পেছনে ফিরে যাই। আশির দশকে (যখন বিশ্বব্যাংক আইএমএফ চকচকে অর্থ সরবরাহের কারবারী) নরওয়েজিয়ান সরকার আমাদের দেশে রেলওয়ের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মেঘ না চাইতে জলের মতো ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সংযোগের কাজ করে দিলো। আমরা, দেশের তাবত মানুষ আহ্লাদিত হলাম। নব্বইয়ের শুরুতে টুকটাক কথাবার্তা হলো। বছর তিনেকের মধ্যে আমাদের শ্রদ্ধেয় ইউনূস সাহেব বিটিটিবিকে চ্যালেঞ্জ করলেন, খুব শিগগির সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির টেলিযোগাযোগ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করলেন।
তার ফসল আমার পকেটের গ্রামীণ ফোন। তারা নরওয়েজিয়ান সরকারের দেয়া সেই ফাইবার অপটিক সুবিধা পুরদস্তুর ব্যবহার করলেন। ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলো। দীর্ঘদিন পরে আবিস্কার করলাম, গ্রামীণ ফোন আসলে গ্রামীণ নয়, নরওয়েজিয়ান। টেলিনরের লুকানো বাচ্চা।
এখন তা প্রকাশ্যে। অথচ এই গ্রামীণকে নিয়ে আমরা কতো না গপ্পো শুনেছি। দেশের পুঁজি, দেশের সম্পদ- এসব। আমি বিশ্বাস করি না, গ্রামীণ ফোনের শীর্ষ ব্যক্তিরা জানতেন না যে, এ পুঁজির সিংহভাগ বাইরের এবং শেষমেশ মুনাফার গন্তব্যটিও বাইরে। তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের সঙ্গে এতো চমৎকার লুকোচুরি করার যোগ্যতা যার বা যাদের আছে তাদের কাছে চোর-বাটপার রাজনীতিবীদরা তো নস্যি।
আর আমরা জনগণ? আমরা উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই `পিওর তিন নম্বর বাচ্চা'।
সেদিন হাসান স্যার (হাসান আজিজুল হক) বলছিলেন, সবচেয়ে সর্বংসহা সম্প্রদায় হতে হয় ব্যবসায়ীদের। ড. ইউনূস যা কিছুই হোন না কেনো, পুরদস্তুর ব্যবসায়ীর সব বৈশিষ্টই তার মধ্যে উপস্থিত। তিনি অবশ্যই সর্বংসহা। রাজনীতিবীদদের লুটপাট তিনি সবে মাত্র চোখ খুলে দেখলেন, এমটা আমি ভাবতে রাজী নই।
চোখ তার খোলা ছিলো আগে থেকেই। মুখ তার বন্ধ ছিলো। কারণ ব্যবসার সুযোগ সুবিধা ফস্কে গেলে তখন কী হতো? কাজেই ওইটি আমরা তার কাছ থেকে অতি উন্নতমানের যোগ্যতার সঙ্গে পেয়েছি। তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সময় তো বটেই। সামরিকজান্তাদের সময়ও তিনি ছিলেন একই রকম।
এখন দেখার বিষয়, চুক্তি করেও যিনি ব্যবসা শুরুর সময় তার অংশীদারকে `রক্তচোষা' বলে ধরতে পারেননি, সেই ড. ইউনূস আবার নতুন কী রূপ পরিগ্রহ করে আমাদের সামনে হাজির হন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।