আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৎ মানুষের খোঁজ- ন্যুনতম পারিশ্রমিক নির্ধারণ-



আমাদের শ্রমিকের সংখ্যা যতই হোক না কেনো তারা অধিকাংশই যে পরিমাণ পারিশ্রমিক পায় তাতে তাদের কোনোমতে বেঁচে থাকাটাও কষ্টকর। শ্রমশোষিত হওয়া এবং সরকারের বিমাতাসুলভ মনোভাবের কারণে যখন দেশের শিল্পায়নের পরিমাণ কমছে- এবং যেহেতু সরকার কোনোভাবেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে না তাই চালু কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে- প্রাকৃতিক উৎসে শ্রম দিয়ে জীবনধারণ করা মানুষের জন্য দুর্ভোগ হয়ে এসেছে প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্ষীণধারা হয়ে যাওয়ার বিষয়টা- এ সময়ে উদ্যোক্তাদের ভেতরের ঐক্য একটা বিষয় নিশ্চিত করেছে- তারা সবাই শ্রমশোষণের নিমিত্তে একটা কৃত্রিম নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে- শ্্রমবাজারে এখনও নারী পুরুষ বৈষম্য আছে- শিশু নারী বৈষম্য আছে- এসব মিলিয়ে আমাদের হঠাৎ করেই একটা মানবিক মজুরি আন্দোলন সংগঠিত হবে এমনটা দুরাশা- তবে মানবিক ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে কি কি বিবেচনা করা প্রয়োজন এটার বিষয়ে আমার অভিমত জানানোর জন্যই আসলে এত কষ্ট করে এত বড় একটা লেখা - কিভাবে শ্রমের মুল্য নির্ধারিত হতে পারে এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনেক রথি মহারথি আছেন এ বাজারে- বুদ্ধিবৃত্তিক এবং কায়িক শ্রমের পারিশ্রমিক নির্ধারণ কিংবা ঝুঁকি অনুযায়ী পারিশ্রমিক তালিকা তৈরি করা- অনেক ভাবেই একটা তালিকা তৈরি করা যায় যেখানে প্রটিতা তালিকায় একটা ধারাবাহিকতা থাকবে- শ্রমঘন্টা নির্ধারণের জন্য যেসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত তা হলো ঝুঁকি, দক্ষতা- শ্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা- এসব নিয়ামক বিবেচনা করেই শ্রমঘন্টা নির্ধারণ করতে হবে- যে মানুষটা পুকুর কাটে আর যে মানুষটা কয়লা খনিতে গিয়ে মাটির কয়েক শত ফুট নীচে কয়লা কাটে তাদেরর ঝুঁকির পরিমাণ আলাদা। সুতরাং তাদের পারিশ্রমিক এবং অন্যান্য প্রাপ্ত সুবিধাদিতে পার্থক্য থাকতে হবে। যে মানুষ চা বিতরণ করে কিংবা খাবার বিতরণ করে তার দক্ষতা এবং যে মানুষ কোনো যন্ত্র দ্বারা পণ্য উৎপাদন করছে তাদের ব্যবহারিক যোগ্যতার প্রয়োজনও ভিন্ন সুতরাং এদের ভেতরেও পারিশ্রমিকের পরিমাণের পার্থক্য থাকবে- আর একই রকম যোগ্য মানুষদের ভেতরেও দক্ষতার ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পার্থক্য থাকবে- হয়তো মুল্যায়ন পদ্ধতিতে এদের দক্ষতা নির্ধারণ করে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা তা হলো পারিশ্রমিক নির্ধারণের সময় ন্যুনতম মজুরি যা একজন অদক্ষ- অযোগ্য কায়িক শ্রমদানকারি যতটুকু পাবেন তা এমন হবে যেনো এটা দিয়ে তারা বিনা ক্লেশে মানবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

এটাই মুল বিবেচ্য বিষয়- একজন জীবনধারণের প্রয়োজনে শ্রম দিচ্ছেন এবং তার এই পারিশ্রমিকে তিনি যেনো মানবিক ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন এটাই নিশ্চিত করতে হবে- জীবনযাপনে- যাকে মানবিক জীবনযাপন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে -তার মৌলিক অধিকারগুলো অর্থমূল্যে পরিশোধ করতে পারে এমন অর্থ শ্রমিককে উপার্জনের সুযোগ দিতে হবে। যেহেতু এটাই শ্রমিক আন্দোলনে নিশ্চিত হয়েছে যে একজন শ্রমিক দিনে ৮ ঘন্টা শ্রম দিবেন- তাই কোনো প্রতিষ্ঠান যদি কোনো শ্রমিককে তার নির্ধারিত ৮ ঘন্টার বেশী সময় পরিশ্রমে বাধ্য করে তবে সেই অতিরিক্ত সময়ের জন্য তাকে অভার টাইম দিতে হবে- তবে ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণে এটাই বিবেচনা করতে হবে যে শ্রমিক দিনে ৮ঘন্টা শ্রম দিবে এবং সরকারী বর্তমান হিসেবে যেহেতু তারা ২ দিন সাপ্তাহিক ছুটি বিেবচনা করছেন তাই মাসে একজন শ্রমিক কাজ করবেন ২২ দিন- এ জন্য তাকে মাসে ১৭৬ ঘন্টা শ্রম দিতে হবে- সর্বজন স্বীকৃত এই ১৭৬ ঘন্টা পরিশ্রম করে সে যে পারিশ্রমিক পাবে তা দিয়েই তাকে মানবিক জীবনযাপনের সুযোগ দিতে হবে। কেউ যদি এর অতিরিক্ত কাজ করতে চায় তবে সেটা তার নিজস্ব বিবেচনা। তার জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো অন্ন বস্ত্র বাসস্থান- চিকিৎসা এবং বিনোদনের সুযোগটা বিবেচনায় রাখতে হবে তার ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণের সময়ে- বৈজ্ঞানিক ভাবে এটা বলা হয়েছে যে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ দিনে ২২০০ ক্যালোরির সমপরিমাণ খাদ্য গ্রহন করবেন- এবং তাকে সুষম খাদ্য গ্রহন করতে হবে- এই সুষম খাদ্যে রয়েছে আমিষ- শর্করা চর্বি খনিজ লবন- বিশুদ্ধ পানি- তাই একটা মানুষের হিসাবে বলা যায় মাসে একজনের জন্য ১০ কেজি চাল- বাজার মূল্য ২০০ টাকা ২ কেজি আটা - বাজার মুল্য ৫০ টাকা ২ কেজি ডাল( উদ্ভিজ্জ আমিষ) বাজার মূল্য ১৩০ টাকা ১ কেজি ভোজ্য তেল- বাজার মূল্য ৭০ টাকা প্রানীজ আমিষ ৩ কেজি- বাজার মূল্য ৩৬০ টাকা সব্জি- ন্যুনতম ১০০ টাকা সব মিলিয়ে ৯১০ টাকা এবং বাসস্থানের জন্য বরাদ্দ ৫০০ টাকা( যদিও আমি নিশ্চিত না এই টাকায় একটা সভ্য বাসস্থান পাওয়া সম্ভব কি না) যাতায়ত খরচ- ৩০০ টাকা চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ ১০০ টাকা বিদ্যুত বিশুদ্ধ পানি সহ অন্যান্য সেবা খাতের জন্য বরাদ্দ ২০০ টাকা সব মিলিয়ে ২০১০ টাকা এ দিয়ে হয়তো একজন মানুষের মানবিক বেঁচে থাকা সম্ভব তবে এটা অবশ্যই স্থানীয় জীবনযাপনের খরচের উপর নির্ভর করবে- যদি একজনকে ১৭৬ ঘন্টা কাজ করে এ পরিমাণ উপার্জন করতে হয় তবে তাকে ঘন্টা প্রতি ১২ টাকা দিতে হবে-অর্থ্যাৎ এ ক্ষেত্রে সব বিবেচনা করে ন্যুনতম মজুরি নির্ধারিত হবে প্রতি শ্রমঘন্টা ১২ টাকা। এই ন্যুনতম মজুরিকে বিবেচনা করে এরপর যোগ্যতা দক্ষতা, ঝুঁকি অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে শ্রমঘন্টার মূল্য তালিকা তৈরি করতে হবে- সেটা কিরকম হবে তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথ্যা নেই- আমার বক্তব্য হলো একজন মানুষ যদি শ্রম বেঁচে তবে যা স্বীকৃত সেই ৮ ঘন্টা পরিশ্রম করে তার মাসে ১৭৬ ঘন্টা কাজ করে অদক্ষ একজন শ্রমিক প্রতি ঘন্টায় ন্যুনতম ১২ টাকা করে পারিশ্রমিক পাবে- শুধুমাত্র এ ভাবেই একজন শ্রমিকের মানবিক জীবনযাপন সম্ভব অবশ্যই তা বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুসারে- এবং প্রতিবছর এ তালিকা সংশোধিত হতে হবে- কারণ জীবনযাপনের নিত্য প্রয়োজনিয় জিনিষের দাম স্থির নয়- এমন কি যদিআমি মাসে ১৬ টা ডিম এখানে দিতে চাই তবেও একজন শ্রমিকের জীবনযাপনের খরচ বেড়ে যাবে আরও ১০০ টাকা আর বেশি বিরক্ত করবো না- সামনে একদিন আলোচনা করবো আসলেই এই ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ করে তা দিতে বাধ্য করতে সরকার কি করতে পারে- কিংবা সরকারের পক্ষ্যে আসলেই সম্ভব কি না এটা বাস্তবায়ন করা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।