আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ সর্বযুগের সর্বাধুনিক জীবনপদ্ধতির নামঃ ইসলাম(১০)

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

আগের পর্ব পড়ুন । মানবতাবাদ; যার সবটুকুই ধারন করে করতে পেরেছে ইসলাম। শুধু ধারনই নয়, পূর্বাপর, আদি-অন্ত নিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ মিলিয়েই মানবতাবোধের বিশ্লেষণ করেছে ইসলাম; শুধুমাত্র দুনিয়াকেন্দ্রিক নয়। সাম্যবাদ চেয়েছিল ধনী-গরীবের ব্যবধান মিটিয়ে জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে, কিন্তু তার জন্য তারা বেছে নিয়েছে বন্দুকের নল। প্রতিটি বুকে কয়েক পৃথিবীর সমান আবেগ সৃষ্টির মাধ্যমে ভালবাসার যে ইমারত নির্মাণ করেছিল তার কর্মীবাহিনী, দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইমারতের ইটের নীচেই চাপা পড়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে লাগল সর্বসাধারণের সাথে সাথে তারা নিজেরাও।

আদর্শের প্রতি ভালবাসা তখন তাদের মধ্য থেকে পালিয়ে বাঁচলো। শ্রম-সাধনা যত উন্নতই হোক না কেন, তার ভিত্তি ভালবাসার উপর প্রতিষ্ঠিত না থাকলে কোনদিনই তা চিরস্থায়ী তো নয়ই; দীর্ঘস্থায়ী হবারও যোগ্যতা রাখে না। ইসলাম এখানে এসেই পরিপূর্ণ সফল, ইতিহাসে ফিরে গিয়ে একবার চিন্তা করে দেখুন, কি পরিমাণ ভালবাসা পোষণ করলে ইসলামের জন্য তার অনুসারীরা আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে, বাবার বিরুদ্ধে, চাচা-মামার বিরুদ্ধে, এমনকি আপন কলিজার টুকরা সন্তানের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধারন করতে পারে? যার উদাহরণ পৃথিবীবাসী দেখেছে বদরের প্রান্তরে। ইসলামের জন্য লড়াইয়ের ময়দানের আহত মুজাহিদ মৃত্যুদূতের অপেক্ষায় চরম তৃষ্ণার্ত কণ্ঠেও মুখের কাছে পানি পেয়ে অপর আহত মুজাহিদের প্রতি তা বাড়িয়ে দিলেন, যাকে দিলেন তিনিও তদ্রূপ দেখে তৃতীয় জনকে পানের সুযোগ করে দিলেন; এভাবে ইসলামের অনুসারীগণ দুনিয়ার বুকে ভালবাসার এমনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যে, অবশেষে তাদের কেউই পানির তৃষ্ণা নিবারণ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেননি বটে, কিন্তু ভালবাসার তৃষ্ণা নিবারণে তারা দুনিয়াতেই সফল হয়েছিলেন। মক্কা থেকে আগত মুহাজিরগণের প্রতি ভালবাসায় মদীনার আনসারগণের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

অন্য সকল দিককে পাশে রেখে শুধুমাত্র এই একটি দিক নিয়ে তুলনা করলেও সাম্যবাদের বিপরীতে ইসলাম চির অম্লান, সর্বযুগেই মানুষের অন্তরের ভালবাসার ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত। অত্যাচারী-যালেমেদের যে কোন ভয়ংকর নির্যাতন কখনোই মুমিন মনের এই ভালবাসার ভিত্তিকে স্পর্শ করতে পারেনি। অপরদিকে ধনতন্ত্রের একচোখা দৈত্যনীতির বিপরীতে সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনের মাধ্যমে উৎপাদন, কেনাবেচা ও সকল মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা দানে ভারসাম্যমূলক বিধান একমাত্র ইসলামী অর্থনীতিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাইতো ইসলাম জগদ্বাসীকে উপহার দিতে পেরেছিল ভিক্ষুকমুক্ত একটি সমাজ, সকল প্রয়োজন পূরণকৃত একটি সমাজ। কেননা, পূর্বেই বলেছি যে, একটা সময় ছিল যখন কেউ যাকাত আদায়ের জন্য দিনের পর দিন পথে অপেক্ষায় কাটাতে হত গ্রহীতার খোঁজে।

আর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের, যা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য যাবতীয় প্রয়োজন পূর্তির পরও এক বছর পর্যন্ত অপ্রয়োজনে জমা পড়ে থাকে। তার মানে হলো, যেহেতু যাকাত গ্রহণ করার মত কেউ ছিল না সে সমাজে, সেহেতু স্বাভাবিক জীবন ধারনের জন্য সকল প্রয়োজন পূর্ণ করতে সক্ষম ছিল সেই সমাজ ব্যবস্থাটি; যা ছিল একমাত্র ইসলামের অবদান। কারো নিকট অপ্রয়োজনে সম্পদের পর্বত একটার পর একটা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে থাকবে আর জগতশ্রেষ্ঠ হয়েও কেউ অন্নের অভাবে সেসবেরই পাশ্বর্ের ডাস্টবিন খুঁজে বেড়াবে কুকুর-বিড়ালের সাথে; যা ধনতন্ত্রের অবদান। মানবতার জন্য এমনতর জঘন্য পর্যায়ের উত্তরণে সর্বযুগে একমাত্র ইসলামই পারে মানবজাতিকে সঠিক ও যুগোপযোগী দিকনির্দেশনা দান করতে। অতএব, একথা সকলের মনে রাখা উচিত যে, সাম্যবাদ, ধনতন্ত্রের সাথে সাথে আরো যেসব বাচ্চা মতবাদ রয়েছে এবং এসবের মত করে ভবিষ্যত পৃথিবীতে যদি আরো কোন মতবাদের জন্ম হয়, তবুও তাদের সবার সাথে মোকাবেলা করে একমাত্র ইসলামই টিকে থাকার যোগ্যতা রাখে এবং টিকে থাকবেও ইনশাআল্লাহ্।

কেননা, ন্যায় ও যোগ্যতর পন্থায় বিতরণ ও ব্যবহারেই উন্নতি, অঢেল উৎপাদনে নয়। ইসলামই সেই ন্যায়, সাম্য, সৌহার্দ, যোগ্যতা বিবেচনায় সঠিক ব্যবহারিক বিধান দাতা, যা কখনো পুরোনো হয় না; বরং যুগের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন প্রায়োগিক বিধানের সমাবেশ ঘটায়। সুতরাং, নিঃসন্দেহ যে, সকল যুগের জন্য সর্বাধুনিক জীবন পদ্ধতির নাম- 'ইসলাম'। (মন্তব্য কিন্তু হিসেব করে--; এখনো শেষ হয়নি) পরের পর্ব পড়ুন ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।