জীবনটাই এলোমেলো ভাবে কাটাতে চাই আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই । মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ১৫ বছর পর আমার জন্ম । তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার উৎস বিভিন্ন ক্লাশের পাঠ্যবই । আমার মুক্তিযোদ্ধা চাচা এবং বাকি পরিবারের ভারতে পালিয়ে থাকার গল্প শুনে শুনে । এর বাইরে প্রতি স্বাধীনতা দিবস , বিজয় দিবস এর অনুষ্ঠান থেকে কিছু কিছু জানতে পারি ।
পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প পড়ার সময় কল্পনা করতাম একদিন পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিব । মাঝে মাঝে দিবা স্বপ্নে গুপ্ত ঘাতক দল বানিয়ে রাজাকারদের এক এক করে মারতে শুরু করে দিতাম । বাবার কাছে গল্প শুনতাম মুক্তিযুদ্ধের সময় কিভাবে গোটা পরিবারকে সবকিছু ফেলে ভারতে চলে যেতে হয়েছিল ; যার জন্য দায়ী ছিল যতটা না পাকবাহিনী তার চেয়ে বেশি ছিল গ্রাম্য রাজাকার আলবদরদের ভয় । ভারতের কাটানো দিনগুলির গল্প শুনতে আমার মোটেই ভাল লাগত না । কারন সেসব কাহিনী ছিল অবমাননার , লজ্জার ।
রিফিউজিদের সঙ্গে ভারতীয়রা খুব ভাল ব্যবহার করেছে এমন কাহিনী শুনি নাই । তবু তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল । তাই এখন রোহিঙ্গাদের দুঃখটা বুঝতে পারি , যদিও আমরা তাদের আশ্রয় দেই নি । আমার বরং ভালো লাগতো চাচার গল্প শুনতে । যদিও তিনি খুব বড় ধরনের কোন অভিযানে যান নি কিন্তু অন্যের গল্প ঠিকই বলতেন ।
স্বাধীনতার পরে গ্রামে এসে আমার পরিবার দেখে বাড়ির কিছুই নাই , সব রাজাকারের দল ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে । যুদ্ধ শেষে চাচা কিভাবে একাই অস্ত্র নিয়ে গিয়ে সেগুলো উদ্ধার করেছেন , তা শুনে আমার খুব উৎসাহ হত । সাথে একটু হতাশাও থাকতো কেন চাচা তাদের তখন শাস্তি দিলেন না ! আস্তে আস্তে বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে অনেক মতের সাথেই পরিচয় হয়েছে । যেমন পাকিস্তান ভাঙ্গাটা ভারতের একটা সুপরিকল্পিত ঘটনা কারন পাকিস্তান এক থাকার সময় ভারতের সীমান্ত রক্ষায় অনেক বেশি খরচ হত , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কখনো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা চান নি , তিনি স্বাধীন্তার পর যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি । এইসব পাকিস্তানী অন্তপ্রান মতবাদ শুনে খুবই আশ্চর্য হতাম , বুঝতে চেস্টা করতাম তাদের এই পাকিস্তান প্রীতির কারণটা কি ? অনেক চিন্তা করেও ধর্ম ছাড়া আর কিছু খুজে পাইনি ।
গ্রাজুয়েশন এর জন্য রাজশাহী গেলাম । আগেই জানতাম রাজশাহী শিবির আর জামাতের ঘাটি । গ্রাজুয়েশন এর কয়েক বছরে দেখলাম শিবির কিভাবে গ্রাম্য , ধর্মপ্রাণ , অপেক্ষাকৃত স্বল্প আয়ের পরিবার থেকে আসা ছেলেদের টার্গেট করে ব্রেন ওয়াশ করে ধর্মের নাম দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে । আজকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল যা করে শিবির তার সবই করে কিন্তু গোপনে এবং এদের কাছে রাজাকার বলে কিছু নেই । এরা বিশ্বাস করে জামাত এর কোন নেতা ৭১ এ স্বাধীনতার বিরোধিতা করে নি ।
কি আজব এক পরিস্থিতি ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হতেই শুনলাম সরকার কোনদিন এর বিচার করতে পারবে না , করার চেস্টা করলে সৌদি আরব , কাতার , ওমান সহ সব মধ্যপ্রাচ্যের দেশ নাকি লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠিয়ে দেবে । বিচারের অনেকদিন পর্যন্ত বি এন পি মুখ বন্ধ রেখে মাঝখানে শুরু করলো তারাও বিচার চায় কিন্তু তা হতে হবে স্বচ্ছা, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য । মাঝখানে স্কাইপি বিতর্ক , সাঈদীর প্রেমালাপ । এরপর ২১ জানুয়ারী এল প্রথম রায় ।
আমার মাথা খুবই ছোট , রাজনীতির গন্ধ পাইলে আমি তার থেকে হাজার মাইল দূরে থাকতে চাই ।
কিন্তু একজন বাংলাদেশে বসবাস করে কিভাবে রাজাকার , আলবদর দের সমর্থন করে তা আজও বুঝলাম না । বি এন পি কেন এখনও সেই আগের বুলি আউরাচ্ছে তাও আমার মাথায় ঢুকে না । বি এন পি যদি আওয়ামী লীগকে এখান থেকে রাজনৈতিক ফায়দা দিতে না চায় , তাহলে তো তাদের আয়াওমীলীগের চেয়েও জোরালো ভাবে বিচার চাওয়া উচিত ।
আমি কোনদিন রাজনৈতিক নির্বাচনে ভোট দিতে যাই নি । আগামী নির্বাচনেও যাবো না কারন আওয়ামীলীগের এইবারের কাজকর্মে চরম হতাশ (একমাত্র যুদ্ধাপরাধীর বিচার ছাড়া) আর জামাত সহ বি এন পি কোনদিনও আমার বিকল্প হতে পারবে না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।