জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
আগের পর্ব পড়ুন । জাগতিক উন্নয়ন ও ইসলামঃ জাগতিক উন্নয়ণকে আমরা তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারি- ব্যক্তিগত, উত্তরসূরীয় মঙ্গলকামনায় এবং সাধারণ। প্রথমতঃ মৃতু্যপরবর্তী অনন্ত জীবনে কেউ বিশ্বাস করুক আর নাই করুক ধ্বংসশীল এই পৃথিবী তাকে ত্যাগ করতেই হয়। তাহলে জাগতিক উন্নয়ণে তার লাভ দাঁড়াচ্ছে যতদিন সে বেঁচে থাকতে পারছে ততদিনের প্রয়োজন কিংবা আহার-বিহার ও অন্যান্য ভোগ-বিলাসের সুবিধা পাওয়া। উন্নয়ণ সাধন তার দ্বারা হোক বা অন্য কারো দ্বারা হোক অথবা তার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় হোক, ব্যক্তির মৃত্যুর পরপরই যাবতীয় উন্নয়ণ তার কোনই কাজে আসে না।
অতএব জাগতিক উন্নয়ণে ব্যক্তিগত স্বার্থ খুবই সীমাবদ্ধ।
দ্বিতীয়তঃ উত্তরসূরীর মঙ্গলকামনার্থ মূলক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জাগতিক উন্নয়ণ খুবই প্রয়োজনীয় ব্যাপার। প্রজন্ম যাদেরকে আগামীর জন্য রেখে যাচ্ছে, তারা যেন সুখে-শান্তিতে পার্থিব জীবন অতিবাহিত করতে পারে, সেজন্য উন্নয়ণ প্রচেষ্টা করাটা কর্তব্য এবং অতি প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু ব্যাপার এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং উন্নয়ণের এ ধাপে উন্নয়ণ শুধু বেঁচে থাকার তাগিদেই নয়, বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের নিকট নিজের নামকে অমর রাখার প্রয়াস, লোভ, কখনো কখনো বিকৃত মানসিকতার বাস্তবায়ন ইত্যাদি অসংখ্য কারণ বিদ্যমান এখানে। মোটের উপর এ দৃষ্টিকোণে প্রচুর ভালোর সাথে প্রচুর মন্দও যুক্ত রয়েছে, তবে এটাও যে চিরদিন অক্ষত থাকবে তা নয়; বরং সমকালীন কিংবা পরবর্তী প্রজন্ম অথবা প্রাকৃতিক দূর্যোগে এ উন্নয়ণও ধ্বংসশীল।
তৃতীয়তঃ সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও দেখা যায় যে, পৃথিবীর যে কয়দিনের ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের হাতে পেঁৗছেছে, তাতে পর্যায়ক্রমে পৃথিবী উন্নতির দিকেই অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ববিদগণের খোঁড়াখুঁড়ির ফলে এমন অনকে জনপদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যেখানে হাজার হাজার বছর পূর্বেও দেখা গেছে মানুষ আধুনিক স্টাইলের জীবন যাপন করে গেছে। কুরআনের সূরা আস্-সাবার বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় যে, আল্লাহর নবী সুলায়মান 'আলাইহিস্ সালাম বাতাস নিয়ন্ত্রিত বাহনে চড়তেন; যা তাকে তার সভাসদসহ সকালে তৎকালীন অশ্বপথের একমাসের পথ অতিক্রম করাতেন এবং বিকেলে একমাসের পথ। তাফসীরবিদগণ এটাকে একান্তভাবেই আল্লাহর কুদরত বলেছেন। অন্যদিকে আধুনিক আবিস্কারে আমরা আকাশপথে চলাচলের জন্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করে থাকি, অনেক গবেষক আলেমের মতে সে যুগে আল্লার দয়ায় হয়ত এ জাতীয় কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেই তারা আকাশ পথে চলতেন।
(এটা নিতান্তই ধারণা, কোন তাফসীর নয়। অর্থাৎ, অথবা সম্পূর্ণই মূ'জিযা ছিল)। একথা বলার উদ্দেশ্য এই যে, সভ্যতা বার বার উন্নতি লাভ করেছে এবং বার বারই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
এর প্রমাণ হিসেবে দু'টো উদাহরণ পেশ করা যেতে পারে। তা হলো, পিরামিড ও তাতে সংরক্ষিত মমির সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা এবং কাঁচ।
কিভাবে মৃতদেহকে মমি করে রাখা হয়েছে, কি জৈব ব্যবহারে তা সম্ভব হয়েছে, এসব বের করতে আধুনিক বিজ্ঞানীদের অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে। অথচ একদা তা খুবই সহজ সম্ভব ছিল, কিন্তু তৎপরবর্তী যুগে এই আবিস্কার কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।
এবার আসুন কাঁচের ব্যাপারে, নবী সুলায়মান 'আলাইহিস্ সালাম রাণী বিলকিসকে তার রাজ্যে দাওয়াত করে আনার পর সাদর সম্ভাষণে সদোরে কাঁচ পেতে রেখেছিলেন, রাণী তা বুঝতে না পেরে পানি মনে করে কিছুটা কাপড় গুটিয়ে আসতে চেষ্টা করলেন, পরে দেখলেন যে আসলে তা পানি নয়; বরং কাঁচ। এর অর্থ হলো, কাঁচের মত আধুনিক বস্তু ও এর আধুনিক মানের ব্যবহারও হাজার হাজার বছর পূর্বে বর্তমান ছিল। তবে সর্বাবস্থায়ই ব্যবহার পদ্ধতি যে বর্তমানের চেয়ে অনেক নিন্মমানের ছিল; তা অনস্বীকার্য।
এসব থেকে এ ধারণা করা যায় যে, আরো অনেক এমনতর ব্যাপার হয়ত ছিল পূর্ববর্তী সময়গুলোতে যা বিভিন্ন যুগের অবাধ্য জাতির প্রতি আল্লাহ্ তা'আলার প্রেরিত আযাবের ফলে এবং তাঁর সাধারণ প্রাকৃতিক বিধানের আওতায় পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পরবর্তী যুগের মানুষেরা সেসব ব্যাপারাদিকে আবার নতুন করেই শুরু করতে হয়েছে এবং তাতে নতুনত্বের সমাবেশ ঘটিয়েছে।
(মন্তব্য কিন্তু হিসেব করে--; এখনো শেষ হয়নি)
পরের পর্ব পড়ুন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।