আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাই হিরো



সুখের সংজ্ঞা খুব সম্ভবত অপ্রবাসী এবং অঋণগ্রস্ত থাকতে পারা। অথচ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই দেখছি 'আই লাভ নিউইয়র্ক' লেখা টি-শার্ট পরে তরুণেরা ঢাকায় ঘুরাঘুরি করে প্রবাসী হবার স্বপ্ন মনে নিয়ে। টোফেল, জিআরই-র বই হাতে নিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে এসপ্রেসো কফিতে চুমুক দিয়ে মার্কিন মুল্লুকে এডমিশনের নানান ইতিউতির গল্পই তখন মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। কথা বার্তায় ইংরেজীর বাড়তি মিশেলে অবিরাম লর্ড ক্লাইভের মত ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলতে শুরু করে তাহারা। তারপর একসময় তাদের স্বপ্ন সফল হয়।

তারা মার্কিন মুল্লুকে পাড়ি জমায়। কিছুদিন আগেও এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশের রাজস্বের একটা বড় অংশ আসছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ থেকে। বলাই বাহুল্য এই রেমিটেন্স জমা হচ্ছে অনগ্রসর অপেক্ষাকৃত কম লেখাপড়া জানা বাংলাদেশীদের শ্রম ও ঘামে অর্জিত বিদেশী মুদ্রা থেকে। আজ এই প্রসঙ্গের অবতাড়না করা এই জন্য যে শিক্ষিত ইংরেজী জানা হোয়াইট কলার জব করা এলিট প্রবাসীরা বাংলাদেশ নিয়ে আদৌ চিন্তিত বলে মনে হয় না। অবশ্য যারা ব্যতিক্রমী মানুষ তারা নিজেদের এই জেনেরিক কমেন্টের বাইরে ধরে নেবেন বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের কিছু প্রবাসী শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম দৈব চয়নে। ভারত ও পাকিস্তানের তরুণ-তরুণীরা আশ্চর্যজনকভাবে একই ধরণের কথা বলেছে। পশ্চিমা শিক্ষা নিয়ে ফিরে গিয়ে দেশে ঐ শিক্ষা তারা কাজে লাগাতে চায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণ-তরুণীই বলেছে তারা বিদেশেই সেটল করবে। অল্পশিক্ষিত প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশে সেটল করলেও তাদের মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে।

জমানো অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে কিছু একটা করা যায় কিনা, এই ভাবনা তাদের তাড়িত করে সারাক্ষণ। এর অর্থ বোধহয় এই দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশের মাটি, জল, হাওয়া- যতটাই দেশপ্রেম জাগাতে পারে, আমাদের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা ততটাই স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে। এলিট প্রবাসীদের ঢাকার ধোঁয়া, ধুলো নিয়ে অহরহ কমপ্লেইন করতে শোনা যায়। আর মজুর প্রবাসীর চোখের কোণায় জল চিকচিক করে অকস্মাৎ হবিগঞ্জ, নরসিংদী কিংবা বাউফলের দুরন্ত কৈশোরের স্মৃতি, বাপ মায়ের স্নেহের স্পর্শ কিংবা ডানকিনে মাছের ভর্তার কথা মনে পড়লে। 'দেশপ্রেম' বিষয়টা আসলে বোধহয় কোন স্কুলে শেখা যায় না।

'দেশপ্রেম' নিজেই একটা আলাদা স্কুল। জীবনানন্দ দাস যে বোধের কথা বলেছেন তা কেবল জীবনানন্দ পড়ে উহু আহা করলেই ভেতরে জন্ম নেয় না- একজন বাংলাদেশী ওয়েটার যখন সংগোপনে একটা ছোট পতাকা ঝুলিয়ে দেয় রেস্টুরেন্টের এক কোণায়, অথবা লালনের একটা গান বাজিয়ে বাংলাদেশী আত্মপরিচয় মেলে ধরে তারজন্য তাকে 'ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল অফ থট' সম্পর্কে জানতে হয় না। এসব ছোট ছোট দেশপ্রেমের উদ্ভাস আমার চোখে দেখা। যে কারণে 'মাই হিরো' কিংবা আমাদের নায়কেরা আমি বিশ্বাস করি এলিট এপার্টমেন্টে বসবাস করে না। তারা মাইনাস টেম্পারেচারে কাজ করে, বেসমেন্টের অল্প আলোয় একটু ডাল-ভাত রেঁধে খায়, ভাঙা সিডি প্লেয়ারে আব্দুল আলীমের গান শোনে।

দুবাই বিমান বন্দরের লাউঞ্জে 'মাই হিরোদের' মোবাইল রিঙারে অবিরাম বাজতে থাকে 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি'। আগামীকাল ২৫শে এপ্রিল হাজারদুয়ারীর তৃতীয় সংখ্যা আপ হচ্ছে। ব্লগের সকল ব্লগারদের আমন্ত্রন থাকলো হাজারদুয়ারী পরিব্রাজনের। সাথে থাকলো একটা প্রত্যাশা- আপনার দেখা প্রবাসী সফল মানুষদের গল্প লিখে পাঠান হাজারদুয়ারীর ঠিকানায়। হাজারদুয়ারীর আসছে সংখ্যা আমরা ভরে তুলবো মাই হিরোদের গল্পে গল্পে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।