হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই
দক্ষিন মেসোপটমিয়ায় সুমেরুয়রা যখন তাদের অস্তিত্ব বাচানোর অন্তিম প্রয়াস চালাচ্ছিল, উত্তর পশ্চিম মেসোপটমিয়ায় প্রায় দেড় হাজার খ্রীষ্টপূঃ তখন ভারতীয় আর্য-সম্ভুত “মিতান্নী” রাজবংশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ইউফেট্রেরিস আর টাইগ্রিস নদীর উপরাংশে সিরিয়ার কাছ বরাবর পশ্চিমে মিতান্নী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিল ভারত থেকে আগত আর্যরা। “মিতান্নী” শব্দটা সম্ভবত বৈদিক দেবতা “মিত্র” থেকে উদ্ভূদ।
বংশের প্রথম পুরুষের নাম পরাত্তন (খ্রীষ্টপূঃ ১৫৩০)এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম কীর্তি। এই রাজ্যর অভিজাত কূল “মার্য” নামে খ্যাত ছিল। মার্য একটি ভারতীয় আর্য শব্দ যার অর্থ নবীন যোদ্বা। এই শব্দ থেকেই মর্যদা শব্দটি উৎপত্তি। বিভিন্ন প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন থেকে জানা যায় মিতান্নী যোদ্বারা ইন্দ্র, মিত্র, বরুন প্রভৃতি আর্য দেবতাদের উপাসক ছিল।
দেবতা হিসাবে মিত্র পারস্যে বরাবরই পুজিত। । রোম সৈন্যদের মধ্যেও মিত্র বেশ জনপ্রিয় ছিল। দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত মিত্র উপাসনা ছিল খ্রীষ্টীয় ধর্ম থেকেও ব্যাপক। পূজো আর্চনা ছাড়া ঘোড়া চালাতে মিত্ররা পছন্দ করত।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত উপাত্ত মতে পৃথিবীর প্রথম ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা মিতান্নী রাজ্যই হয়েছিল।
মৃত্তিকা লিপির নির্দিষ্ট প্রমান থেকে অশ্বপালন পদ্বতি, ঘোড়া সওয়ার বাহিনীর প্রশিক্ষন ব্যাবস্থা, বুনো ঘোড়ার পোষ মানানোর পদ্বতি ইত্যাদি সন্মন্ধ্যে এদের জ্ঞান দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়। এ বিষয়ে আধুনিক যে কোন পাঠ্যসূচির সঙ্গে এদের লিখিত অনুষাশন তুলনা করা যায়। ইরাকের কির্কুক শহরের তৈল খনিগুলোর কাছে মিতান্নী রাজ্যের বাইবেলে বর্নিত প্রাচীন “হুরী” নগরীর নুজী আবিস্কৃত হবার সঙ্গে সঙ্গে মেসোপটমিয়ার প্রাচীন ইতিহাসের অনেক ধ্যান ধারনা পালটে গেল। এখানে পাওয়া পোড়া মাটির ফলকে জানা গেল যে এখানকার রাজন্য বর্গ “সেমিটিক” জাতি ভূক্ত ছিল না।
এরা পাহাড় ঘেরা বন (Von) হ্রদের কাছাকাছি কোন স্থান থেকে এসেছিলেন। আকৃতিরদিক থেকে এরা লম্বা চওড়া, কিন্তু ছোট করোটি বিশিষ্ট আর্মেনিয়ানদের মত। মিতান্নী রাজ্যর রাজধানীর নাম ছিল বাসুকান্নী (Washukanni)। এর অবস্থান এখন ও নিশ্চীত ভাবে জানা যায়নি তবে যেটুকু জানা যায় এটি আধুনিক সিরিয়ার টেল-আল-ফাকারিয়াতে অবস্থিত।
মিতান্নী রাজারা এক সময় আসুরিয়দের রম্য শহর নিনেভ ও রাজধানী আসুর নগরীও দখল করে রেখেছিল।
এদের প্রতিবেশী ছিল প্রবল পরাক্রান্ত মিশর, অন্যদিকে সিরিয়া লেবাননে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা বাইবেলে বর্নিত হিতাইত (Hittite) জাতি। প্রথম প্রথম মিশরের ক্ষমতায় অন্ধ ফারাওরা অন্য কোন দেশি মানুষদের অবজ্ঞার চোখে দেখতেন। এদের ক্ষমতার দম্ভ এত ছিল যে দেশের সীমান্ত সুরক্ষার ও চিন্তা করত না। পরে মরু দেশের যাযাবর গোষ্ঠি হিকস (Hyksos) দের হঠাৎ আক্রমনে পর্যুদস্ত হয়ে দুশো বছর পরাধীন থাকার পর ফারাও প্রথম আমহোসেপ ১৪৮০ খ্রীষ্টপূঃ শেষমেষ যখন ওদের রাজধানী আভারিস দখল করেন তখন তিনি প্রতিবেশী মিতান্নী রাজ্যর দিকে নজর দেবার সাময় পেলেন।
নিজেদের ইতিহাস পূঙ্খানুপূঙ্ক ভাবে লিখে গেলেও মিতান্নীদের কথা লিখে না জানার কারনে লিপিবদ্ব করে রেখে যেতে পারে নি।
সীমা সুরক্ষিত রাখার তাগিদে ফারাও ও মিতান্নীদের মধ্যে অব্যশাম্ভাবী যুদ্ব শুরু হয়ে গেল। কখনো মিতান্নীদের তিরন্দাজ বাহিনী কখনো ফারাওদের রথী বাহিনী একে অপরকে আক্রমনে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। ১৪৫০ খ্রীষ্টাপূঃ ফারাও তৃতীয় থুতমাস মিতান্নী রাজ বংশের ইউফেট্রিস নদীর কিনারা পর্যন্ত দখল করে নেয়। সন্ধির প্রস্তাব আসে মিতান্নীদের কাছ থেকে। প্রস্তাবটি গৃহিত হল।
কেননা এশিয়া মাইনর থেকে ততদিনে হিতাইতদের আক্রমন শুরু হয়ে গেছে, যাযাবর হিকসদের মত পাছে এরাও স্বাধীনতা বিপন্ন করে।
ফারাও ও মিতান্নীদের সাথে যে বন্ধুত্ব ছিল তা আমরা জানতে পারি মিতান্নী রাজকুমারী তাদুচেপার সঙ্গে মিশরের ফারাও বিবাহের মাধ্যমে। তাদুচেপাই সম্ভবত পরবর্তী সুন্দরী রাজমহিষী নেফ্রেটেট (খ্রীষ্টপূঃ ১৩৭২ – ১৩৫০)। তুতানাখামেনের কাকীমা ফারাও ইখনাতোনের স্ত্রী। যার মমি এখন ব্রিটিশ যাদুঘরে সংরক্ষিত।
এ ছাড়াও মিশরের ফারাও তৃতীয় আমেনহোতেপের সাথে যে মিতান্নী রাজা তুশ্রুতের পত্র বিনিময় ছিল তাও ইতিহাস প্রমানিত।
কিন্তু এত করেও মিতান্নী রাজ্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেলনা। ১৩৭০ খ্রীষ্টপূঃ হিতাইত রাজা শূপ্পিলুলিয়াম মিতান্নী রাজ্য আক্রমন করে কর দিতে বাধ্য করেন। এর ঠিক পয়ত্রিশ বছর পর ১৩৩৫ খ্রীষ্টপূঃ হিতাইত ও অসিরীয়দের আক্রমনে মিতান্নীর আর্যরা স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। এরপর মিতান্নী জনবাসী এশিয়া মাইনরের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।
সূত্রঃ
http://www.sacred-texts.com/cla/mom/mom04.htm
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Hyksos
তপন চট্টোপাধ্যায়ের একটি নিবন্ধ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।