আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘর জামাই হতে চাই

শী কান্ট রিমেম্বার এ টাইম, হোয়েন শী ফেল্ট নীডেড। ইফ লাভ ওয়াজ রেড, দেন শী ওয়াজ কালার ব্লাইন্ড। তোমার জীবনের লক্ষ্য কী? পিচ্চিকালে মুরব্বিরা জিজ্ঞাসা করলে বস্ত্রহীন বেলার বন্ধুদের কেউ বলত ডাক্তার হব, কেউ বলত ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু আমি বলতাম, বড় হয়ে বিয়ে করব! আমার চরম বিয়েপ্রীতির সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ভাইয়া, আপুরা অনেক কাজ করিয়ে নিত। ‘আম্মুর কাছে তোর বিয়ের সুপারিশ করব।

বড় হওয়ার আগেই বিয়ে করতে পারবি’ ডায়লগে বিশ্বাস করে উনাদের হাত, পা, কপাল টিপে দিতাম। আফসোস! ক্লাস ফোর পর্যন্ত মা জননী কারও সুপারিশেই রাজি হননি! অবশেষে একদিন আম্মুর মনে দয়া হলো! স্কুল থেকে বাসায় ফিরতেই বললেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। - বেড়াতে নিয়ে যাবা? - পাত্রী দেখতে যাব। এতটাই খুশি হয়ে গেলাম যে জিজ্ঞাসা করলাম না কার জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছে। গপাস গপাস করে কয়েক মিনিটে খেয়ে ফেললাম।

পাত্রী দেখতে যাব, একটু সেজেগুজে না গেলে কি হয়! তাই আপুর কসমেটিক্সের বক্সে খোঁজ দ্য সার্চ করে একটু-আধটু মেখে পাত্রী দেখতে গেলাম! খাওয়া-দাওয়া পর্বে সবার প্লেটে পায়েস তুলে দিতে দিতে হবু শাশুড়ি বললেন, আমার মেয়ে নিজ হাতে রান্না করেছে। পায়েস এতটাই স্বাদ হয়েছে যে... বললাম, বিয়ের পর আমাকে প্রতিদিন রান্না করে খাওয়াবে তাই না? পাত্রীর বাবা বললেন, তোমাকে না খাওয়ালে কাকে খাওয়াবে? না খাওয়ালে আমাকে বিচার দিও। খাওয়া-দাওয়া শেষে রূপেগুণে গুণবতী পাত্রীকে আম্মু আংটি পরিয়ে দিয়ে প্রাথমিক কাজটা সেরে ফেললেন। বাসায় ফেরার সময় রাস্তায় আম্মু, চাচীর কথায় বুঝতে পারলাম, এমন পাত্রী কিছুতেই হাতছাড়া করতে চান না। তাই যত তাড়াতাড়ি বিয়ের সব কথাবার্তা ফাইনাল করে ফেলতে হবে! আমি তো মহাখুশি! বিয়ের পর পায়েস রান্না করে খাওয়াবে বউ! আহেম আহেম! বিয়ের দাওয়াতের তালিকায় ক্লাসের যারা ঝগড়া করে তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের একটা লিস্টও করে ফেললাম মনে মনে! বাসায় আসতেই আপু বললেন, কিরে বিয়ে পাগলা, ভাবী পছন্দ হয়েছে? - তুমি না একটা বোকা।

নিজের বউকে কেউ ভাবী ডাকে? - কী ডাকে রে পাকনা? - বউ, ওগো, মনি, পরাণ পাখি, কলিজা এসব ডাকে। তুমি সিনেমাতে দেখ না। শুনে আপু হাসতে হাসতে সোফা থেকে ফ্লোরে নেমে গড়াগড়ি! আপু পাগল হয়ে গেছে ভেবে সবাই ছুটে এলো। আম্মু কইষ্যা ধমক দিলেন। কিন্তু, কিসে কি! হাসি থামেই না! শেষে দড়ি দিয়ে বাঁধার হুমকি দিতেই আপু হাসি থামিয়ে কারণ বলতেই সবাই তুমুল হাসিতে ফেটে পড়ল।

পরের ইতিহাস বড়ই করুণ! আসলে আমার জন্য না, ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখা হয়েছে এবং সে পাত্রী এখন আমার ভাবী। সেদিনের লজ্জায় বিয়ের ভূত মাথা থেকে চলে গেল। স্কুল, কলেজ শেষে চাকরি করতে ঢাকায় এসে পড়লাম বিপদে। অনুভব করলাম, ইস! আমার যদি একটা বউ থাকত! কেউই ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া দিতে চায় না! অথচ এই বাড়িওয়ালারাই মেয়ে বিয়ে দেয়ার আগে একশ’বার খবর নেয়, ছেলে আগে কোথাও বিয়ে করেনি তো! ব্যাচেলর ছেলেদের বাসাভাড়া দেয় না; কিন্তু মেয়ে বিয়ে দেয়! সেলুকাস! সেলুকাস!! ‘নো ব্যাচেলর’ শুনে শুনে হতাশ হয়ে সরল মনে এক বাড়িওয়ালাকে প্রস্তাব দিলাম, আংকেল আপনার মেয়ে থাকলে আমার কাছে বিয়ে দিন। আপনার মেয়েরও বিয়ে হলো, আমারও বাসাভাড়া পাওয়ার একটা গতি হবে।

প্রস্তাব শুনে বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, ঘরজামাই হতে রাজি আছ? আমার মেয়ের সবই ভালো। তবে মেজাজ একটু গরম। তাই ঘরজামাই রাখব। বিশ্বের ১০ জন পুরুষের মধ্যে ৮ জন পুরুষই কোনো না কোনোভাবে স্ত্রীর কাছ থেকে মানসিক বা দৈহিক দুর্ব্যবহারের শিকার হয়! মেজাজ গরম মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই থাকলে কী দশা হবে ভাবতেই কোনো দিকে না তাকিয়ে খিচ্চা দৌড়। শেষে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পেলাম সোনার হরিণ ‘ব্যাচেলর বাসা’! কিন্তু বাড়িওয়ালা মানুষ না সাক্ষাত্ কলকাতার দাদা! মাস শেষে নিজের ফ্ল্যাটের কারেন্ট বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল উঠিয়ে দেয় ভাড়াটিয়াদের ঘাড়ে।

মাছ, মাংস ছেড়ে দিয়ে নিরামিষে অভ্যস্ত হয়ে গেছি! কিন্তু এতেও কি শান্তি আছে? আলুর কেজি ৯০ টাকা! পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে না, দাম শুনলেই চোখে পানি আসে। মাস শেষে বেতন পেয়ে সব দিয়ে ১০ টাকার নোটও মানিব্যাগে খুঁজে পায় না অবস্থার মধ্যেই বাড়িওয়ালা নতুন আইন করল, ৪তলা বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি ঝাড়ু দেয়ার টাকা ভাড়াটিয়াদের দিতে হবে! প্রতিবাদ করায় এক সপ্তাহের মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ। বাসা ছাড়তেই হবে। আবার ব্যাচেলর হওয়ার অপরাধে বাসা পেতে ঝামেলা! এদিকে বিয়ের বয়সও হয়েছে। বেতনের সব টাকা থাকা-খাওয়ায় শেষ! বিয়ের জন্য টাকা জমানো এ জীবনেও হবে না।

পথ একটাই, ঘরজামাই হওয়া। বিয়েও করা হবে, মাস শেষে বাড়িভাড়া, খাওয়ার টাকাও বাঁচবে! বিনিময়ে না হয় বউয়ের কিল, ঘুষি হজম করলাম। কোনো ব্যাপার না! মারলে নিজের বউই তো মারবে! অন্যের বউ তো মারছে না! যে বাড়িওয়ালা ঘরজামাই করতে চেয়েছেন, অফিস শেষে উনার বাড়ির সামনে যেতেই দারোয়ান আটকে দিল। - কী দরকার? - ঘরজামাই হতে এসেছি। - দেরি কইরা ফালাইছেন ভাইজান।

আরেকজন ঘরজামাই হইয়া গেছে। - উনার আর মেয়ে নাই? - আছে, তয় ছোট। বড়টার চাইতেও বেশি রাগী। রাজি থাকলে ৫ বছর পরে আইসেন। এখন ফুটেন।

৫ মাস হলে একটা কথা ছিল! কিন্তু, ৫ বছর! কয়েকদিন পরই বাসা ছাড়তে হবে! ঘরজামাই হওয়ার সুযোগ যেটা ছিল, সেটা আমার মতো আরেক অভাগা দখল করে নিয়েছে! পাঠককুলের, কারও কাছে ঘরজামাই রাখবে এমন শ্বশুরের খোঁজ থাকলে জায়গায় বসে আওয়াজ দিতে ভুলবেন না। কসম, বিনিময়ে বিনা উপহারে বিয়ের দাওয়াত খেতে পারবেন সপরিবারে! জানেনই তো বিয়ে যে কত্ত মজা! খালি খাওন আর খাওন!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।