আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথ হারালাম (তাজিংডং- 3)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....

সকালে ঘুম থেকে উঠে গাইড সাং লিয়েনের নেতৃত্বে সব জিনিসপত্র পিঠে বেধে আমরা 10 জন রওনা দিলাম। বগা লেকে শুধু হেটে যাওয়া যায়। অন্য কোনো উপায়ে যাওয়া যায় না। আমার ব্যাগের ভেতর রাখতে হলো এক কেস ডিম (সম্ভবত 50 টি)। ডিসেম্বর মাস।

খুব ঠাণ্ডা আবহাওয়া। গরম পোশাকে উচু নিচু পাহাড়ি পথ ধরে কিছুক্ষণ হাটার পরই পরিশ্রমে ঘেমে গেলাম। ফলে অধিকাংশ গরম পোশাক খুলে ব্যাগে ঢুকাতে হলো। কিছুক্ষণ হাটার পর সামনে পড়লো খুব সুন্দর একটি পাহাড়ি ঝর্ণা। আমাদের ঝর্ণা পার হয়ে যেতে হবে।

জুতো মোজা খুলে ঝর্ণা পার হলাম। এরপর কিছুদূর আবার এবড়ো থেবড়ো, বড় বড় পাথর আর উচু নিচু পাহাড় পেরিয়ে আবার পাহাড়ি ঝর্ণা। আবার জুতা মোজা খুলে ঝর্ণা পার হলাম। কিছুদুর হাটার পর দেখি আবার সেই ঝর্ণা পার হতে হবে। এবার বুদ্ধি করে জুতো পড়লাম না।

জুতো ব্যাগের নিচে ঝুলিয়ে খালি পায়ে হাটার চেষ্টা করলাম। পাহাড়ি পথ, টুকরো পাথরের খোচায় পায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আবার জুতো পড়তে বাধ্য হলাম। বগ া লেক যাবার পথে আমাদের প্রায় 20 বার ঝর্ণা পার হতে হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছিলাম আমরা।

এ সময় আমার ব্যাগ খুলে দেখি ঝাকিতে কয়েকটা ডিম ভেঙ্গে গেছে। ডিমের কেসটি ভালো না। ভাঙ্গা ডিমের কুসুমে আমার ব্যাগের কাপড় চোপড়ের 12টা বেজে গেছে। হাটার পথে আমরা একটা বড় পাহাড়ি গ্রাম খুজে পেলাম। অধিবাসিরা সবাই বৌদ্ধ বলে জানতে পারলাম।

প্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বেশ বড় একটা পাহাড়ি ঝর্ণা। আমরা শুকনো ডালপালা সংগ্রহ করে ব্যাগের ডিমগুলো সিদ্ধ করে ফেললাম। এ সময় সবাইকে 5-6টা করে ডিম খেয়ে ফেলতে হলো। পাশের ঝর্ণায় ধুয়ে ফেললাম ডিমের কুসুমে নষ্ট হওয়া কাপড়গুলো। ভেজা কাপড়ে ব্যাগের ওজন দ্্বিগুণ বেড়ে গেল (ডিমগুলো খেয়ে ফেলায় কিছু ওজন কমেছিল কিন্তু বন্ধুদের কিছু জিনিস আমার পিঠে নিতে হলো)।

দুপুর দুইটার দিকে আমরা আরেকটা পাহাড়ি গ্রামে এসে পৌছলাম। জানতে পারলাম সামনের রাস্তাটা খাড়া পাহাড়ের উপর উঠে গেছে। রাস্তাটির শেষ মাথাতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লেক- বগা লেক। বগা লেকের পাশে আছে পাহাড়ি গ্রাম- বগা লেক পাড়া। সেখানে একটা আর্মি ক্যাম্পও আছে।

আমরা দ্্বিগুণ উৎসাহে হাটতে শুরু করলাম। এদিকে পথ খুবই বন্ধুর। চারপাশে পাহাড় আর জঙ্গল। পায়ে হাটা পথটিও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় দুই ঘন্টা টানা হাটার পরও কোনো মানুষের দেখা পাওয়া গেল না।

কিছুক্ষণ পর পর অবশ্য পাহাড়ি ঝর্ণা ছিল। একটা ঝর্ণাতে নাম না জানা খুব সুন্দর একটা সাপ দেখলাম। ক্যামেরা নিয়ে কাছ থেকে সেটার ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম। শীতকালে সাপের শক্তি থাকে না। এ সময় কামড়ায় না বললেই চলে।

আমরা তার কোনো ক্ষতি করলাম না, সেও আমাদের কোনো ক্ষতি করলো না। এভাবে হাটতে হাটতে বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে চললো। কিন্তু বগা লেক পাড়ার দেখা পেলাম না। সন্দেহ হল, আমরা কি পথ হারিয়েছি! গাইড সাং লিয়েনকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করলাম। সে জানালো যে, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। জঙ্গল আর পাহাড়ের মাঝে আমরা 10 জন। আশপাশে কোনো মানুষ কিংবা বাড়িঘর নাই। তবে বন্য জীব জন্তু নিশ্চয়ই আছে। চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম।

(ছবি: বগা লেক যাবার পথে পাহাড়ি ঝর্ণাতে ঝিনুক কুড়াতে ব্যস্ত কয়েকজন পাহাড়ি)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।