আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঁ বদ্রিলারের সাক্ষাৎকার (হাসিবের জন্য)

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

সবচেয়ে আলোচিত ফ্রেঞ্চ দার্শনিক হিসেবে আপনি কি সেখানকার নাগরিক অসন্তোষ পরিস্থিতি বিষয়ে ভেতরকার কোনো তথ্য দিতে পারেন? কোন বিষয়টি তরুণদের একটি প্রজন্মকে বাকী দেশের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দিয়েছে? এটা আরও খারাপ খারাপ ও খারাপের দিকে যাবে। অনেক দিন ধরে তুলনামূলকভাবে সৌহার্দ্যমূলক সহাবস্থান বা সহঅসত্দিত্ব ছিল। কিন্তু ফেঞ্চরা মুসলিমদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশ হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয়ের জৈবিক চেতনাতেই বিচ্ছেদ ঘটে গেছে।

সম্ভবত এটা অভাবনীয়। গত বছর যখন ফ্রেঞ্চ সরকার সরকারি স্কুলে মাথার আচ্ছাদন বা হিজাব ও সব ধরনের ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করলো তখন ভীষণ অবাক হয়েছিলাম আমরা। হ্যা। আমেরিকায় ইমিগ্রেশনের ইতিহাস আরও লম্বা। আমেরিকা জাতিগত সম্প্রদায়গুলোর দ্বারা নির্মিত।

তারা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেও আমেরিকা এখনও আমেরিকাই। ইউনাইটেড স্টেটস-এ কোনো আমেরিকান বাস না করলেও আমেরিকা আমেরিকাই থাকবে। ফ্রান্স শুধু একটি দেশ, কিন্তু আমেরিকা একটি ধারণা। আপনি কি বলতে চান আমেরিকা গণতন্ত্রের আদর্শ রূপকে উপস্থাপন করে? না। ক্ষমতার ছদ্মবেশের (সিমুলেশন) আদর্শ।

এই 76 বছর বয়সেও আপনি কি আপনার বিখ্যাত থিওরি সিমুলেশন ও সিমুলাক্রামের কথা বলে চলেছেন? যে থিওরি অনুসারে মিডিয়া ইমেজগুলোকে বাস্তবের চেয়ে বাস্তব ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। আমাদের সব মূল্যবোধই ছদ্মবেশ আচ্ছাদিত। স্বাধীনতা কি? আমাদের স্বাধীনতা আছে হয় একটি গাড়ি নয়তো অন্য আরেকটি গাড়ি কেনার। এটা হলো স্বাধীনতার ভান। অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রসার ঘটাবার জন্য আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করেছে এটা আপনি বিশ্বাস করেন না? আমরা যা চাই তা হলো আমরা যে ভাড়ামো ও পরিহাসের মধ্যে আছি তাতে সবাইকে টেনে আনতে।

একই ভানের মধ্যে সভ্যতার বাকী অংশকে যুক্ত করতে। এর মাধ্যমে পুরো পৃথিবীটাই কৃত্রিম হয়ে পড়ে। আমরা সবাই ক্ষমতাধর হয়ে যাই। এটা একটা খেলা। আপনি যখন বলেন 'আমরা', তখন কার কথা বোঝাতে চান? আপনার নতুন বই দি কন্সপিরেসি অফ আর্টে আপনি আমেরিকার ওপর যথেষ্ট খড়গহস্ত ছিলেন।

ফ্রান্স হলো আমেরিকান সংস্কৃতির বাইপ্রোডাক্ট। আমরা গেস্নাবালাইজড। আমরা সবাই এর মধ্যে আছি। যখন ইরাক যুদ্ধ প্রসঙ্গে জ্যাক শিরাক জর্জ বুশকে না করেন তখন সেটা একটা মায়া। ফ্রেঞ্চরা আলাদা এটা বোঝাতেই এটা করা হয়।

কিন্তু ফ্রেঞ্চদের মধ্যে আলাদা কিছু নেই। সত্য হলো। ফ্রান্স ইরাকে সৈন্য পাঠায়নি। অগণিত বাস্তব সৈন্য। যারা তাদের পরিবার ও রাষ্ট্রের কাছে বাস্তব।

তা তো বটেই। আমরা এই যুদ্ধের 'বিরুদ্ধে' কারণ এটা আমাদের যুদ্ধ নয়। কিন্তু আলজেরিয়ার ক্ষেত্রে একই ঘটনা ছিল। আমরা যখন আলজেনিয়ান যুদ্ধ লড়েছি তখন আমেরিকা সৈন্য পাঠায়নি। ফ্রান্স ও আমেরিকা একই পক্ষ।

পক্ষ তো একটাই। লোকে ফ্রেঞ্চ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কানত্দ হয়ে পড়েছে, একথা কি খুব সরলীকরণ হয়ে যায় না? ফ্রেঞ্চ বুদ্ধিজীবীতা বলে আর কিছু নেই। আপনি যাদের ফ্রেঞ্চ বুদ্ধিজীবী বলছেন তারা মিডিয়ার দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। তারা টেলিভিশনে কথা বলে, প্রেসে কথা বলে। কিন্তু তারা আর নিজেদের মধ্যে কথা বলে না।

আপনার কি মনে হয় আমেরিকায় বুদ্ধিজীবী আছে? আমারদের কাছে সুসান সনটাগ ও নোয়াম চমস্কি ছিলেন। কিন্তু ফ্রেঞ্চশভিনিজমের আমরা শুধু নিজেদেরকেই গণ্য করি। বাইরে থেকে কি আসছে তার দিকে আমরা মনোযোগ দেই না। যা নিজেরা আবিষ্কার করি তাকেই শুধু গ্রহণ করি। আপনি কি সুসান সনটাগের বন্ধু ছিলেন? মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হতো।

কিন্তু শেষবারেরটা ছিল ভয়াবহ। আমি বাসত্দবের অস্তিত্ব আছে এটা মানি বলে তিনি টরান্টোতে একটা কনফারেন্সে আমাকে ধুয়ে দিলেন । আমেরিকান লেখকদের কোনো লেখা আপনি পড়েছেন? আমি বহু আমেরিকান লেখকের লেখা পড়েছি। জন আপডাইক, ফিলিপ রথ, ট্রুম্যান কাপোটে। ফ্রেঞ্চ ফিকশনের চেয়ে আমেরিকান ফিকশন আমার বেশি ভাল লাগে।

সম্ভবত ফ্রেঞ্চ সাহিত্য ফ্রেঞ্চ দর্শনের খপ্পড়ে পড়েছে। দুঃখজনকভাবে ফ্রেঞ্চ সাহিত্য নিজে থেকেই ক্ষয়ে গেছে। ফ্রেঞ্চ তত্ত্বের মরার একে অপেক্ষা করতে হয়নি। এটা নিজে থেকে মরে গেছে। আমাদের এখানে কেউ কেউ মনে করেন কলা বিষয়ক অনেক পাঠক্রম ডিকন্সট্রাকশন ও অন্যান্য ফ্রেঞ্চ থিওরির প্রভাবে গোলস্নায় গেছে।

এটা হলো ফ্রেঞ্চদের একটা উপহার। তারা আমেরিকানদের এমন একটা ভাষা দিয়েছে যার দরকার ছিল না তাদের। এটা হলো স্ট্যাচু অফ লিবার্টির মতো। কারও জন্যই ফ্রেঞ্চ তত্ত্বের দরকার নাই। অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ সাক্ষাৎকারটি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।